E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ঈশ্বরদীতে মজুরি বৈষম্যের শিকার লিচুকন্যারা

২০২৪ জুন ০২ ২৩:৩০:০১
ঈশ্বরদীতে মজুরি বৈষম্যের শিকার লিচুকন্যারা

স্বপন কুমার কুন্ডু, ঈশ্বরদী : লিচুর রাজধানী বলে খ্যাত মৌসুমে ঈশ্বরদীর গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার নারী প্রত্যক্ষভাবে লিচু বাগানে নানান কাজের সাথে জড়িত। লিচু পাকার পর বাছাই ও গণনার কাজ করেন নারী শ্রমিকরাই। এদের কেউ  গৃহিণী, দিনমজুর, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন বাগানে কর্মরত এসব নারীরা ঈশ্বরদীতে লিচুকণ্যা নামে পরিচিত।

দাবদাহের মধ্যে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও লিচুকন্যাদের নেই কদর। ন্যায্য মজুরি প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত এসব নারীরা। তবুও অযথা সময় নষ্ট না করে পুরুষের তুলনায় ৩০০-৫০০ টাকা কম মজুরিতেই কাজ করেন তারা। কাজে নেই কোন গাফিলতি। চা-পান বা বিড়ি-সিগারেট খেতে সময় নষ্ট করেন না তারা। দীর্ঘদিন ধরে লিচুকন্যারা মজুরি বৈষম্যের শিকার হলেও প্রতিকার হচ্ছে না।

মধুমাসে প্রতি বছরই আলোচনায় বোম্বাই লিচুর রাজধানী বলে খ্যাত ঈশ্বরদী। এখানকার রসালো লিচুর কদর দেশজুড়ে। ফলপ্রেমীদের আগ্রহ থাকে ঈশ্বরদীর রসালো লিচুর দিকে। ঈশ্বরদীতে ৩,১০০ হেক্টর জমিতে এবারে লিচুর আবাদ হয়েছে। এবারে লিচু গাছে কাঙ্খিতের চেয়ে বেশী মুকুল ও গুটি এসেছিল। তাপমাত্রা ৩৮-৪৩ ডিগ্রীতে উঠানামা করায় তীব্র দাবদাহে লিচু ফেটে বিবর্ণ হয়ে ঝড়ে পড়েছে। লিচুর গায়ে মরচে বর্ণের দাগ। দাবদাহ ছাড়াও সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এরইমধ্যে ৩০-৪০ ভাগ লিচু বিনষ্ট হয়েছে।

সরেজমিনে বাগান ঘুরে দেখা যায়, বিনষ্ট হওয়ার পরও অনেক গাছেই বোম্বাই লিচু পরিপক্ক হয়ে লালচে রং ধারণ করেছে। প্রতিটি বাগানেই কাজে নেমেছেন নারী শ্রমিকরা। লিচু উৎপাদন, পরিচর্যা ও বিপণনের সাথে সরাসরি নারী কর্মী। লিচু উৎপাদনের সাথে জড়িত লিচুকন্যারা অনেকটা অন্তরালে থেকে যান। লিচুকন্যাদের সাথে সাথে বাগানমালিক ও চাষিদের বৌ-ঝিসহ পরিবারের নারী সদস্যরাও লিচু বাছাই ও গণনার কাজে অংশ নেন।

মানিকনগর গ্রামের লিচু বাগানের রায়হান কবীর বলেন, প্রায় ৩০ হাজার নারী প্রত্যভাবে লিচু বাগানে নানান কাজের সাথে জড়িত। কেউ গৃহিণী, দিনমজুর, স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মধ্যে বিভিন্ন বাগানে কাজ করেন। এবারে ৪০০ টাকা মজুরি দেওয়া হচ্ছে। একবেলা খাওয়া দিলে ৩৫০ টাকা। নারীরা লিচু বাছাই এবং ৫০টি করে আঁটি বাঁধার কাজ করে। পুরুষরা গাছ থেকে লিচু ভেঙ্গে আনা এবং ঝুঁড়িতে প্যাকেট করার কাজ করে। পুরুষ শ্রমিকরা ৭০০-১,০০০ টাকার নীচে কাজে আসেন না।

মাঝগ্রামের রেবতি রাণী বলেন, সংসারের বাড়তি আয়ের আশায় লিচু মৌসুমে সারাদিন কাজ করি। যে আয় তা দিয়ে কেউ ছাগল, কেউ ঘরের আসবাবপত্রসহ সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত হাঁড়ি-পাতিল কেনে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার কাজেও ব্যয় করে। সংসারে বাড়তি টাকা আয়ের জন্য লিচু বাগানে কাজ করছি।

সিলিমপুর রেবা খাতুন বলেন, সংসারের কাজের ফাঁকে বাড়তি আয়ের আশায় বাগানে কাজ করি। দিন শেষে ৪০০ টাকা হাজিরা পাই। অথচ পুরুষরা পায় ৭০০-১,০০০ টাকা। আমরা নারীরা বৈষম্যের শিকার।

মিরকামারীর কলেজ ছাত্রী আয়েশা সুলতানা বলেন, লিচু মৌসুমে আমার মতো শত শত স্কুল-কলেজের ছাত্রী একবেলা খাওয়া দিলে ৩৫০ টাকা। মজুরি হিসেবে যে টাকা পাই তা দিয়ে প্রাইভেট ও পড়াশোনার খরচ চলে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বাগানে কাজ করছি।

বর্তমান বাজারে নারীদের পারিশ্রমিক কম জানিয়ে মাহেলা বেগম বলেন, মজুরি বাড়ানোর দাবি করলেও বাগানমালিকরা বেশি দিতে চান না। গতবছরের চেয়ে এবারে মাত্র ৫০-১০০ টাকা বেড়েছে। কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে অনেক। তাছাড়া এবারে অন্যান্য বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ দামে লিচু বিক্রি হচ্ছে।

জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত লিচুচাষি আব্দুল জলিল কিতাব জানান, লিচু বাছাই ও গণনার কাজে ঈশ্বরদীতে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এখানে পুরুষ শ্রমিকের সংকট প্রকট। নারী শ্রমিক না থাকলে লিচু বাছাই ও গণনার কাজ কঠিন হয়ে যেতো। এবারে নারীদের ৪০০ টাকা মজুরির পাশাপাশি কেউ কেউ সকালে ও দুপুরে খাবার দিচ্ছে। গত বছর মজুরি ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

(এসকেকে/এএস/জুন ০২, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test