E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

উপজেলা ছাত্রলীগ নেতার কল রেকর্ড ভাইরাল, রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ

২০২৪ জুন ১৯ ১৫:৪৮:১৬
উপজেলা ছাত্রলীগ নেতার কল রেকর্ড ভাইরাল, রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ

বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনায় এক উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়াও ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় বেশ কিছু ইউনিয়ন ছাত্রলীগেের নেতাকর্মীরা। ভাইরাল হওয়া কল রেকর্ডটি আগের এবং সুপার এডিট বলে দাবী করেছেন অভিযুক্ত আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ)। কলরেকর্ড ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা।

মঙ্গলবার (১৮ জুন) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একব্যাক্তির পছন্দমত কমিটি দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ) এর মোবাইলে কথা বলার ২৯ সেকেন্ডের একটি কল রেকর্ড ছড়িয়ে পরলে মুহুর্তেই তা ভাইরাল হয়। এতে ওই সাধারণ সম্পাদকের এমন কার্যকলাপ নিয়ে নানা উপজেলার সকল স্তরের মানুষের মধ্যে আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ওই কল রেকর্ডে শোনা যায়, ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যাক্তি সাধারণ সম্পাদকের নাম ধরে বলে নিজের পছন্দমত লোককে কমিটি দেওয়ার অনুরোধ করে কত টাকা দিতে হবে বলে জানতে চান। কত দিতে পারবেন? বলে জানান ওই সাধারণ সম্পাদক। কথপোকথনে বিশ বলে দাবী করেন ওই ছাত্রলীগ নেতা। উত্তরে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে দেওয়ার কথা বলেন বলেন অপর প্রান্তে থাকা ওই ব্যাক্তি।

এছাড়াও নিবেদিত আওয়ামী পরিবারের সন্তানদের অবমূল্যায়ন করে বিবাহিত ও বিএনপি পরিবারের লোকজনকে সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন অভিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ)। এমন অভিযোগের কথা জানিয়েছেন একাধিক উপজেলার বিভিন্ন এলাকার একাধিক ছাত্রলীগ নেতা।

আমানউল্লাহ রহমান নামের এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আমাকে আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের সভাপতি ও আমার এক বন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দুজনার কাছ থেকে ১লক্ষ টাকা নিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ)। আমি জমি বন্ধক রেখে টাকা দিয়েছি এবং ওই বন্ধুর টাকার জামিনদার ছিলাম। সাধারণ সম্পাদক সবুজ আমাদের পদও দিলো না, টাকাও ফেরত দেয়নি। নানা বাহানায় ঘুরিয়ে এখন আমার মোবাইল রিসিভ করেন না।


আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন ফকির বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের কমিটির বিনিময়ে টাকা লেনদেন করার কথা বলার একটি কল রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। হলদিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা রায়হানের সাথে কথাবলার কল রেকর্ড এটি। এছাড়াও রিয়াদ নামের আরো একজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক সবুজ। উপজেলার আরো অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন তিনি।

মহাসিন ফকির আরো বলেন, সদ্য ঘোষিত আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগে আলআমিন নামের একজনকে সভাপতি করা হয়েছে। আল আমিন দুটি বিয়ে করেছেন, বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে সংসার করছেন। সাধারণ সম্পাদক রিয়াদের পিতা বশির উদ্দিন মেম্বার বর্তমান ইউনিয়ন বিএনপির ৫ নম্বর যুগ্ম আহবায়ক এবং সংসদ নির্বাচনের আগে আমতলীতে সাকুরা বাস পোড়ানোর মামলার ২৯নম্বর আসামী।

এ সময়, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বাতিলসহ নিবেদিত আওয়ামী পরিবারের সন্তানদেরকে মূল্যায়ন করে নতুন কমিটি করতে জেলা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার দাবী জানিয়েছেন সদ্য সাবেক এ ছাত্রলীগ নেতা।

আমতলী পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অমিত রসুল অপি এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জানান, টাকার বিনিময়ে ছাত্রলীগের মত একটি আদর্শ সংগঠনের কমিটি দিয়ে সংগঠনে ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। একজন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতার কাছে টাকা দাবী করার ভাইরাল কল রেকর্ডের সমালোচনা করেন তিনি। অনৈতিকভাবে বিবাহিত ও বিএনপি-জামাতের লোকজনকে কমিটিতে পদ পদবী দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কে ব্যার্থ দাবী করে, আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি দেওয়ার দাবী করেন পৌর ছাত্রলীগের এই নেতা। এসময় তিনি জেলা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তিনি।

আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আল-আমিন হোসাইন তার বিয়ের অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে কোন প্রমান নেই। সাধারণ সম্পাদকের পিতার রাজনৈতিক অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, বিষয়টি তার জানা নেই বলে ফোন কেটে দেন।

সাধারণ সম্পাদক তন্ময় ইসলাম রিয়াদ মোবাইলে জানান, তার পিতার বিষয়ে যে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটির যে কাগজটি দেখানো হয়েছে সেটি এডিট করা। তার পিতার কোন মিটিং মিছিলের ছবি নাই।

অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন (সবুজ) ভাইরাল হওয়া ওই কল রেকর্ডটি সুপার এডিট দাবী করে মোবাইল ফোনে বলেন, কল রেকর্ডটি অনেক আগের, ২০১৭ সালে আর একবার ভাইরাল হওয়ার কথা জানান আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ এ নেতা।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মোবাইল ফোনে বলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাইরাল কল রেকর্ড ও অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে সত্যতা পেলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে পরামর্শ করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, এর আগেও সাধারণ সম্পাদক সবুজের এ কল রেকর্ডটি আর একবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিলো। এছাড়াও বর্তমান উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই বিবাহিত বলে নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন উপজেলাটির একাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।

(এসএস/এসপি/জুন ১৯, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test