E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

পুলিশ পুত্র লেডি কিলার অর্ণব আবারো গ্রেফতার

২০২৪ জুন ২৭ ১৯:৫০:৩৮
পুলিশ পুত্র লেডি কিলার অর্ণব আবারো গ্রেফতার

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : পুলিশ কর্মকর্তার পুত্র আলোচিত লেডি কিলার  রাহমাতুর রাফসান অর্ণবকে আবারো গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দিনাজপুর কোতয়ালী থানা পুলিশ অর্ণবকে গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠিয়েছে।

দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফরিদ হোসেন সত্যতা নিশ্চিত করে জানান,একটি প্রেন্ডিং মামলায় ওই যুবকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।

রাহমাতুর রাফসান অর্ণব সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার কর্ণমুর্তি গ্রামের পুলিশ কর্মকর্তা মো.জাহিদুল ইসলামের ছেলে। জাহিলুল দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় কর্মকর্তা থাকাকালীন তৎকালীন এক বিএনপি নেতার বোনকে বিয়ে করেন। ছেলে রাহমাতুর রাফসান অর্ণব এর আগে দিনাজপুর শহরের গণেশতলাস্থ মার্টিন চাইনিজ রেস্তরাঁর উপরে ' লেগেসি রেস্টুরেন্ট' নামে প্রতিষ্ঠান দিয়ে শহরে পাহাড়পুর ষষ্টিতলা এলাকায় ভাড়া থাকাকালীন এক ছাত্রীকে ধর্ষযণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়। সে সময় তাতে দু'দিনের রিমান্ড নেয় পুলিশ।

রাহমাতুর রাফসান অর্ণবের বিরুদ্ধে একাধিক তরুণী ও নারীরক্ব প্রেমের ফাঁদে ফেলে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ভুক্তভোগী তরুণী ও নারীকে ব্ল্যাকমেইল করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

উঠতি বয়সী অনেক তরুণী ও নব্য বিবাহিত প্রবাসী স্বামীর স্বীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব হারাতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দিনাজপুর ও রাজধানী ঢাকায় একাধিক মামলা করেছেন। এ ছাড়া মাদক ব্যবসা, চাকুরি দেওয়া ও বিদেশ লোক পাঠানোর নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিওয়ারো অভিযোগ রয়েছে। দিনাজপুর শহরে তার মালিকানাধীন লিগেসি নামের একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টের আড়ালে তরুণীদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় ও ধর্ষণ মামলায় জেল খেটেছেন তিনি।

রাজধানীর ধানমণ্ডির এক শিল্পপতির মেয়ে দিনাজপুরে গিয়ে অর্ণবের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে একটি মামলা করেন। তার অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে দিনাজপুর কোতয়ালী পুলিশ। তরুণীর অভিযোগে বলা হয়, পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন অর্ণব। বিয়ের কথা বলে অর্ণব তার কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকা, ৫০ ভরি সোনা ও দুটি প্রাইভেট কার হাতিয়ে নেন। অর্ণব তার কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় এক কোটি ২৭ লাখ টাকার জিনিসপত্র নিয়েছেন।

এই মামলার বিষয়ে জানতে চাইছে দিনাজপুর কোতয়ালী থানার সাব ইন্সপেক্টর মো. নূর আলম বলেন, ওই মামলায় তরুণীর করা অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত তরুণের বিরুদ্ধে এমন আরো অভিযোগ রয়েছে এই থানায়।

একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশের ডিআইজির ছেলের ভুয়া পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটিয়ে পুলিশের ভ্যান ব্যবহার করে ও ঢাকা মহানগর পুলিশের স্টিকার লাগিয়ে, হুডার ব্যবহার করে অর্ণব কক্সবাজার থেকে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে সারা দেশে ছড়িয়ে দেন। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন শিল্পপতি ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে সেসব ভিডিও ধারণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

সুত্রগুলোর মতে, রাহমাতুর রাফসান অর্ণব। ভয়ংকর এক চরিত্রের নাম। বয়স ২৫ এর কাছাকাছি। যার পিতা পুলিশ ইন্সপেক্টর। নাম জাহিদুল ইসলাম।

বর্তমান কর্মস্থল পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটে। অথচ নিজেকে ডিআইজির ছেলে পরিচয় দিয়ে ভয়ংকর প্রতারণায় নেমেছেন পুলিশ কর্মকর্তার গুণধর পুত্র অর্ণব। যার প্রেমের ফাঁদে পড়ে অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়েও সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে এ তালিকায় উঠে আসা ভুক্তভোগীর সংখ্যা প্রায় অর্ধশত। দামি ব্র্যান্ডের গাড়িতে ডিএমপির লোগো ব্যবহার করে চলাচল করেন হিরো বনে যাওয়া এই ভিলেন। যার টার্গেটের শিকার ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েরা। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন ছাড়াও উদ্দেশ্য নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া।

এদিকে ভুক্তভোগী তরুণীদের কয়েকজন অর্ণবের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেছেন দিনাজপুরে। মাথার ওপর ঝুলছে গ্রেফতারি পরোয়ানাও। কিন্তু কিসের মামলা আর গ্রেফতারি পরোয়ানা। পুলিশের ছেলে বলে কথা। কোনো কিছু কেয়ার করেন না তিনি। তাই প্রকাশ্যে ঘুরছেন বুক ফুলিয়ে।
অনুসন্ধানে এনিয়ে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ সব চাঞ্চল্যকর তথ্য।

বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কথা বলেছেন। যারা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত। কেন এরকম বেপরোয়া চরিত্রের যুবকের ফাঁদে তারা পা দিয়েছেন জানতে চাইলে প্রত্যেকে জানিয়েছেন, অর্ণব যে কোনো মানুষকে পাঁচ মিনিটেই বশে আনতে পারে। মেয়েদের কনভিন্স করার বিশেষ সক্ষমতা রপ্ত করেছে সে। এছাড়া প্রতিটি মেয়ে একজন স্বাবলম্বী ও সম্পদশালী স্মার্ট হ্যান্ডসাম ছেলের স্বপ্ন লালন করেন। অর্ণব যার সব কিছুই টার্গেটকৃত মেয়েদের কাছে যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারে। এগুলো শো করেই সে বহু তরুণীকে দ্রুত কব্জায় নিতে পেরেছে। কিন্তু যখন তার আসল চেহারা সামনে বেরিয়ে এসেছে ততক্ষণে তারা সব হারিয়ে ফেলেছেন। তারা বলেন, স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্ক করতে না চাইলে সে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। আবার কাউকে নেশা জাতীয় জুস, শরবত কিংবা কফি খাইয়ে ধর্ষণ করে। কিন্তু সে শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয় না, সব কিছু ভিডিও করে রাখে। পরে এই ভিডিও দেখিয়ে ফের ধর্ষণ এবং বিপুল অঙ্কের টাকা দাবি করে বসে। কোনো মেয়ে যখন তার নগ্ন শরীরের ভিডিও ও স্টিল ছবি দেখে তখন তার মাথা আর কাজ করে না। পাগলপ্রায় হয়ে যায়। এজন্য ভুক্তভোগী মেয়েদের অনেকে মানসিক ট্রমায় ভুগছে।

দিনাজপুর পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ এ এবিষয়ে বলেন, 'অর্ণবের বিষয়ে বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। ভিকটিম যারা আইনি সহযোগিতার জন্য এসেছিলেন তাদের প্রতি শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রাখা হয়েছে।
একজন পুলিশ সদস্যের ছেলে হলেও তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হয়নি।'

(এসএএস/এএস/জুন ২৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

৩০ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test