E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Walton New
Mobile Version

রেমেলের তাণ্ডব

সুন্দরবনে প্রবেশে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা

২০২৪ মে ৩১ ১৯:১৪:২৩
সুন্দরবনে প্রবেশে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা

সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমেরের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি ঘুরে দাঁড়াতে, বন্যপ্রানী ও মাছের প্রজনন নিশ্চিত করতে তিন মাসের জন্য জেলে-বনজীবীসহ দেশ-বিদেশের সকল পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাত (১ জুন ) থেকে আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কর্যকর হবে। 

সুন্দরবনের বন্যপ্রানী ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানস (আইআরএমপি) এর সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর এই নিষেধজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। ৩৬ ঘন্টার অধিক সময় ধরে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া এবার জেলেদের পাশিাপাশি বনজীবীসহ সকল প্রকার পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকবে সুন্দরবন প্রবেশের সকল পাশ-পারমিট। সুন্দরবন বিভাগের পারমিট নিয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবার জেলে-বনজীবীসহ সব ধরনের পর্যটকরা বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা (ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড) ম্যানগ্রোভ এই বনে প্রবেশ করতে পারবে। বন বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তবে, প্রাথমিক ভাবে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া সুন্দরবন ঘুরে দাঁড়াতে প্রাথমিক ভাবে কমপক্ষে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি দাবি জানিয়েছে এই বন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশন।

সুন্দরনের জেলেরা জানান, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকাসহ ২৫ ফুটের কম প্রসস্ত খালে সারা বছর মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। নিষিদ্ধ সময়ে ২৫ ফুট প্রসস্তের উর্ধের নদী-খালে সারা বছর প্রতি গোনে (প্রতি মাসের আমাবশ্বা ও পূর্ণিমার সময়) উপকূলীয় এলাকার হাজার পারমিটধারী জেলে মৎস্য আহরন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বর্তমানে ঘুর্ণিঝড় রেমালের কারনে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষ দারুন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তার উপর সুন্দরবনে মৎস্য আহরন তিন মাস বন্ধ থাকলে জেলেদের জীবন-জীবিকা আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী জাকির হোসেন ও জালাল মোল্লা জানান, সুন্দরবনের জেলেদের মাছ ধরা ছাড়া এবার আর কোন কাজ কারার সুযোগ নেই। এবছর তিনমাস মাছ ধরা বন্ধ থাকলে জেলেরা ছেলে-মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকবে। উপজেলার বকুলতলা গ্রামের নুর ইসলাম মুন্সি, সোনাতলা গ্রামের আসাদুল মাতুব্বর, খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলে হাবিব হাওলাদার ও জামাল হাওলাদার জানান, আমরা ৩০/৪০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় সুন্দরবনে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। এখন মাছ ধরা বন্ধ করে দিলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। সরকার আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে আমার আর সুন্দরবনে যাবো না।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির দুমার দো জানান, জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস হচ্ছে মৎস্য প্রজননের জন্য উপযুক্ত মৌসুম। এই সময় সাধারণত সকল মাছে ডিম ছাড়ে। তাই ২০১৯ সাল থেকে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানস এর (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টম্বর পর্যন্ত তিনমাস সকল প্রকার মৎস্য আহরন বন্ধ থাকবে। এছাড়াও এই সময়টি সুন্দরবনের বন্যপ্রানীদেরও প্রজনন মৌসুম। এজন্য সুন্দরবন প্রবেশে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর ফলে সুন্দরবনে এ তিন মাস নিরাপদে মৎস্য প্রজনন ঘটে থাকে। এবছর অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমেলের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া সুন্দরবনের প্রানপ্রকৃতি ঘুরে দাঁড়াতে জেলেদের পাশাপাশি তিন মাস বনজীবীসহ দেশ-বিদেশের সকল পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে করে ঘূর্ণিঘড়ের সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীসহ গাছপালার যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

তবে,ম্যানগ্রোভ এই বন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপাসন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমেরের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া এই বন ঘুরে দাঁড়াতে প্রাথমিক ভাবে কমপক্ষে ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানিয়ে বলেন, একটানা ৩৬ ঘন্টার অধিক সময় ধরে চলা এই ঘর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী, গাছপালাসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উচু মাত্রার জোয়ারের স্রোতের তোড় বা জলোচ্ছাসে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণীরা একটানা ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। এবার একটানা ৩৬ ঘণ্টা ধরে চলা ঘর্ণিঝড় রেমালের জলোচ্ছ্বাসে নতুন বৈরী পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে হয়েছে বাঘ, হরিণসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণীর। প্রাপ্তবয়স্ক বাঘ ও বানর গাছে চড়তে পারলেও বাঘ শাবকসহ হাজার-হাজার হরিণ শ্রোতের তোড় ভেসে গিয়ে মারা পড়েছে। ইতোমধ্যেই হরিণসহ শতাধিক বন্যপ্রাণীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। সুন্দরবনের মিঠাপনির উৎস্য ১১৫টি পুকুরও ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের তলিয়ে যাওয়ায় ওই সব পুকুরের পাড়েও আশ্রয় নিয়েও বন্যপ্রাণীরা রক্ষা পায়নি। এই অবস্থায় সুন্দরবন ঘূরে দাঁড়াতে সুন্দরবন প্রবেশে প্রাথমিক ভাবে কমপক্ষে ১৫ মাসের নিষেধজ্ঞা সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান এই বন গবেষক।

(এস/এসপি/মে ৩১, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

২৮ জুন ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test