আহম্মদ ফিরোজ, ফরিদপুর :  প্রধানমন্ত্রী দেশে সবুজায়নের জন্য যেখানে প্রত্যেক নাগরিককে বৃক্ষ রোপনের পরামর্শ দিয়েছেন সেখানে ফরিদপুরে প্রধানমন্ত্রীর সফরের অজুহাতে সুপার মার্কেটের সামনে পাখি ও মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে সমাদৃত ৩টি ফলবতী কাঠাল গাছ সহ ১১টি গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে আজ শুক্রবারও এসব গাছ কাটা চলছে। এহেন কান্ডে সুপার মার্কেটের দোকানদারগণসহ সচেতন শহরবাসীর মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা তিব্র ক্ষোভ ও ধিক্কার জানিয়েছেন এতে।

ফরিদপুর পৌরসভার মালিকানাধীন ফরিদপুর সুপার মার্কেটের এ গাছগুলো শহরের সৌন্দর্য্য বর্ধণ করতো। ফলবতী কাঠাল গাছগুলোতে প্রতিদিন বিকেল হতে হাজার হাজার চড়–ই পাখি সমাগম ঘটতো। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে সেখানে এক অন্যরকম ভাললাগা প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি হতো। দিনশেষে ক্লান্ত পাখিদের জন্য রাতের বেলায় নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছিল এ গাছগুলো। গরমে ক্লান্ত অনেক পথচারীর জন্যও গাছগুলো একটু বিশ্রামের স্থল হিসেবে সমাদৃত ছিল। এছাড়া সুবিশাল সুপার মার্কেটে আগত রোগী ও ক্রেতাসহ শহরবাসীকে ছায়া দিতো এ গাছগুলো। ইট কাঠের এই শহরে বৈশাখের আগমনী বার্তা জানান দিতো সুপার মার্কেটের কৃষ্ণচুড়া গাছগুলো।

সরেজমিনে সুপার মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, দু’জন শ্রমিক ফরিদপুর সুপার মার্কেটের সামনে তিনটি কাঠাল গাছ, তিনটি কড়াই গাছ ও পাঁচটি কৃষ্ণচুড়া গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। কোনপ্রকার টেন্ডার চাড়াই গাছ কাটছে তারা। পথচারী ও শহরবাসীসহ সুপার মার্কেটের সাধারণ দোকানীরাও গাছ কাটার এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। তারা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, পৌরসভার কাজ নাগরিককে সেবা দেয়া। অথচ তাদের একান্ড পাখি ও মানুষের জন্য ভোগান্তিমুলক। সারা শহরে ড্রেনের ঢাকনা থাকেনা, শহরবাসী পানি পায় না। সেদিকে, খেয়াল না করে তারা কি কারণে গাছগুলো কেটে ফেললো তা বোধগম্য না।

গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ইউসুফ আলী জানায়, পৌরসভার কর্মচারী জাহিদ ও বিশাই তাদেরকে এসব গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছে। গাছগুলো কেটে পৌরসভায় নিয়ে যাচ্ছে তারা। তবে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিকট খোঁজ নিয়ে এ নামে গাছ কাটার সাথে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপার মার্কেটের দোকানীরা জানান, বিদ্যুতের তার সঞ্চালনে ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণে এসব গাছ কাটা হচ্ছে বলে তারা জেনেছেন। তবে এজন্য গোড়াসমেত গাছ কেনো কেটে ফেলা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। ফলবতী কাঠাল গাছ সহ বিরাটাকায় কড়াই গাছও গোড়াসমেত কেটে ফেলা হচ্ছে বলে তারা জানান।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মির্জা জাকিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পৌরসভা এসব গাছ কাটছে না। সড়ক বিভাগ অথবা ছাত্রলীগের ছেলেরা এসব গাছ কাটতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সফর উপরক্ষে শহরের সৌন্দর্যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এমন সব স্থাপনা অপসারণের মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে পৌরসভার সচিবকে।

এসব গাছ সৌন্দর্যহানি ঘটাচ্ছে কিনা একথা জানতে চেয়ে প্যানেল মেয়র বলেন, শহরের সৌন্দর্যহানি করতে পারে এমন সবকিছু অপসারণের জন্য পৌরসভার সচিবকে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হযেছে। অবশ্য ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গির আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এগাছগুলো সড়ক বিভাগের জায়গায় নয়। তাই সড়ক বিভাগের এসব গাছ কাটার প্রশ্নই আসেনা। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, ফরিদপুর সুপার মার্কেটের ফলবতীসহ সৌন্দর্যবর্ধণকারী এসব গাছ কার নির্দেশে দিনেদুপুরে কেটে ফেলা হলো?

(এফ/এসপি/মার্চ ২৪, ২০১৭)