একে আজাদ, রাজবাড়ী : দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে রাজবাড়ী পৌরসভার বেশিরভাগ সড়কই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খানাখন্দেভরা এসব সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জনদুর্ভোগ লাগবে দ্রুত সড়কগুলো সংস্কারের দাবি পৌরবাসীর।

পৌর কর্তৃপক্ষের হিসাবে পৌর এলাকার ১০৮ কিলোমিটারের মধ্যে ৬৮ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। সবশেষ ৮ বছর আগে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ প্রকল্পের (ইউজিআইআইপি-৩) আওতায় সংস্কার করা হয় কয়েকটি সড়ক। এরপর আর কোনও কাজ হয়নি। বিটুমিন আর খোয়া উঠে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। এসবে জমে আছে বৃষ্টির পানি। তাই ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। আর প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সংস্কার না হওয়ায় শহরের দুই নম্বর রেলগেট থেকে নূরপুর পর্যন্ত সড়কটি ভেঙে বড় আকৃতির খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া, শহরের গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল সড়ক, বিনোদপুর, সোনাকান্দর চৌরাস্তা, ড্রাই আইস ফ্যাক্টরি ও ভবানীপুরসহ পৌরসভার নটি ওয়ার্ডের বেশিরভাগ সড়কই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল সড়ক দিয়ে দিনের বেশিরভাগ সময়ই রোগী ও স্বজনরা যাতায়াত করে থাকেন। রাস্তার বেহাল দশার কারণে গাড়ির ঝাঁকিতে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাবলিক হেলথ এলাকার বাসিন্দা মানিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের পৌরসভা থেকে ইউনিয়ন ও গ্রামের রাস্তাগুলো অনেক ভালো। পৌরসভার কোনও ওয়ার্ডের রাস্তাই ভালো না। এই মেয়র আসার পর চার আনার কাজও করে নাই। রাস্তাঘাট ভাঙা। এমন অবস্থা যে, হেঁটে যাওয়াও মুশকিল। মানুষ গুঁতা খেয়ে পড়ে যান। গাড়িতে করে হাসপাতালে রোগী কীভাবে নিয়ে যাবেন। রাস্তার যে অবস্থা তাতে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি।’

আরেক পথচারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা, চলা যায় না। যেখানে-সেখানে পুকুরের মতন গর্ত। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা যায় না। রেলগেট থেকে হাসপাতাল এবং ভেতর দিয়ে শ্রীপুর পর্যন্ত রাস্তার করুণ অবস্থা। গাড়ি নিয়ে যাওয়া খুব মুশকিল। মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তার অবস্থা খারাপের কারণে রিকশা, ভ্যান ও অটোতে রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া যায় না। আমরা দ্রুত পৌরসভার সব রাস্তার সংস্কার চাই।’

রিকশাচালক ইসমাইল শেখ বলেন, ‘পৌরসভার রাস্তার বেহাল দশা। আমাদের রিকশা চালাতে কষ্ট হয়। খানাখন্দের মধ্যদিয়ে রিকশা চালালে চাকা টাল হয়ে যায়, চেসিস ভেঙে যায়। আবার ভাঙা রাস্তা দিয়ে ভাড়া নিতে না চাইলে পাবলিক ক্ষেপে যায়। তখন বাধ্য হয়ে ভাঙা রাস্তা দিয়ে যেতে হয়। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ আলী চৌধুরীর সময়ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়নি। আবার তিতু মেয়র হলো; কিন্তু রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে পারলেন না।’

হরিজন পল্লি এলাকার বাসিন্দা দীপ্ত কুমার বলেন, ‘পাঁচ-ছয় বছর আগে ২ নম্বর রেলগেট থেকে গরু হাঁটার রাস্তা মেরামত করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন মেরামত না করাতে রাস্তায় খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যায়। তখন হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয়। আমরা দ্রুত এ রাস্তার সংস্কার চাই।’

বিনোদপুর এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম খায়রু বলেন, ‘২ নম্বর রেলগেট থেকে নূরপুর পর্যন্ত এ রোডে একটি রিকশা যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। এ সড়ক দিয়ে অন্তারমোড় হয়ে পাচুরিয়া, গোয়ালন্দের যানবাহন চলাচল করে। এ রোডের যে অবস্থা, তাতে একটি রিকশা-ভ্যান চলাচলের অবস্থা নেই। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকার শুধু মুখেই উন্নয়ন আর উন্নয়ন বলেছে; কিন্তু বাস্তবে আমরা পৌরবাসী কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া পাইনি।’

রাজবাড়ী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তায়েব আলী বলেন, ‘পৌরসভার রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। প্রচণ্ড জনদুর্ভোগের মধ্যে আছি। আমরা এগুলো উত্তরণের আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমরা বর্তমানে প্রজেক্টভুক্ত হলেও এখনও কোনও ফান্ড পাইনি। আশা করছি, আমরা অনতিবিলম্বে ফান্ড পাব। এরপর আমরা পৌরবাসীর যে আকাঙ্ক্ষা ও সমস্যা আছে, সেগুলো নিরসন করব। পৌরসভাতে প্রশাসক মহোদয় আসছেন। তার নির্দেশনায় সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাজবাড়ী পৌরসভাকে মডেল পৌরসভা হিসেবে রূপান্তরিত করবো।’

(একে/এসপি/অক্টোবর ০৪, ২০২৪)