গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যে লালিত  আকর্ষণীয় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কুমার নদে মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী ইউনিয়নের বাহারা গ্রামে আসমত স্পোর্টিং ক্লাব শনিবার বিকালে (৫ অক্টোবর) এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।

এ নৌকা বাইচে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ১৫টি সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা, চিলাকাটা,জয়নগর বাচারী নৌকা অংশ নেয় । আবহমান গ্রাম বাংলার অতি প্রাচীন কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে হাজারো প্রাণের আনন্দ উচ্ছালতায় কুমার নদের বাহার গ্রাম থেকে শিবগঞ্জী পর্যন্ত ২ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

এখানে বাড়তি আকর্ষণ ছিল নৌকা ও ট্রলারে অনন্দ উপভোগ। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে এ নৌকা বাইচ শুরু হয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ নদীর দু’পাড়ে দাড়িয়ে নৌকা বাইচ প্রত্যক্ষ করেন । বিকাল থেকে নানা বর্ণে ও বিচিত্র সাজে সজ্জিত দৃষ্টি নন্দন এসব নৌকা তুমুল বাইচ শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে নৌকা বাইচের একের পর এক ছোপ।

ঠিকারী ও কাঁশির বাদ্যের তালে জারি সারি গান নেচে গেয়ে - হেঁইও হেঁইও রবে বৈঠার ছলাৎ- ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয়। নদীর দু’ কূলে দাড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ে জাগে দোলা। মাল্লাদের সাথে সমবেত হন অগণিত সমর্থক ও দর্শক। তারা উৎসাহ দেন বাইচের নৌকার মাল্লাদের। নদীর দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের করতালি ও হর্ষধ্বনিতে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। গোটা এলাকায় সঞ্চারিত হয় উৎসবের আমেজ। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে রথখোলা এলাকায় বসে গ্রামীন লোকজ মেলা। মেলায় শতাধিক স্টল বসেছিল। সেখানে মুড়ি মুড়কি, মিষ্টি, কসেমেটিকস, কুটির শিল্পে উৎপাদিত পণ্য খেলনা সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র বিক্রি হয়েছে।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় মুকসুদপুর উপজেলার বাগাদিয়া গ্রামের দিলীপের নৌকা ১ম, ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার রামেরচর গ্রামের রেজাউলের নৌকা ২য় ও ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদি গ্রামের সামাদের নৌকা ৩য় স্থান অধিকার করে।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে আসমত স্পোর্টিং ক্লারে সভাপতি ও বাটিকামারী ইউপি’র চেয়ারম্যান এবাদত হোসেন এবাত মাতুব্বর সহ গণমান্য ব্যক্তিরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এছাড়া এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহনকারী সব নৌকাকে শান্তনা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

আয়োজক আসমত স্পোর্টিং ক্লারে সভাপতি ও বাটিকামারী ইউপি’র চেয়ারম্যান এবাদত হোসেন এবাত মাতুব্বর বলেন, ২৫ বছর আগে এখানে গ্রামবাসীর উদ্যোগে নৌকা বাইচের প্রচলন করা হয়। ১১ বছর আগে গ্রামবাসী এটির আযোজন করতে হিমশিম খাচ্ছিল। তারপর থেকে আমাদের ক্লাবের পক্ষ থেকে নৌকা বাইচ করে আসছি। বিগত এক দশক ধরে আমরা উৎসবের আমেজে প্রতিবছর এ আয়োজন করি। এতে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা, আলফাডাঙ্গা, সালথা ও ভাঙ্গা উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ নৌকাবাইচ দেখতে সমবেত হন। উৎসবে মেতে ওঠেন। প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছর আমরা এ আয়োজন করে যাব। আমরা এটিকে হারিয়ে যেতে দেব না।

স্পন্সার মমতাজ হারবাল কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি কেএম আবু বক্কার বলেন, এটি আমদের গ্রামের নৌকা বাইচ। তাই আমাদের কোম্পানী এটিতে স্পন্সার করেছে। আমরা টিসার্ট ও ২/১টি পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছি। কোম্পানীর সামান্য সহযোগিতায় নৌকা বাইচটি আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। আমাদের কোম্পানী প্রতি বছর এ সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।

মুকসুদপুর ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী কানিজ ফাতেমা বলেন, বান্ধবীদের সাথে নৌকা বাইচ দেখতে বাহারা গ্রামে এসেছি। এই কালারফুল নৌকা বাইচ আমাদের আনন্দ দিয়েছে। এমন বিনোদন সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে পারলে যুব সমাজ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হবেন।মাদক থেকে মুক্তি পাবে।

মাল্লা আলামিন শেখ বলেন, বাইচের নৌকার মাল্লা হয়ে তালে তালে বৈঠা মেরে নিজে আনন্দ পাই। নদীর দু’কুলে দাড়িয়ে থাকা মানুষদের আনন্দ দেই। তাদের উৎসাহে নৌকাকে দ্রুত সামনের দিকে নিয়ে যাই। এটিই আমাদের পরম পাওয়া।

(এমএস/এএস/অক্টোবর ০৬, ২০২৪)