E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

কেন্দুয়ায় এক গ্রামেই তিন প্রার্থী, জয়ের আশা সবার

২০২৪ মে ৩০ ২২:৪২:১০
কেন্দুয়ায় এক গ্রামেই তিন প্রার্থী, জয়ের আশা সবার

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : আসন্ন কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে পাঁচ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিন জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। এর মধ্যে উপজেলার ১১ নং চিরাং ইউনিয়নের শুধু মাত্র ছিলিমপুর গ্রামেই তিন পদে তিন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। এক গ্রামের তিন পদে তিন প্রার্থী থাকায় এ নিয়ে চলছে নানান মুখরোচক আলোচনা সমালোচনা।

জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সালমা আক্তার (মোটর সাইকেল), মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা রোজি (হাঁস) ও গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিজিত প্রার্থী মানবাধিকার কর্মী মামুনুল কবির খান হলি (তালা) প্রতীক নিয়ে আবারও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তিন প্রার্থীই যার যার অবস্থানে থেকে নিজ নিজ কৌশলে প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। করছেন মাঠে গণ সংযোগ। আবার তিন প্রার্থীই জয় লাভের আশায় কোমর বেধে মাঠে নেমেছেন। অনেকেই বলছেন তিন জনেই যদি বিজয়ী হন তাহলে এক গ্রামেই হবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। এতে হবে একটি নতুন ইতিহাস। আবার অনেকেই বলছেন, একটি গ্রামেই তিন জন প্রার্থী। সব ভোট কি এখানেই দিবে ভোটাররা?

তিন প্রার্থী থাকায় বিষয়টিকে অনেকেই সুন্দর ভাবে দেখছেন না। এ নিয়ে আছে নানান মুখরোচক আলোচনা। সালমা আক্তার চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৫ বার চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থী হন। দুই বার তিনি বিজয়ী হলেও তিন বারেই তিনি পরাজিত হন। পরবর্তী সময়ে গত জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি সংরক্ষিত আসনের সদস্য নির্বাচিত হয়ে জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। ইউপি চেয়ারমান থাকা কালীন সময়ে জনগন ও নিজের নামে বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমাসহ ভালো কাজে যেমন প্রশংসা ছিল তেমনি মন্দ কাজের সমালোচনাও হয়েছে তীব্র ভাবে।

সালমা আক্তার উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক মহিলা সম্পাদিকাও ছিলেন। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বৃক্ষ রোপন কর্মসূচীর সফলতায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর পুরষ্কার পেয়েছিলেন। গত ৭ জানুয়ারীর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকা মার্কার বিপক্ষে গিয়ে সতন্ত্রপ্রার্থীর ট্রাক প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করেছিলেন। এবার তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। করছেন টাকার ছড়াছড়ি ও ব্যাপক গনসংযোগ। নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রথমে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন পরে আবার ফোন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচন আচরণ বিধি মেনে কোন টাকার ছড়াছড়ি না করে জয়ের আশায় নির্বাচন করছেন। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে তিনি জয়ী হবেন।

জাহানারা রোজি। তার বাবা প্রয়াত আব্দুল মালেক মাষ্টার একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন। জাহানারা রোজি এর আগে উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনটি নির্বাচনে অংশ নেন। তবে দুটি নির্বাচনেই তিনি অনেক ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত হন। তবে চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রায় ৬২ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচিত হয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে বাল্য বিয়ের প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তারও ভালো কর্মের যেমন প্রশংসা রয়েছে তেমনি সমলোচনাও রয়েছে। এবার হাঁস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। জাহানারা রোজি বলেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমি নির্বাচন করছি। নারী পুরুষ সমতা, গড়ে তুলি একতা এ শ্লোগানকে তুলে ধরে কাজ করতে চাই। তিনি শতভাগ জয়ের আশাবাদী।

মামুনুল কবির খান হলি। তিনি ছিলিমপুর গ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও আওয়ামীলীগ নেতা সামছুল কবির খানের এক গোত্রের ঘনিষ্টজন। গত নির্বাচনে মামুনুল কবির খান ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে জড়িত। বলাইশিমুল খেলার মাঠে সরকারের আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক লেখালেখি করেছেন। এজন্য মামলার আসামীও হয়েছেন। তবে মামুনুর কবির খান হলি সব কিছুর উপরে তার পরিচয় তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী। যেখানেই সমস্যা সেখানেই ছুটে যান তিনি। সাধ্যমত চেষ্ঠা করেন পাশে দাড়াতে। তারও ভালো কর্মের যেমন প্রশংসা ছড়িয়ে আছে চারদিকে তেমনি সমালোচনাও আছে। এবার তিনি তালা প্রতীক নিয়ে ব্যাপক গন সংযোগ করছেন। তিনি বিজয়ী হয়ে তরুন প্রজন্মকে সাথে নিয়ে আধুনিক ও মডেল কেন্দুয়া গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করবেন এমনটিই প্রচার করছেন তিনি। মামুনুল কবির খান হলি বলেন, মানুষের ভালোবাসাই আমাকে বিজয়ী করবে। মানুষের ভালোবাসা নিয়েই আজীবন বাচতে চাই।

ছিলিমপুর গ্রামে ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজারের মত। কিন্তু তিন প্রার্থীর মধ্যে তিন জনেই আশা করছেন গ্রামের সব ভোট তারা পাবেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের অনেকেই বলেন ছিলিমপুর গ্রামের একতার কোন মিটিং হয়নি বা গ্রামবাসী একত্রে মিটিং করে তাদেরকে প্রার্থীও করেনি। তবে তাদের প্রতি গ্রামের মানুষের সমর্থন যেমন আছে তেমনি বিমুখতাও আছে। ছিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: এনামুল কবির খান। তিন প্রার্থীর নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সহজ সরল ভাষায় বলেন, মামুনুল কবির খান হলি আমার ভাই। আমি তার সমর্থনেই কাজ করছি। অন্যকারও পক্ষে কাজ করা বা কথা বলা আমার কোন সুযোগ নেই। অন্য দুই জন প্রার্থী নির্বাচন করছেন তাতে গ্রামের কোন বাধাও নেই।

(এসবিএস/এএস/মে ৩০, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test