মোহাম্মদ সজীব, ঢাকা : রাজধানীর পশ্চিম ধানমণ্ডি এলাকার মাদক ব্যাবসায়ী ও মহিলা সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত বেদেনা। তার দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ পুরো পরিবার সন্ত্রাসী সাম্রাজ্যে হিসেবে এলাকায় ব্যপক পরিচিতি। রয়েছে এলাকা জুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য। সাধারণ মানুষের বিচার শালিসির নামে একদল লোকজন নিয়ে বানিয়েছেন মানবাধিকার নামে সংঘটন। বিচার শালিসির নামে চালানো হতো জোর-জুলুম,। টাকা খেয়ে জোর-জবরদস্তি করে পারিবারিক সংসারও ভেঙেছেন অনেক পরিবারের। বেদেনার দুই ছেলে শাকিল ও শান্ত হোসেনের নেতৃত্বে এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের বিপক্ষে কেউ কথা বললে দিতে হতো চরম মূল্য। নির্যাতন ও ভুয়া মামলা দিয়ে করা হতো এলাকা ছাড়া।  তুলে নিয়ে যেতেন নিজ বাসার তিন তলায় বিশেষ ট্ররচারসেলে। ইলেকট্রিক শক দিয়ে করা হতো অমানবিক নির্যাতন। রেহাই পাননি জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিক্ষক, পুলিশ সদস্য এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। গত ৫ অক্টোবর শনিবার ধানমন্ডি থানার ছাত্র হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয় বেদেনার বড় ছেলে যুবলীগ নেতা শাকিল হোসেনকে। পরে রাতে তার বাসায় অভিজান চালায় হাজারীবাগ থানা পুলিশ, অভিজানে উদ্ধার করা হয় দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ ২ টি পিস্তল। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, টানা ১যুগের বেশী ধরে বেদেনার দাপট দেখেছেন পশ্চিম ধানমণ্ডি মধুবাজার এলাকার আক্তার হোসেন রোডের এলাকাবাসী ও সাধার মানুষ। বেদেনা তার মে ও দুই ছেলেদের সন্ত্রাসী বাহিনীর নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। থানায় মামলা ও অভিযোগ করার সাহস পেতেন না কেউ। তবে মামলা হলেও নিজ ক্ষমতায় গায়েব করে ফেলতেন বেদেনা।

সরেজমিনে গিয়ে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ওপর ভর করে পুরো এলাকা জুড়ে নির্যাতন চালাতেন এই পরিবার। বেদেনার রাজনৈতিক কোনো পদ না থাকলেও তার ছোট ছেলে শান্ত ৩৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ছিলেন, কিশোর গ্যাং ও নানা অপকর্মের কারনে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল ছাত্রলীগ থেকে। স্থানীয়দের অভিযোগ নিজেদের পারিবারিক আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া ছিলেন এই পরিবার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তৎকালীন ধানমণ্ডি জোনের এসি আব্দুল্লাহ আল কাফি ও প্রশাসনের সাথে ব্যাপক যোগাযোগ ও গোপন সম্পর্ক ছিল বেদেনার। বিশেষ করে প্রশাসনিক ক্ষমতার বল প্রয়োগ করে ভুয়া মামলায় ফাসিয়েছেন অন্তত শতাধিক মানুষকে। জমি ও বাড়ি দখলসহ, নিজের দখলে নিয়েছেন পুরো এলাকার মাদকের নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট ও ডিশ লাইন ব্যাবসা। আগামী কাউন্সিলর নির্বাচনে নিজের মেয়ে বিথি আক্তারকে ৩৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রচরণাতেও দেখা যায়। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে তাদের সেই ত্রাসের রাজত্বের অবসান হয়েছে।

এতদিন ভয়ে মুখ না খুললেও এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেকে বেদেনা ও তার ছেলের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে মুখ খুলতে শুরু করেছেন এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে হাজারীবাগ থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ধানমন্ডি থানার ছাত্র হত্যার মামলার আসামী ছিলেন শাকিল হোসেন। তিনি ৩৪ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন, ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত, গত ৫ই আগস্টের আগে ধানমণ্ডি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা মিছিল মিটিং করেছে সেই ছাত্রদের উপর অতর্কীত গুলি বর্ষন করেন যুবলীগ নেতা শাকিল। এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করেছেন শাকিল। তার বাসার ৩ তলার কবুতরের খামার থেকে একটি পিস্তল ও একটি রিভালবার ও চাপাতি সহ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এবং এ ধরনের সন্ত্রাসী ও অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে অভিজান অব্যাহত থাকবে বলে জানান ওসি সাইফুল ইসলাম।

তবে এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি বেদেনাসহ পরিবারের বাকি সদস্যদের গাঢাকা দিয়েছে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীও।

(এস/এসপি/অক্টোবর ০৬, ২০২৪)