শেখ ইমন, ঝিনাইদহ : গ্রামীণ সড়কের দু’পাশ দিয়ে বাড়ি-ঘর আর বিস্তৃত মাঠ। এরই মাঝে গড়ে উঠেছে একটি হাট। নাম ‘সপ্তপল্লী’। হাটটি প্রত্যন্তপল্লীর সাতটি গ্রাম নিয়ে গড়ে ওঠাই এই নামে নামকরণ করা হয়েছে। তবে কয়েকবছর আগেও এখানে এই হাটের অস্তিত্ব ছিল না। হঠাৎ-ই এলাকাজুড়ে বাড়ে কাঁচা মরিচের চাষ। সল্পসময়ের ব্যবধানে অধিক মরিচ চাষের খবর ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। এরপর থেকেই স্থানীয় খুচরা বিক্রেতারা সরাসরি কাঁচা মরিচ কিনতে আসা শুরু করে এলাকাটিতে। কৃষকেরাও মাঠ থেকে মরিচ তুলে রাস্তার উপর খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে শুরু করে। এভাবেই মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে এলাকাটিতে গড়ে উঠেছে কাঁচামরিচের হাট। এই হাটে প্রতিদিন বেচা-কেনা হয় প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার কাঁচা মরিচ। হাটটির অবস্থান ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের আশুরহাট,সাপখোলা ও পীড়াগাতি গ্রামের ঠিক মাঝখানে।

জানা যায়, প্রতিদিন বিকাল হলেই শুরু হয় এই হাট। সারাদিন কৃষকরা মাঠ থেকে মরিচ তুলে বস্তায় ভরে নিয়ে আসেন হাটে। এদিকে দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাক নিয়ে পাইকাররা আসেন মরিচ কিনতে। শুধুমাত্র কাঁচামরিচ বিক্রির জন্যই এ হাটটিতে আসেন কৃষক ও ব্যবসায়িরা। মরিচের এই হাটকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক চায়ের স্টল ও হালকা খাবারের দোকান। বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়িদের সার্বিক নিরাপত্তা ও ক্রয়-বিক্রয়ে সহযোগিতা করতে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি মরিচের আড়ৎ। এখান থেকে মরিচ কিনে ব্যবসায়িরা ঢাকা, খুলনা, রংপুর, গাইবান্ধা, পাবনা রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। সপ্তাহের সাতদিনই বসে হাট। খেত থেকে কাঁচা মরিচ তুলেই কৃষকেরা নিয়ে আসেন হাটে। মাঠের ধারেই হাট হওয়ায় কৃষককে বাড়তি পরিবহন ভাড়া গুনতে হয়না।

হাট ঘুরে কৃষক ও ব্যবসায়িদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক কেজি কাচা মরিচের বর্তমান বাজার দর ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। এ বাজারে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকার মরিচ কেনাবেচা হয়। তবে ভারী বৃষ্টিতে মরিচ গাছে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বর্তমানে তা নেমে এসেছে ১৫ থেকে ২০ লাখে।

স্থানীয় বাসিন্দা সজিব হোসেন বলেন, ‘হাটটিতে মরিচ কেনাবেচা বেশি হয়। তাই হাটটি মরিচের হাট নামে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিন এ হাটে লাখ লাখ মরিচ কেনাবেচা হয়। স্থানীয় অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে এই হাটে। প্রতিদিন হাটটি বসার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা সহজে এ হাটে এসে তাঁদের উৎপাদিত মরিচ ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারেন।’

গ্রামের মরিচ চাষি সালাম বলেন, ‘খেত থেকে ১০ কেজি মরিচ তুলে এনে এখানে বিক্রি করলাম। এখানে প্রতিদিন হাট বসার কারণে আমাদের মরিচ বিক্রি করতে সমস্যা হয় না।’

মরিচ ব্যবসায়ী রহিম বলেন, ‘প্রতিদিন বিকালে শুরু হয় মরিচ কেনাবেচা। প্রায় ২০ জন মহাজন এই হাটে মরিচ কিনে ট্রাকে করে ঢাকা,খুলনা,রংপুর,গাইবান্ধা,পাবনা রাজশাহী সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠান। বর্তমানে বৃষ্টিতে মরিচ গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে বেচাকেনা একটু কমে গেছে।’

শৈলকুপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আশুরহাট, সাপখোলা, পীড়াগাতি সহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অধিক পরিমাণে কাাঁচা মরিচের চাষ হয়। আর তাদের ফলনকৃত মরিচ বিক্রির জন্য এলাকাবাসিরা নিজ উদ্যেগে গ্রামের মধ্যে ‘সপ্তপল্লী’ নামে একটি হাট বসিয়েছে। সেখানেই তারা তাদের উৎপাদিত মরিচ বিত্রি করে। এতে পরিবহণ খরচ বেঁচে যাওয়া সহ নানা দিক দিয়ে লাভবান হচ্ছে তারা। বর্তমানে বৃষ্টির কারণে কৃষকদের মরিচ গাছ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় বেচাকেনা কিছুটা কমেছে। কেউ কেউ লোকসানের মুখেও পড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস শুরু থেকেই তাদের নানা পরামর্শ ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। চাষ বাড়াতে কৃষকদের পাশে সবসময় থাকবে কৃষি অফিস।’

(এসআই/এসপি/অক্টোবর ০৩, ২০২৪)