গোপাল নাথ বাবুল


শত অত্যাচারেও বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী, মেরুদন্ডহীন হিন্দুদের জাগরণ ঘটবে না। এই হিন্দুরা দিব্যজ্ঞানে বিশ্বাসী, কিন্তু কান্ডজ্ঞান বলতে এদের কিছুই নেই। এক হিন্দু’র বিপদ দেখলে বাকিরা জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে বিপদকারীর পক্ষে কথা বলতে হবে বলে। ভাবে, সেতো ঠিক আছে, তার তো কিছুই হয়নি, এমনকি তার পরিবারও ঠিক আছে। এই বোধহীন জাতিটা একবারও ভাবে না যে, আজ একজনের বিপদ হল, একই বিপদ কাল তার হতে কতক্ষণ? আমার মনে হয়, এমন একদিন আসবে, এই হিন্দু নামক প্রাণীগুলোকে চিড়িয়াখানায় দেখা যাবে। বিদেশিরা টিকেট কেটে চিড়িয়াখানায় বাঘ-সিংহের সঙ্গে এদেরও দেখে বাড়ি গিয়ে তাদের স্ত্রীদের ইনিয়ে বিনিয়ে বলবে, জানো? আজ চিড়িয়াখানায় হিন্দু নামক এক ধরনের কয়েকটা প্রাণী দেখে এলাম! যাদের একসময় দুনিয়াজুড়ে সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিতি ও সুনাম ছিল। একমাত্র বোধহীন, মেরুদন্ডহীন ও অনৈক্য ছিল বলে কিংবা অন্যের চিন্তা না করে নিজের পাছা নিজে বাঁচাতো বলে তারা ডাইনোসরদের মতো পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে কয়েকটা আছে, যাদের চিড়িয়াখানায় দেখে খুবই প্রীত হলাম। 

কত যে নির্বোধ এ্‌ই হিন্দুরা! কোটা বিরোধী আন্দোলনে অসংখ্য হিন্দু শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিল। তাদের বুঝিয়েছিলাম, ভাই, আপনাদের মাথায় লবণ রেখে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বড়ই খাচ্ছে। পরিকল্পনা করেই দেশটাকে বিপদমূখী করছে। একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আমার কথার প্রত্যুত্তরে কয়েকগুণ মেজাজ দেখিয়ে এক বন্ধু বললেন, আমার মতো বোকা হিন্দুদের কারণে নাকি বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা ৩৬% থেকে এখন ৮% হয়েছে। আরেকটা মেয়ে প্রশ্ন রাখলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা মানুষ আর আমরা কী রোহিঙ্গা’? বারে বারে অত্যাচারিত হয়েও এই জাতটার কোনো হুঁশ হচ্ছে না।

তখন সবেমাত্র বৃটিশদের ফাঁদে পা দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলিম নেতারা দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমন সময় কারো মনে হলো, পূর্ববঙ্গ হতে হিন্দুদের তাড়াতে হবে। শুরু হয়ে গেল, ১৯৪৬ সালে লক্ষ্মীপূজার দিন মুসলিমলীগের সহযোগিতায় নোয়াখালীতে সহিংসতার মাধ্যমে ভয়াবহ হিন্দু নিধন কর্মসূচী। যে কর্মসূচীতে হিন্দুদের হাহাকার, জিঘাংসা, আর্তনাদ, বাঁচার জন্য আকুলতা মিশে রয়েছে। হাজার হাজার হিন্দু খুন হলো, লুঠপাট হলো হাজার হাজার হিন্দু নারীর সম্ভ্রম, সহায় সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বাড়ি-ঘর। শেষে ঠিকতে না পেরে চৌদ্দ পুরুষের বাড়ি-ভিটা ছেড়ে লক্ষ লক্ষ হিন্দু এক কাপড়েই ওপার বাংলায় গিয়ে নিদারুণ কষ্টের শরণার্থী জীবন বেঁচে নিল। ফলে গোলাভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ নিয়ে সুখে থাকা লক্ষ লক্ষ মধ্যবিত্ত বাঙালি হিন্দু নিমিষেই ভিখারীতে পরিণত হলো। ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ নোয়াখালীর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছিলেন, ‘নোয়াখালীর হিন্দুমেধ যজ্ঞ’। বর্তমানে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু-বৌদ্ধদের যে ভয়াবহ পরিস্থিতি, তাতে রমেশচন্দ্র মজুমদারের ভাষা ধার করে এটাকে যদি ‘বাংলাদেশের হিন্দু-বৌদ্ধমেধ যজ্ঞ’ বললে বাড়িয়ে বলা হয়েছে বলে মনে হয় না।

তারপর ১৯৪৭ সালে পূর্ববাংলা হল পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৫০ সালে নোয়াখালীর মতো ঢাকা ও বরিশালে হলো সহিংসতা ও হিন্দু নিধন কর্মসূচী। ওই সময়ের নৃশংসতা কত ভয়ংকর ছিল তা ড. দীনেশচন্দ্র সিংহ রচিত ‘১৯৫০ ঃ রক্তরঞ্জিত ঢাকা বরিশাল এবং’ বইটি পড়লে জানা যাবে। কত নিষ্ঠুরতা ছিল ওই বছরের সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের উম্মাদনা। বইটা পড়লে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। ১৯৬৪ সালে হলো ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। এই সবকিছু ছিল এই ভূখন্ড থেকে হিন্দুদের তাড়ানোর কর্মসূচী। সহিংসতাকারীরা তাদের কাজে সফল হলো। ৪৭-এর ২৯.৭% থেকে হিন্দুর সংখ্যা কমে হয়ে গেল ৭০-এ ১৯.৭%।

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের প্রথম টার্গেট ছিল হিন্দুরা। পাকিস্তানিরা ভেবে বসেছিল, হিন্দুদের কুমন্ত্রণায় পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। ওই সময় গণহারে হত্যা করা হয় হিন্দুদের। গণধর্ষণ করা হয় তাদের বউ-ঝি-দের, লুঠপাট করা হয় তাদের ধন-সম্পদ, সোনা-রূপা, টাকা-কড়ি। ১ কোটি মানুষ ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল হিন্দু। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এক সাগর রক্ত ও লক্ষ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পুর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হলো। কিন্তু হিন্দুদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না। যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই রয়ে গেল হিন্দুদের কষ্ট ও দুর্দশা। থামল না অত্যাচার আর নির্যাতন। স্বৈরাচার ও অত্যাচারী আয়ুব খান সরকারের করা শত্রু-সম্পত্তি আইন বাতিল করা হলো না, শুধুমাত্র নামটা পাল্টিয়ে ‘শত্রু-সম্পত্তি’ আইনকে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ আইন নামে পরিবর্তন করা হলো। তার মানে আয়ুব খান হিন্দুদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শত্রু বানিয়ে তাদের সম্পত্তি গ্রাস করল আর স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বলল, হিন্দুরা খুশিতে নাচতে নাচতে রাষ্ট্রকে তাদের সম্পত্তি অর্পণ করে দিল। তাই নাম দেওয়া হলো ‘অর্পিত সম্পত্তি’। পাকিস্তানিদের ধ্বংস করা রমনা কালীমন্দির পূনঃ নির্মাণ করার কথা বাদই দিলাম, মন্দিরটি হিন্দুদের ফেরতও দেওয়া হলো না। ১৯৭২ সালে সারাদেশের দুর্গাপূজায় একযোগে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হলো। এক সাগর রক্ত দিয়ে কেনা বাংলাদেশে প্রথম হিন্দুরা স্বাধীনতার স্বাদ পেল!

সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাবের কারণে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্ব-পরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে ছিঁটে-ফোটা পাওয়া স্বাধীনতাটুকুও হিন্দুদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হলো। প্রতিটি নির্বাচনের আগে ও পরে হিন্দুরা রাষ্ট্রীয়ভাবে সংঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক আক্রমণের শিকার হতে লাগল আওয়ামীলীগকে ভোট দেওয়ার অপরাধে। এমন এক নিয়ম হয়ে গেছে এই দেশে, আওয়ামীলীগ নির্বাচিত হলেও হিন্দুরা মার খায়, বিএনপি-জামাত নির্বাচিত হলেও হিন্দুরা মার খায়। মোটামুটি রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটলেই হিন্দুরা মার খায়। তাদের মেয়েরা ধর্ষিত হয়। তাদের সহায়-সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য লুঠ হয় অথবা প্রকাশ্যে কেড়ে নেয়া হয়। এমনকি, বিচারে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর জেল হলো, তার জন্যও হিন্দুরা মার খেল এবং প্রাণ দিল। এই ভূখন্ডে হিন্দুদের জন্ম-ই যেন আজন্ম পাপ। নিজভূমে যেন হিন্দুরা পরবাসী। ১৯৭৫, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৮১-তে হিন্দুরা হামলার শিকার হল। জিয়া-এরশাদ আমলে হিন্দুরা প্রকাশ্যে এবং নীরব নির্যাতনের শিকার হতে থাকল। রাষ্ট্রীয়ভাবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস চলতে লাগল। অসহনীয় অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ওই সময় দলে দলে হিন্দুরা সহায়-সম্পদ ফেলে কেউবা পানির দরে বিক্রি করে নীরবে দেশত্যাগ করে ওপার বাংলায় কষ্টকর শরণার্থী জীবন বেছে নেয়। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবারও দারুণভাবে সফল হলো। ১৯৭০-এর ১৯.৭% থেকে ১৯৯১ সালে হিন্দুদের সংখ্যা এসে ঠেকে ১০.৫১%-এ।

এছাড়া, জেনারেল এরশাদ ১৯৮৮ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করে চলমান সাম্প্রদায়িক ধারাকে বিপুল উৎসাহে আরো একধাপ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। ওই এরশাদেরই ঈশারায় প্রথমবারের মতো সর্বপ্রথম ভারতের বাবরি মসজিদ ইস্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে প্রকাশ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সংঘটিত হয়। ৯০ এর গণআন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত খালেদা জিয়ার সরকারের আমলেও দেখা গেল ‘যে লাউ সে কদু’। ১৯৯২ সালের ৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মদদে আবারও বাবরি মসজিদ ইস্যুকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সংঘটিত হয়। মনে পড়ে, ওপরের নির্দেশে কোনো থানা কোনো মামলা পর্যন্ত সে সময় গ্রহণ করেনি। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতা সমানে চলে।

তারপর অনেক আন্দোলন ও ত্যাগ-তিতিক্ষার পর দীর্ঘ ২১ বছর অতিক্রান্তে বঙ্গবন্ধুর যোগ্যকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় বসে আপ্রাণ চেষ্টা করেও পারেননি বাংলাদেশকে অসম্প্রদায়িক কাঠামোতে পরিণত করতে। ২০০১ সালে আবারো দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পড়ে রাষ্ট্রক্ষমতা চলে যায় দেশবিরোধীদের হাতে। আবারও সে পুরানো ধারা। লুটপাট, ধর্ষণ, খুন, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংসসহ গ্রেনেড মেরে নেতা-নেত্রী হত্যার মতো ঘটনা ঘটতে থাকে এবং বিএনপি সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে চলতে থাকে সরব ও নীরব সংখ্যালঘু নির্যাতন-নিপীড়ন। এতো অবিচার-অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে হাজারও দুঃখ-কষ্টকে সঙ্গী করে হিন্দুরা শুধুমাত্র প্রাণ বাঁচানোর তাগিদেই ওপার বাংলায় পালাতে থাকে। এবারও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর টার্গেট পূরণ হয়। ১৯৯১ সালের ১০.৫১% থেকে ২০০১ সালে হিন্দুর সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ৯.৬০%-এ।

২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত খালেদা-নিজামীর জোট সরকারের আমলেও একই ধারা চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে অনেক নাটক মঞ্চায়নের পর একটা ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ক্ষমতায় আসেন জনগণের বহু প্রতিক্ষীত নেতা শেখ হাসিনা। সংখ্যালঘুরা আবার আশায় বুক বাঁধলো। এবার হয়তো আর কোনো সাম্প্রদায়িক অঘটন ঘটবে না।

কিন্তু উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক ঘটনাবলী তদন্তে সুপারিশ সম্বলিত শাহবুদ্দিন কমিশনের রিপোর্টটিকে আলোর মুখ দেখতে না দিয়ে সংখ্যালঘুদের বুঝিয়ে দেয়া হলো যে, তাদের সে আশায় গুড়েবালি। এতে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীও ম্যাসেস পেয়ে গেল। তারা নতুন উদ্যেগে, নতুন কৌশলে শুরু করলো ডিজিটাল হামলা। ২০১২ থেকে ২০২২ এর মার্চ মাস। কক্সবাজারের রামু থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, ভোলার বোরহানউদ্দিন, কুমিল্লার মুরাদনগর, সুনামগঞ্জের শাল্লা, রংপুরের পীরগঞ্জ হয়ে খুলনা। উত্তম বড়ুয়া থেকে রসরাজ, বিপ্লব চন্দ্র বৈদ্য, ঝুলন দাশ আপন, পরিতোষ সরকার হয়ে নারায়ণ সাহা। অধিকাংশই বিনা অপরাধে কারাগারে পঁচে মরছে।

রামুর উত্তম বড়ুয়া তো মরে গেছে নাকি বেঁচে আছে, তার খোঁজ-খবরও সরকারের পক্ষ থেকে অদ্যাবধি নেয়া হয়নি। এসব ঘটনার একটারও আজ পর্যন্ত বিচার হয়নি। সব জায়গায় একই চিত্রনাট্য, একই ডায়লগ, একই নাটক মঞ্চায়ন। কোনো সংখ্যালঘু ব্যক্তির নামে ভূয়া একাউন্ট খুলে অথবা তার ফেইসবুক আইডি যে কোনো কলা-কৌশলে হ্যাক করে তাতে আল্লাহ, রসুল ও ইসলাম ধর্মের নামে অবমাননাকর লেখা লিখে স্কীনশর্ট নিয়ে ঐ সংখ্যালঘু ব্যক্তির নামে ফেসবুকে ভাইরাল করা। তারপর উত্তেজনা এবং বিভিন্ন চতুরতার সাথে মাইকে ডেকে মানুষ জড়ো করে তাদের ক্ষেপিয়ে ঐ ব্যক্তির পাড়া-মহল্লা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুঠপাট, মুর্তি ও মন্দির ভাংচুর, ঘর-বাড়িতে আগুন দেয়াসহ ধর্মের নামে হেন কোনো পৈশাচিক কাজ নেই, যা তারা করে না। যখন মন চায়, এ ধর্মীয় লেবাসধারি লুঠেরা গোষ্ঠী মানবতাকে পিষিয়ে মারে। যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। আর বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা এসে ঠেকে ২০০১ সালের ৯.৬০% থেকে ২০১১ সালে ৮.৫৪%-এ এবং ২০২২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৭.৯৫%-এ।

অথচ উচিত ছিল, এসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের উম্মাদনাকে সমূলে উৎপাটন করে সাম্প্রদায়িক বিষ বৃক্ষের চাষ বন্ধ করা। ওয়াজকারিদের আপত্তিকর ও ধর্মীয় উম্মাদনা সৃষ্টিকারি ওয়াজ, অন্যধর্ম নিয়ে অবমাননাকর ও উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান, অন্যধর্মের মুর্তি, মন্দির ভাঙ্গাকে ধর্মীয় দায়িত্ব বলেও চালিয়ে দেয়া, ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়িয়ে সহিংসতা সৃষ্টির তৎপরতা, এসবই বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া। তা কিন্তু হয়নি। হয়েছে উল্টোটা। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে এখনো পর্যন্ত সমতল-পাহাড়ে আদিবাসি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

সুতরাং বর্তমান বাংলাদেশে এমন অবস্থা হয়েছে যে, এখানে হিন্দু বাঙালি হিসেবে ঠিকে থাকাটাই এখন দূরহ ব্যাপার। এভাবেই ভীত-সন্ত্রস্তভাবে একটা জাতি ঠিকতে পারে না। তাই অনুরোধ জানাচ্ছি, বসে বসে মার না খেয়ে এবার একটু ঘুরে দাঁড়ান। মেরুদন্ড শক্ত করুন। পলায়নপর মনোবৃত্তি থেকে বের হয়ে আসুন। দিব্যজ্ঞান নয়, কান্ডজ্ঞান চাই। প্রতিবাদ করুন, প্রতিরোধ করুন। ভারত বাংলাদেশের হিন্দুদের বাবার দেশ নয়। এই বাংলাদেশই আমাদের দেশ। এটা আমাদের চৌদ্দ পুরুষের দেশ। এখানেই আমাদের যে কোনো প্রকারে ঠিকে থাকতে হবে।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।