রূপক মুখার্জি, নড়াইল : আদা বাণিজ্যিকভাবে বস্তা পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে নড়াইল জেলার প্রত্যন্ত বামনহাট গ্রামে। এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়েও নিয়ে যাওয়া যায়।

কৃষি খাতে আধুনিকতার প্রসার ঘটায় বর্তমান সময়ে বাড়ির উঠান কিংবা পতিত, নিচু জলাশয় জমিতে বস্তায় আদা চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। অল্প খরচ আর অধিক লাভ হওয়ায় সাথি ফসল হিসেবে বস্তায় আদা চাষ করছেন নড়াইলের প্রত্যন্ত বামনহাট গ্রামের কৃষানি মল্লিকা রায়। বসতভিটার পাশে নিচু জমিতে ১০ হাজার বস্তায় আদার চাষ করেছেন। সারা বছর পানিতে ডুবে থাকা পতিত জমিতে বস্তার মধ্যে আদার ব্যাপক ফলন হয়েছে। ৯ মাসের এ ফসলে ১০ লাখ টাকা আয়ের আশা তার।

কৃষানি-মল্লিকা রায় জানান, সিমেন্টের ফেলে দেয়া বস্তায় সার মাটি দিয়ে ৫০ গ্রাম করে আদা রোপণ করা হয়েছে। সারাবছর এ জমিতে পানি থাকে। এখানে অন্য কোনো ফসল হয় না। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে আদা চাষ করেছি। আশা করি, ভালো ফলন পাব। সাড়ে ৩ একর জমিতে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা লাভ হবে এমনটি আশা করছি।

এলাকার কৃষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, কৃষানি মল্লিকা রায়ের এ উদ্যোগ দেখে আমি অনেক খুশি। নিজে চাষ করব এবং গ্রামের আশপাশের লোকদের এভাবে আদা চাষ করার পরামর্শ দেব। পরিত্যক্ত জমিতে এদের দেখাদেখি এলাকায় ইতোমধ্যে ছোট-বড় আরও কয়েক বাড়িতে শুরু হয়েছে বস্তায় আদা চাষ।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজীব বিশ্বাস জানান, বস্তায় আদা চাষের জন্য আলাদা করে জমির দরকার নেই। অনেকের বাড়িতে এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করতে পারেন। আবার অতিবৃষ্টি বা বন্যায় ফসল ডুবে নষ্ট হওয়ার ভয়ও নেই। একটি ফসল তোলার পর সেখানে আলাদা করে কোনো সার ছাড়াই আরেকটি ফসল ফলানো যাবে। খরচও তুলনামূলক কম।

তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতিতে একদিকে যেমন মাটিবাহিত রোগের আক্রমণ অনেক কমে যায়, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে বস্তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বাড়ির উঠান, প্রাচীরের কোলঘেঁষে বা বাড়ির আশপাশের ফাঁকা জায়গা অথবা ছাদে যেখানে খুশি রাখা যায়। এর জন্য আলাদা কোনো জমি বা পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। ছায়াযুক্ত জায়গাতেও এ পদ্ধতিতে আদা চাষ করা যায়। সাধারণত বাঁশ বাগানের তলায় কোনো ফসল চাষ হয় না। ফলে জায়গাটা পড়েই থাকে। সেই বাঁশ বাগানে বস্তায় আদা চাষ করা যায় খুব সহজেই।

তিনি বলেন, চাষের পদ্ধতি প্রথমে মাটির শুকনো ঢেলা ভেঙে চেলে নিতে হবে। যাতে ঝুরঝুরে হয়। বস্তায় মাটি যাতে ফেঁপে থাকে সে জন্য ভার্মিকম্পোস্ট ও ছাই মেশাতে হবে। পরিমাণমতো যোগ করতে হবে গোবর সার। মাটি তৈরি হয়ে গেলে বস্তায় ভরে চাষের জন্যে বসাতে হবে ৫০ গ্রামের একটি করে আদা রোপণ করতে হবে। সামান্য পানি দিতে হবে। এরপর বস্তার ওপর ঢেকে দিয়ে রাখতে হবে। এতে মাটিতে আর্দ্রতা বেশিদিন থাকে। অল্প দিনের মধ্যেই কন্দ থেকে গাছ বেরিয়ে আসা শুরু করে। আদা চাষ করতে খরচ কম। আবার রোগবালাই কম হওয়ায় অধিক লাভ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন কৃষি কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলো এখন মাঠ পর্যায়ে বস্তায় আদা চাষের জন্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন বলেও জানান তিনি।

নড়াইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রোকনুজ্জামান বলেন, এ বছর জেলায় প্রায় ৩০ হাজার বস্তায় বারি-২ আদা চাষ হয়েছে। এ পদ্ধতিতে আদা চাষ জনপ্রিয় হওয়ায় এ বছর মোট আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫০ মেট্রিক টন; যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪ গুণ। সাধারণ চাষে প্রতি গাছে সর্বোচ্চ ৮০০ গ্রাম আদা হলেও বস্তায় দেড় কেজি পর্যন্ত আদা ফলানো সম্ভব। সরকারি অনুদানে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উদ্ধুদ্ধ করা গেলে আদা চাষে ব্যাপক সফালতা সম্ভব। এতে করে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে কৃষক ব্যাপক লাভবান হবেন।

(আরএম/এএস/অক্টোবর ০৫, ২০২৪)