E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া সেই শিক্ষককে স্ট্যান্ড রিলিজ

২০২০ ফেব্রুয়ারি ০৭ ১৬:০৮:৪৯
ছাত্রীকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া সেই শিক্ষককে স্ট্যান্ড রিলিজ

মানিক সরকার মানিক, জলঢাকা ঘুরে এসে : বনভোজনের অতিরিক্ত মাত্র ৫০ টাকা দিতে না পারায় ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে মানসিক লাঞ্ছিত করে সরকারীভাবে দেয়া তার সকল পাঠ্যবই কেড়ে নিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়ার অপরাধে প্রধান শিক্ষককে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তোলপাড় হবার পর বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষা অধিদফতরের মহা-পরিচালকের নির্দেশে এ আদেশ দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সামছুল আলম নামের অপর এক শিক্ষক তার স্থলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এর আগে ওই প্রধান শিক্ষক ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ধামচাপা দেয়ার চেষ্টা চালান। এ ঘটেছে নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার গাবরোল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি বিদ্যালয়ের পক্ষে ছাত্রছাত্রীদের বনভোজনে যাবার কথা। এজন্য প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর কাছে ২৫০ টাকা করে চাঁদা ধরা হয়। কিন্তু ওই গ্রামের দিনমজুর কৃষ্ণ চন্দ্র রায় দারিদ্য্রতার কারণে তার মেয়ে কাজলী রানীকে বনভোজনে পাঠাতে ২৫০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা দিয়ে স্কুলে পাঠায় এবং প্রধান শিক্ষককে তার বাবার অপারগতার কথা খুলে বলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ২০০ টাকা পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কাজলীকে মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে সরকারীভাবে দেয়া তার সমস্ত পাঠ্যপুস্তক কেড়ে নেন। এ অবস্থায় লজ্জা ক্ষোভে কাজলী বাড়িতে ফিরে যায় এবং বিষয়টি তার বাবাকে জানায়।

পরে বাবা কৃষ্ণ চন্দ্র স্কুলে গেলে তাকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ বের করে দেন এবং দাম্ভিকতা দেখিয়ে বলেন, তোমার মেয়েকে কোন স্কুলে পড়াও তা আমি দেখে নেব। পরে কৃষ্ণ চন্দ্র মেয়ে কাজলীকে স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে ভর্তি করান এবং ২৬ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বিষয়টি অভিযোগ আকারে লিখে জানান। ২৭ জানুয়ারি ইউএনও বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দিলে প্রধান শিক্ষকের টনক নড়ে।

তদন্তের খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টি ম্যানেজ করার জন্য কৃষ্ণ চন্দ্রকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, ‘বই কেড়ে নেয়া এবং স্কুল থেকে বের করে দেয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে তোমার সমস্যা হবে’। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক ইউএনও বরাবরে যে অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন, তা-ও জোর পূর্বক কৃষ্ণ চন্দ্রর কাছ থেকে প্রত্যাহার করিয়ে নেন। পরে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ধরেন বিষয়টির মীমাংসার জন্য।

এদিকে ইউএনও বিষয়টির তদন্তের পরিবর্তে গত মঙ্গলবার কাজলী, তার বাবা কৃষ্ণ চন্দ্রসহ সকলকে তার কার্যালয়ে ডাকেন। মঙ্গলবার সেখানে সকলে উপস্থিত হলে ইউএনও সুজা-উদ-দৌল্লা, উপজেলা চেয়ারম্যান বাহাদুর আলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্যরা বিষয়টিকে ‘একটি ভুল বোঝাবুঝি’ আখ্যায়িত করে মীমাংসা করিয়ে দেন এবং ফেরত নেয়া পাঠ্য পুস্তকও কাজলীর হাতে তুলে দিয়ে তাকে ওই স্কুলেই পড়ালেখার জন্য জানান।

এদিকে বিষয়টি বিভিন্ন অনলাইনসহ কিছু মিডিয়ায় প্রচার হলে তাৎক্ষনিক শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক নজরে আসে। পরে উপ-পরিচালক ওই প্রধান শিক্ষককে শাস্তিমূলক দুর্গম চরের কোন বিদ্যালয়ে বদলির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যায় ওই প্রধান শিক্ষককে পূর্ব গোপাল চরভরাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির আদেশ দেন। বৃহস্পতিবারই তিনি সেখানে এবং তার স্থলে গাবরোল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সামছুল আলম নামের অপর এক শিক্ষক যোগদান করেন।

এলাকার শিক্ষাবীদরা এ ঘটনাটিকে অত্যন্ত অমানবিক, লজ্জাকর এবং একজন শিক্ষকের জন্য গর্হিত কাজ । তাদের মতে, শিক্ষক হলো মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের এই আচরণে কোমলমতি ওই শিক্ষার্থী অভিমানে মারাত্মক কিছুও করে ফেলতে পারতো। যেমনটি আমরা সোমবারেই দেখেছি পার্শ্ববর্তী উপজেলা ডোমারে। সেখানে শিক্ষকের ভুলের কারণে বাণিজ্য বিভাগের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর এ্যাডমিশন কার্ড এসেছে বিজ্ঞান বিভাগের। ফলে ওই পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে না পারায় ক্ষোভে আত্মহত্যা করেছেন। শুধু তাই নয়, এমন ঘটনা দেশে অহরহই ঘটছে। রংপুরের অপর শিক্ষাবীদ নজরুল ইসলাম হাক্কানী জানান, প্রাথমিক শিক্ষকদের অনেকেই জানেন না ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্ক কী?

তিনি বলেন, অশালীন আচরণের কথা বাদই দিলাম, তিনি যে, সরকারী বই শিক্ষার্থীর হাত থেকে ফেরত নিয়ে তাকে বিদায় দিয়েছেন এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে চাকরি থেকে বহিস্কার এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজা-উদ-দৌল্লা ও উপজেলা ওই শিক্ষকের স্ট্যান্ড রিলিজের কথা স্বীকার করেন।

(এমএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২১ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test