E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

বিপাকে নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতারা

হবিগঞ্জে লকডাউনেও কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত এনজিও কর্মীরা!

২০২১ জুলাই ২৬ ১৬:১১:৩৩
হবিগঞ্জে লকডাউনেও কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত এনজিও কর্মীরা!

তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এনজিও কর্মীরা লকডাউনের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে জোর পূর্বক কিস্তি আদায় করছেন বলে জানা গেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতারা। কঠোর লকডাউনে কর্মহীন হয়ে থাকা সাধারণ মানুষরা ঋণের টাকা কিস্তিতে পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। 

ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার কার্যক্রম চালান, তবে লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকায় পরিশোধ করতে পারছেন কিস্তি। দোকানদার ছাড়াও অনেকে এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে ইজিবাইক, থ্রিহুইলার, ভ্যান, পাখিভ্যান, আলমসাধুসহ বিভিন্ন যানবাহন কিনে চালিয়ে তা থেকে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করেন ও ঋণের কিস্তি দেন।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মৃতু ও আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় সরকার দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। ফলে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায় শ্রমজিবীসহ নানা পেশার মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের ঋণগ্রহীতারা। অধিকাংশ এনজিও বিবাহিত নারীদের সমিতির মাধ্যমে ঋণ দিয়ে থাকে। এমন সময়ে এ সকল ভুক্তভোগী খেটে-খাওয়া ঋণগ্রহীতা যখন তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এর মধ্যে বিভিন্ন এনজিওকর্মীরা বাড়ি বাড়ি কিস্তি আদায়ের জন্য ধরনা দিচ্ছেন, চাপ সৃষ্টি করে কিস্তি আদায় করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এনজিওকর্মীরা ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তির টাকা আদায় করছেন। কোনো কোনো এনজিও কর্মী এক বাড়িতে টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে পাড়ার সব নারী ঋণগ্রহীতাদের নিকট থেকে কিস্তি আদায় করছেন, কিস্তির টাকা না দিলে সন্ধা হলেও তারা বাড়ি ছাড়েন না। এ সময় নারী গ্রহীতাদের মাঝে মাস্ক ব্যবহার বা সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই থাকছে না।

উপজেলার হাতিরথান গ্রামের জনৈক জয়তুন বেগম জানান, স্থানীয় কটিয়াি বাজারের ব্র্যাক’নামে এক এনজিও থেকে তিনি ৫০ হাজার টাকা কিস্তি নিয়ে অটোরিকশা কিনেন। লকডাউনে বস কিছু বন্ধ থাকায় হচ্ছে না আয় রোজগার। তবে নিয়মিত কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন মাঠকর্মী রাজির হোসেন। কিস্তির টাকা না দিলে গালি-গালাজ করেন রাজিব।

নবীগঞ্জের ইজিবাইকচালক আবু হাসান পিন্টু বলেন, ‘সে সম্প্রতি ইজিবাইক কিনেছে এ সময় তিনি আশা এনজিও থেকে তার স্ত্রীর নামে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল এতে সপ্তাহে তার ১১ শ টাকা কিস্তি দিতে হয়। গাড়ি চালিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাই আর প্রতিদিন কিছু কিছু জমিয়ে সপ্তাহিক কিস্তি দেই। লকডাউনে এক সপ্তাহ বাড়ি বসে আছি, কোনো আয়-রোজগার নেই। ধারদেনা করে সংসার চলছে, কিস্তি কিভাবে দেব ভেবে পাচ্ছি না। লকডাউনের সময় কিস্তি বন্ধ না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্ণালী পাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে বলেন, ‘লকডাউনে কিস্তি আদায় বন্ধ, তারপরও যদি কেউ জোর করে কিস্তি উত্তোলন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে’।

স্থানীয় ব্র্যাক অফিসের ম্যানেজার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই, খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব’।

(টিএইচ/এসপি/জুলাই ২৬, ২০২১)

পাঠকের মতামত:

০৩ জানুয়ারি ২০২৫

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test