আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কোন রাখ ঢাক রাখলেন না কেউই। বড় মানুষগুলো অনেক বড় করে তুলে ধরলেন মুক্তধারা আর এর কর্নধার বিশ্বজিৎ সাহাকে। অকৃপণ গুনগানে উঠে আসলো নানা প্রসঙ্গ। তবে সব কিছু ছাপিয়ে বাংলা সাহিত্য আর সংস্কৃতিতে এই প্রবাসে বাচিয়ে রাখার ২৫ বছরের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানালেন মুক্তধারার রজত জয়ন্তীতে উপস্থিত বাংলাদেশ আর প্রবাসের বিশিষ্টজনেরা।

তারা বললেন, ২৫ বছর মানুষের হাতে বাংলা বই তুলে দিয়েছেন বিশ্বজিত। তিনি তো আসলে বই তুলে দেননি। তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশকে। প্রবাসে জম্ম নেয়া আমাদের সন্তানরা জানতে পারছে তাদের শেকড় সম্পর্কে। এই কাজটি মোটেও সহজ সাধ্য ছিলোনা। অনেক নিন্দামন্দ হাসিমুখে সইতে হয়েছে তাকে। তারপরও মরম মমতায় আকড়ে রেখেছেন বাংলা বই। বিশেষত উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক, সিনেমা আর গান। আর ফি বছর এগুলোর পসরা সাজিয়ে দেশ বিদেশ আর বুড়ো তরুণদের এক কাতারে দাড় করিয়েছেন বই মেলার আয়োজন করে।
শুধু মঞ্চে নয়, মুক্তধারার রজত জয়ন্তীতে পরম ভালোবাসয় স্মরন করেছেন বাংলাদেশের এ সময়ের জনিপ্রয় লেকক সাংবাদিক আনিসুল হক। তিনি প্রথম আলোতে বিশেষ কলাম লিখেছেন। রজত জয়ন্তীকে স্মরনীয় করে রাখতে নিউয়র্কে আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের।
এ উপলক্ষে গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় জ্যাকসন হাইটস থেকে বের করা হয় বর্ণিল শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা উপলক্ষ্যে বিকেল থেকেই সেখানে জড়ো হতে থাকেন প্রবাসী কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সংগঠক, ব্যবসায়ী, সংস্কৃতিসেবী, সাংবাদিকসহ বহু সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী। তাদের হাতে শোভা পায় নানা রঙ আর বর্ণের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন। এ সময় অংশগ্রহণকারীদের কথা, কবিতা আর গানে সরব হয়ে ওঠে ওই এলাকার পরিবেশ। প্রখ্যাত অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেন, অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেন, লুৎফুন্নাহার লতা, মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী ড. নুরান নবীসহ খ্যাতিমানরা যোগ দেন শোভাযাত্রায়। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী এবং প্রবাসী কল্যানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিও এসে যোগ দেন সবার সঙ্গে। এ সময় তিনি তার সংক্ষিপ্ত অনুভূতিও ব্যক্ত করেন। সন্ধ্যা পৌনে আটটায় মূল রজত জয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় জ্যাকসন হাইটস এর পিএস ৬৯ এর অডিটোরিয়ামে। সেখানে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, সাংবাদিক আবেদ খান, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞানী ড. খন্দকার মুনসুর, বিজ্ঞানী ও মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরান নবী, কবি ও সাংবাদিক শিহাব সরকার, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, ড. শাহাদাত হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ও চিকিৎসক ডাঃ জিয়াউদ্দিন, অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেন বক্তারা উত্তর আমেরিকায় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় অসামান্য ও গৌরবাজ্জল ভূমিকা রাখায় মুক্তধারা ও এর প্রধান নির্বাহী বিশ্বজিৎ সাহার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, আজ থেকে ২৪ বছর আগে তরুণবয়সে বিশ্বজিৎ জীবিকার খোজে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। সাচ্ছন্দে জীবন যাপন করার জন্য তিনি অন্য যে কোন পেশা বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। হাতে তুলে নিয়েছেন বই। এবং তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বাঙালীরা যখন বই থেকে অনেক দুরে তখন তাদের কাছে তিনি বই ফেরি করছেন। এবং চ্যালেঞ্জিং এ কাজটি তিনি একাই করে যাচ্ছেন। অনেক বাধা, আসছে নিন্দুকের নিন্দা, মন্দলোকের কুৎসা, হাজরো প্রতিকুলতা নীরবে সয়ে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আমাদের বাংলাকে। বাংলা বইকে। বাংলা গান, নাটক -সিনেমাকে।আলোচনা পর্বের শেষের দিকে অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। পরে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন প্রবাসে তিনযুগ ধরে অতি পরিচিত মুখ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, এ প্রজম্মের জনপ্রিয় গায়ক শাহ মাহবুব, এটিএন তারকা ও নিউইয়র্ক শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত শিক্ষক রেজওয়ান প্রমুখ। এর আগে প্রবাসে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অনবদ্য ভূমিকা রাখার জন্য মুক্তধারার প্রধান নির্বাহী বিশ্বজিৎ সাহার হাতে নিউইয়র্কের স্টেট সিনেটর মাইকেল জেনারিশ এর প্রক্লেমেশন সার্টিফিকেট তুলে দেন তার ডেপুটি চীফ অব স্টাফ মিস আইরিন। ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে পূর্ব পশ্চিম নামে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়। এতে বাংলাদেশ ও প্রবাসের ৮০ জন খ্যাতিমান ব্যাক্তির লেখা প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা প্রকাশিত হয়।

(ই ডি/বি এইচ ২৭সেপ্টেম্বর২০১৫)