E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

আদালতে আসামী রফিকের চাঞ্চল্যেকর স্বীকারোক্তি, মঙ্গল হত্যার মাষ্টার মাইন্ড চেয়ারম্যান আলী

২০২৪ মে ২৭ ১৯:৪৭:২৪
আদালতে আসামী রফিকের চাঞ্চল্যেকর স্বীকারোক্তি, মঙ্গল হত্যার মাষ্টার মাইন্ড চেয়ারম্যান আলী

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর কালুখালীতে মঙ্গল চন্দ্র হত্যার ঘটনায় বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যেকর তথ্য। কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম আলীর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১জন মিলে হত্যা করেছে। রাজবাড়ীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ ইকবাল হোসেনের নিকট ১৬৪ ধারায় এ চাঞ্চল্যেকর জবানবন্দি দিয়েছেন মঙ্গল চন্দ্র হত্যা মামলার এজহার নামীয় ৩ নং আসামী রফিক মন্ডল। সে কালুখালী উপজেলার লাড়িবাড়ী গ্রামের মৃত কিন্দার মন্ডলের ছেলে।

গত ১৪ মার্চ স্বীকারোক্তিতে রফিক মন্ডল বলেন, তিনি খেঁজুর গাছ কাটেন। শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যানের লোক। গত ২০ বছর ধরে বিপুল ও মঙ্গলের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যানসহ গফুর, মুকিম, আকিদুল, আলী বিরোধ মেটানোর জন্য বহু চেষ্টা করেছেন। প্রতিবার চেয়ারম্যানের ডাকের তোয়াক্কা করতো না মঙ্গল মন্ডল। এ জন্য ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান তাদের ১১ জনকে বলে যে, মঙ্গলকে শায়েস্তা করতে হবে। আবারো তিনি বলেন, তিনি ভারতে যাওয়ার পর ১১ জন মিলে মঙ্গল চন্দ্রকে মেরে হাত, পা ভেঙ্গে দিবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিক, বিপুল, গফুর, মুকিম, আকিদুল, মোঃ আলী, শাওন, মিলন, উজ্জল, সোহেল ও অজ্ঞাত ১জন মিলে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত দেড় টার দিকে মঙ্গল চন্দ্র মন্ডলের বাসায় যান। এ সময় শাওনের হাতে পিস্তল ছিলো, রফিকের হাতে চিকুন রড, মিলনের হাতে চাইনিজ কুড়াল, বিপুলের হাতে হকিস্টিক, অন্য সবার হাতে লাঠিসোটা ছিল। শাওন, মিলন ও বিপুল বেশী মারে। অন্য সবাই এলোপাতারি ভাবে মারে। মঙ্গলের ২ পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়, কিন্তু ঘটনাস্থলে মারা যায়নি। পরে শুনেছি মঙ্গল মারা গেছে।

জানাগেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে কালুখালী উপজেলার লাড়িবাড়ী গ্রামের যতীন্দ্রনাথের ছেলে মঙ্গল চন্দ্র (৬৫) বাড়ীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঢুকে দুই পা ও একটি হাত ভেঙ্গে দেয়। এসময় তার বাড়ী ঘর তছনছ করাসহ ঘরে থাকা গরু ব্যবসার ২ লক্ষ ৯৩ হাজার নগদ টাকা, একটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও ৩টি মোবাইল ফোন লুটপাট করে নিয়ে যায়। চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা বীরদর্পে চলে যায়। এ ঘটনায় তার ছোট ছেলে কুমারেশ কুমার বাদী হয়ে গত ২০ ফেব্রুয়ারী দুপুরে কালুখালী থানায় বিপুল প্রামানিক, মোঃ গফুর, রফিক মন্ডল, মুকিম মন্ডল, আকিদুল মন্ডল ও মোঃ আলীসহ ৬জনের নাম ও অজ্ঞাতনামা ৫-৬জন উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী কুমারেশ কুমার বলেন, মামলায় যাদের আসামী করেছি, পুলিশ তদন্ত করে যে রিপোর্ট দিবে আমরা মেনে নিবো। তবে বাবার প্রকৃত হত্যাকারী যারা তাদের শাস্তি হোক। যাতে কোন নিরপরাধ ব্যক্তির সাজা না হয়। সুষ্টু ও ন্যায় বিচার দাবী জানাচ্ছি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সাওরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন শহিদুল ইসলাম আলী ও তার সহযোগিরা বলে শুনেছি। আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তার কথা না শুনলে নির্যাতন করে আসছেন। এ নিয়ে ইতিপূর্বে মামলার শিকার হন। সাধারণ মানুষ এ থেকে মুক্তি চান।

সাওরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম আলী বলেন, রফিক মন্ডল একজন মানসিক রোগী। আসলে ওই রাতের মারামারির সময় ও নিজেই ছিল কিনা আমার সন্দেহ। আমি ভারতে চিকিৎসার জন্য ছিলাম। কিন্তু একটা গ্রুপ আমাকে ফাঁসানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আমার নামে বিভিন্ন গুজব রটাচ্ছে। আমি এমন একজন লোক একটা স্মার্ট ফোনও ব্যবহার করি না। আসলে জনসেবা করতে এসেছি, করছি। সারাজীবন করে যেতে চাই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কালুখালী থানার এসআই সুবোধ চন্দ্র বর্মণ বলেন, এ মামলার এজাহার নামীয় আসামীরা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। ১৬৪ ধারায় যাদের নাম আসছে তাদের বিরুদ্ধেও আইনী প্রদক্ষেপ চলমান রয়েছে। অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আসবে, নির্দেশ এলে প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

(একে/এএস/মে ২৭, ২০২৪)

পাঠকের মতামত:

১৮ অক্টোবর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test