E Paper Of Daily Bangla 71
Sikdar Dental Care
Walton New
Mobile Version

১২ বছর পর আ. লীগের রংপুর জেলা ও মহানগর সম্মেলন আজ

২০১৯ নভেম্বর ২৬ ১৫:৪৫:৫৩
১২ বছর পর আ. লীগের রংপুর জেলা ও মহানগর সম্মেলন আজ

মানিক সরকার মানিক, রংপুর : আজ মঙ্গলবার রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। দীর্ঘ ১২ বছর পর এই সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমুলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে যেমন দলের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জ্বীবিত এবং উৎসব আমেজে মেতে উঠেছে অন্যদিকে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের মাঝে বিরাজ করছে উৎসুক-উৎকণ্ঠা। কে হচ্ছেন আগামীতে দলের কান্ডারি। এ নিয়ে গত ক’দিনই ধরেই জেলা ও মহানগর দলের দু’টি পক্ষের মাঝে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা।

সম্ভাব্য প্রার্থীরা গতকাল সোমবার গভীর রাত অবধি বর্তমান দলীয় নেতাকর্মীদের ম্যানেজে চালিয়ে গেছেন তাদের সর্বোচ দৌঁড়ঝাঁপ। জেলার প্রধান সড়ক এবং বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলি গলি ভরে গেছে তদের প্রিয় নেতার ছবি দিয়ে নিজের পোষ্টার ব্যানার আর ফেষ্টুনেও। এতে করে সম্মেলনকে ঘিরে গোটা জেলার চিত্রই যেন পাল্টে গেছে। অন্যদিকে কর্মী সমর্থকদের আনাগোনায় গত ক’দিন ধরেই প্রাণ ফিরে পেয়েছে দলীয় কার্যালয়। সম্মেলন বাস্তবায়ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ।

জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজুকে সদস্য সচিব করে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলনকে সফল করতে অর্থ উপ-কমিটি, মঞ্চ-সাজসজ্জা ও শৃঙ্খলা, আপ্যায়ন, অভ্যর্থনা, প্রচার ও দপ্তরসহ ৬টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও নেতাকর্মীদের মাঝে বিভিন্ন দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১১টায় পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। জেলার প্রায় সাড়ে তিন’শ কাউন্সিলরের ভোট কিংবা মতামতের ভিত্তিতে নতুন এই কমিটি গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলের সভাপতি মন্ডলির সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এম.পি। প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এম.পি, বিশেষ অতিথি থাকবেন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এবং রংপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও অপর সাংগঠনিক সম্পাদক বি.এম মোজাম্মেল হক, কোষাধ্যক্ষ এইচ.এম. আশিকুর রহমান এম.পি. সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরি এম.পি. অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সি এম.পি প্রমূখ।

নির্বাচনে জেলা ও মহানগর কমিটির কে হচ্ছেন সভাপতি ও সম্পাদক কিংবা অন্যান্য পদগুলোইবা পাচ্ছে কারা এ নিয়ে নেতাকর্মী সমর্থকদের উৎসুক-কৌতুহল ও অস্থিরতার যেন শেষ নেই। কেউ কেউ ভাবছেন, কেন্দ্রীয় নেতারা এখানেই নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটির ঘোষণা দেবেন, নাকি ঢাকায় নিয়ে যেয়ে কমিটি ঘোষণা করবেন এ নিয়ে মহাদু:শ্চিন্তায় সবাই। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাদের অতীত দিনের কর্মকান্ডের ভালমন্দ বিষয়ে ভাবান্বিত হয়ে পড়েছেন বেশি। কারণ, কেন্দ্রীয় নেতারা চাইছেন এতদিন যেসব ত্যাগি নেতা তাদের ক্লিন ইমেজ ধরে রাখতে পেরেছেন এবং মাঠে ময়দানে জনগণের পাশে থেকে কাজ করেছেন তাদেরকেই গুরুত্ব দেবেন বেশি।

আর এ কারণেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের স্ব স্ব কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছনে যোগাযোগের চেষ্ট চালাচ্ছেন বেশি। তবে তৃণমুলের অধিকাংশ নেতাকর্মী সমর্থকরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে চাইছেন, ত্যাগি ও যোগ্য এবং অতীতে যেসব নেতা টেন্ডারবাজি, চাকুরি দেয়ার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি চালিয়েছেন কিংবা অর্থের প্রভাবে নেতৃত্ব নিয়েছেন কোনভাবেই যেন তাদের প্রাধান্য দেয়া না হয়। ক্লিন ইমেজের নেতাদের প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা।

তারা বলছেন, এক সময় রংপুর জেলা ছিল, পৌরসভা ছিল। এখন বিভাগ ও সিটি করপোরেশন হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ডিজিটাল পদ্ধতির। এই আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এমন নেতা নির্বাচন কিংবা মনোনীত করে এই এই বিভাগ এবং সিটি করপোরেশনের মানুষকে যাতে আধুনিক স্বপ্ন পুরণের সফলতায় নিয়ে আসা যায়।

বর্তমানে জেলা সভাপতি হতে ইচ্ছুক যেসব প্রার্থীদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বর্তমান ও বিদায় সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রেজাউল করীম রাজু, প্রধানমন্ত্রীর ভাসুরের ছেলে ছাদাকাত হোসেন বাবলু, বদরগঞ্জের সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরী, এ্যাডভোকেট হোসেনে আরা লুৎফা ডালিয়াসহ আরও অনেকের নাম। আর সম্পাদক হিসাবে নাম শোনা যাচ্ছে, বর্তমান ও বিদায়ি সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট রেজাউল করীম রাজু, তুহিন চৌধুরি, এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, মোতাহার হোসেন মওলা, তৌহিদুর রহমান টুটুলসহ আরও অনেকের নাম।

আর মহানগর কমিটির সভাপতি হিসেবে যাদের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে বতর্মান সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, বর্তমান জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ আবুল কাশেম, রফিকুল ইসলাম দুলাল, ইদ্রিস আলী, সিটি কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, শামীম তালুকদার, আতাউজ্জামান বাবু, কায়সার রাশেদ খান শরীফ প্রমূখ। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, নওশাদ আলী, সামসুর রহমান কোয়েল, রেজাউল ইসলাম মিলন, দিলসাদ ইসলাম মুকুল প্রমুখ।

অপরদিকে রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সহ সভাপতি শামীম তালুকদার, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, জেলা কমিটির কোষাধ্যক্ষ আবুল কাশেম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউজ্জামান বাবু, সাবেক সিটি কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, কায়সার রাশেদ খান শরীফসহ বেশ কয়েকজন আলোচনায় রয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রংপুর টাউন হলে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও সভায় আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে সম্মেলন প- হয়ে যায়। এরপর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে সংগঠন চলার পর ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। বর্তমান এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ হয়েছে।

রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল জানান, ২০১১ সালের ২২ ফ্রেব্রুয়ারী রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্টিত হবার পর ঢাকা থেকে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। এর দীর্ঘ সময় পর এ সম্মেলন অনুষ্টিত হচ্ছে। আশা করছি এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন একটি কমিটি করা হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু বলেন, দলের সম্মেলন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। গত ১৪ই সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রংপুর টাউন হলে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় আমি জোড়ালোভাবে সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছি। কেন্দ্রীয নেতারা ওই সভাতেই ২৬শে নভেম্বর সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করেন।

তিনি জানান, এবার আমি কোনো পদেই নির্বাচন করছি না। তবে দল যদি চায় তাহলে আমি থাকবো এবং আশা করছি সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা একটি পরিপূর্ণ শক্তিশালী ও যুগোপযোগি কমিটি আমাদের উপহার দেবে।

(এমএস/এসপি/নভেম্বর ২৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২২ ডিসেম্বর ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test