E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

রামুতে মাত্র চার সপ্তাহে ৩৭০ রোহিঙ্গা আটক

২০২১ আগস্ট ০৫ ১২:৩৭:২৫
রামুতে মাত্র চার সপ্তাহে ৩৭০ রোহিঙ্গা আটক

জাহেদ সরওয়ার, কক্সবাজার : চলমান কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে রামু উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী চেকপোষ্ট। সেই চেক পোষ্টে দায়িত্বরত চৌকিদার,রোভার স্কাউটস,বিজিবি, পুলিশ সহ বিভিন্ন বাহিনীর হাতে গেল কয়েক সপ্তাহ ব্যবধানে আটক হয়েছেন ৩৭০ রোহিঙ্গা। কাজের সন্ধ্যানে ক্যাস্প থেকে পালিয়ে এভাবে দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। এতে চরম ঝূকিঁতে পড়ছে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে রামুতে দফায় দফায় রোহিঙ্গা শরণার্থী আটকের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার ০৭ ই জুলাই দুপুর আনুমানিক সকাল ১২:৪৯ মিনিটের পর থেকে ০৫ জন রোহিঙ্গা আটকের মধ্য দিয়ে শুরু হয় রামুতে রোহিঙ্গা আটকের পালা। গেল ০৭ ই জুলাই বুধবার থেকে ০৪ আগষ্ট বুধবার বিকেল আনুমানিক ৫ টা পর্যন্ত সর্বমোট ০৯ দফায় রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা,ফতেখাঁরকুল,রশিদনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩৭০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আটক করা হয়েছে। জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে,রশিদনগর ইউনিয়নের প্রবেশমুখ, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের বাইপাস ফুটবল চত্বর থেকে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে এসব রোহিঙ্গাদের আটক করতে দেখা গেছে।

ইতিমধ্যে আটক হওয়া উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ২ নং ক্যাম্প এলাকার নুর কাছেমের পুত্র মাহমুদুর রহমান জানান,তারা ক্যাম্পে পর্যাপ্ত খাবার আর নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাচ্ছেন না। তাই তারা নিরুপায় হয়ে অধিক টাকা রোজগারের আশায় ক্যাম্প ছেড়ে কাজের সন্ধানে বের হয়েছেন। যদিও তারা স্বীকার করেছেন- ‘ক্যাম্প ছেড়ে আসাটা অন্যায় হয়েছে’। তারা প্রায় সময় কক্সবাজারের ঈদগাওঁ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও চটগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন মাঠির জোগালি,ধান রোপন সহ বিভিন্ন কাজ করছিল, লকডাউনের কারনে কাজ বন্ধ হওয়াতে তারা বাড়ির সম্মুখে যাত্রা করেন। এবার কেউ কেউ কাজের সন্ধানে ক্যাম্প থেকে ওই এলাকার উদ্যেশে যাত্রা করেন।

প্রাপ্ত সুত্রমতে জানা যায়, গত জুলাই মাসের ৭.১২.১৯.২৫.২৬.২৮ তারিখ বুধবার পর্যম্ত প্রর্যায়ক্রমে ০৫.০৪.১৯.৭৮.১৩৯.১৯.২৫ সর্বমোট ২৮৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী আটক করা হয়। সর্বশেষ আগষ্ট মাসের ৩ ও ৪ জুলাই ৩৩.৪৮ জন সহ রাত ১২ টা পর্যন্ত সর্বমোট ৩৭০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উপজেলার বিভিন্ন স্থান হতে আটক করা হয়। তাছাড়া ৩৭০ জনের মধ্যে ৮০% রোহিঙ্গা জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান হতে আটক করা হয়। সুত্র বলছে রামু উপজেলা ও ঈদগাওঁ উপজেলার কতিপয় কিছু দালাল সিন্ডিকেট হিসাবে কাজ করছে রোহিঙ্গাদের এই ক্যাম্প পালানোর ক্ষেত্রে। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে এই রোহিঙ্গাদের নানা অপকর্মে লিপ্ত করতেছেন।

এদিকে প্রায়ই রামুতে রোহিঙ্গা আটকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্থানীয় অনেক সচেতন বাসিন্দা। রামুর স্থানীয় বাসিন্দা অধ্যাপক নীলোৎপল বড়ুয়া জানান, প্রতিবার রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে আসতে পারার কারণ হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থার চরম অব্যবস্থাপনা। পাশাপাশি স্থানীয় অনেক বাসিন্দা এখানে জড়িত। বর্তমানে এই দেশে নাগরিক হয়ে গেছে এমন অনেক রোহিঙ্গারা এটির সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়।

কিভাবে এতো রোহিঙ্গা শরণার্থী নিরাপত্তা চৌকির চোখ ফাঁকি দিয়ে রামুতে প্রবেশ করছেন জানতে কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ্‌ রেজওয়ান হায়াত এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকার পরেও কিভাবে তারা ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে তা খতিয়ে দেখছি।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাবু প্রনয় চাকমা জানান,আটককৃত রোহিঙ্গাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের অনেকক ০১ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। আবার তাদের অনেককেই জরিমানা আদায় করে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয় এবং আটকৃকদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমান আদায় করা হয়েছে। আটককৃত রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে কৌশলে পালিয়ে কাজের সন্ধানে কক্সবাজারের চকরিয়া, চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, পটিয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছিলো বা ওদিক থেকে রামুর সীমানা পার হচ্ছিলো।

এদিকে রামুতে কয়েক দফায় রোহিঙ্গা আটকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা। এভাবে নিয়ন্ত্রণহীন রোহিঙ্গাদের চলাচল রামুর সার্বিক নিরাপত্তায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারে বলে জানান স্থানীয়রা। তারা রামুতে বা কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের কারখানা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন।

(জেএস/এএস/আগস্ট ০৫, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test