E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বন্যায় মৌলভীবাজারে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী, বিপৎসীমার উপরে ৪ নদীর পানি 

২০২৪ জুন ২০ ১৮:৫৩:০৮
বন্যায় মৌলভীবাজারে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী, বিপৎসীমার উপরে ৪ নদীর পানি 

মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি। জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার ৬ টি উপজেলার ৪৭ টি ইউনিয়নের ৪৭৪টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২ লাখ ৮১ হাজার ৯শ ২০ জন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বন্যার পানিতে ইতিমধ্যে তলিয়ে গেছে জেলার অসংখ্য গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ধর্মীয় স্থাপনা।

বন্যার পানি বাড়িঘরে প্রবেশ করায় প্রশাসনের তরফে জেলা জুড়ে স্থাপন করা হয়েছে সর্বমোট ২০৪ টি আশ্রয় কেন্দ্র। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি পরিবার। তবে অনেক এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় পানিবন্দি অনেক পরিবারের ঠাঁই হয়েছে সড়কের পাশের খালি দোকান ঘর কিংবা দূরের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। বিশেষ করে গবাদিপশু নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ আক্রান্ত পরিবার গুলোর মাঝে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সরেজমিন সদর উপজেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের পশ্চিম শ্যামেরকোনা এলাকা ও আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে বাড়ি ঘরে ঢুকে পরেছে পানি। দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজার-শমসেরনগর সড়কের একটি বড় অংশ। এতে যানবাহন চলাচল করছে বেশ ঝুঁকি নিয়ে। মানুষ বাড়ি ঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন দূরের স্বজন কিংবা সড়কের পাশের দোকান ঘরে।

পশ্চিম শ্যামেরকোনা গ্রামের বাসিন্দা রিতা দাশ জানান, বন্যার পানিতে বাড়ি তলিয়ে গেছে। তাই আশ্রয় নিয়েছি এই দোকান ঘরে। পরিবার নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় আছি। কবে পানি নামবে তাও জানা নেই। রিতা দাশ যে দোকান ঘরটিতে আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানের পাশের বারান্দায় রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাদের গবাদিপশু গুলোকে।

ওই এলাকার বাড়ি ঘর ছাড়াও মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করেছে বন্যার পানি।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় খলিলপুর,মনিমূখ, আখাইলকুড়া, নাজিরাবাদ, চাঁদনীঘাট সহ মোট ৮ টি ইউনিয়নের ৩০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বন্যায়। পানিবন্দী হয়েছেন ৫০ হাজার মানুষ। ওই উপজেলায় ১৩ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৮ শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের ১২ টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলায় ৪০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ওই উপজেলায় অনবরত বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর অন্তত ৩ টি স্থানের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে গ্রামের পর গ্রামে। ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে প্রায় ১৪ টি পয়েন্ট।

কুলাউড়া উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের ৭৫ টি গ্রামের মোট ৮১ হাজার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাড়ি ঘর প্লাবিত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারণ মানুষ।

বড়লেখা উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নের মোট ২৫২টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ৯৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। জুড়ী উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নের ৬৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বন্যায়। আক্রান্ত হয়েছেন ৪৭ হাজার মানুষ। আর রাজনগর উপজেলায় মোট ৬ টি ইউনিয়নের ৩০ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বন্যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মনু নদীর চাঁদনীঘাট অংশে বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে, ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে , কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, আর জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ২০৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাবেদ ইকবাল জানান, উজান থেকে মনু-ধলাই নদীতে পানি আসা বন্ধ রয়েছে। এতে এ দুটি নদীর পানিও বাড়ছেনা এ মুহূর্তে । তিনি বলেন, ধলাই নদীর ১৪ টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। ৩ টি পয়েন্টে ভাঙ্গন হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

এদিকে আকষ্মিক এই বন্যার কবলে পড়ে জেলা সদরের পশ্চিম শ্যামরকোনা গ্রামে বৃহস্পতিবার সকালে পানির তীব্র স্রোতে পড়ে ভেসে গিয়ে হৃদয় ও সাদি নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এতে ওই দুই শিশুর পরিবারে চলছে আহাজারি। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাসরিন চৌধুরী জানান, বন্যায় শিশু ও বৃদ্ধদের সতর্কতা অবলম্বনে ইতিমধ্যে জেলা তথ্য অফিসের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয়েছে।

(একে/এসপি/জুন ২০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test