শিতাংশু গুহ


বিশ্বখ্যাত টাইম স্কয়ারে এ বছর (২০২৪)-এ দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই প্রথম। এটি একটি ঐতিহাসিক  ঘটনা। বাঙ্গালীর দুর্গাপূজা ইউনিস্কো সাংস্কৃতিক হেরিটেজের অংশ। টাইম স্কয়ারে দুর্গাপূজা এই ঐতিহ্যকে আরো মহামান্বিত করবে। পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে শনিবার ও রবিবার ৫ ও ৬ই অক্টবর ২০২৪, পঞ্চিকায় নির্দিষ্ট পূজা নির্ঘন্টের এক সপ্তাহ পূর্বে। মায়ের পূজা যেকোন সময়ই করা যায়, শ্রীরাম চন্দ্র অকাল বোধনই আধুনিক দূর্গাপূজা। টাইম স্কয়ারে দুর্গাপূজা করার চিন্তাই অচিন্তনীয়, বেঙ্গলি ক্লাব ইউএসএ সেই অসম্ভব সম্ভব করেছে। নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার্সিটিতে দুর্গোৎসব এই ক্লাবই করেছে। এ পূজায় ব্যাপক সাড়া লক্ষণীয়। এই মহৎ কর্মকান্ড যাঁরা সম্পন্ন করছেন, যারা সহযোগিতা করছেন, তাঁরা ইতিমধ্যে ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে গেছেন। 

এবার পূজা এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বাংলদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে ৫৩ বছর ধরেই দেশে হিন্দুরা নিপীড়িত, লাঞ্ছিত ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার। বাংলাদেশে এবার পূজা নিরানন্দ। পূজা হচ্ছে, উৎসাহ ও আনন্দ নেই, বা কম, এবং ভয়ভীতি বিরাজমান। একদল বলছে, পূজা হতে দেয়া হবেনা, হিন্দুরা বাংলাদেশ ছাড়ো। এর অবসান জরুরি। বাংলাদেশের হিন্দু দেবী চন্ডীর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে অসুর দমনে উজ্জ্বীবিত হোন। দেবী দূর্গা আসেন, দেবী অসুর সংহার করেন, ফাঁকে-ফুঁকে কিছু অসুর বেঁচে যায়, এরাই অশান্তি সৃষ্টি করে, মুর্ক্তি ভাঙ্গে, পূজায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে। বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের দুর্গাপূজা থেকে মুর্ক্তিভাঙ্গা শুরু, আজো অবিরাম ধারায় চলছে। কোন সরকারই এটি বন্ধ করতে আন্তরিক ছিলেন না, এখনো নন?

দুর্গাপূজা বাঙ্গালী হিন্দু’র সর্ববৃহৎ অনুষ্ঠান। বাঙ্গালী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে, দুর্গাপূজাও তাই এখন ‘বিশ্বজনীন’ অনুষ্ঠান। ধর্মীয় আবেদনের বাইরেও এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক আবেদন দুর্গোৎসবকে করেছে ‘সর্বজনীন’। দুর্গাপূজার প্রতীকী মেসেজ হচ্ছে, অসুরের বিরুদ্ধে সুরের লড়াই অথবা অসুন্দরের বিরুদ্ধে সুন্দরের যুদ্ধ এবং এ সংগ্রামে সর্বদা সুর, সুন্দর বা সত্য বিজয়ী হয়। দুর্গোৎসবের অন্য দু’টি মেসেজ হচ্ছে, ‘পারিবারিক মূল্যবোধ’ এবং ‘নারীশক্তি’। দেবীদুর্গা পুত্রকন্যা নিয়ে মর্ত্যে আসেন, ক’টা দিন সবাইকে আনন্দে ভাসিয়ে যান। আর তিনি নারীশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে অসুর বধ করেন। পূজা চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরপর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। কীর্তন থাকবে। কলকাতার চিত্রনায়িকা পায়েল আসবেন। স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সর্বক্ষণ পাহারায় থাকবেন। পূজার প্রসাদ ছাড়াও ড্ৰাই খিচুড়ি/লাবড়া থাকবে।

আমাদের মহিলারা ইতিমধ্যে কয়েক হাজার মুড়ির মোয়া, নাড়ু, সন্দেশ তৈরী করে ফেলেছেন। ধুনুটি নাচ, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি প্রতিযোগিতা রয়েছে। দীপ চ্যাটার্জি’র লাইভ কনসার্ট হবে। বিশাল জ্যোতি গাইবেন। নিউইয়র্কের প্রখ্যাত ড্যান্স স্কুল ‘আড্ডা’ (অনুপ দাশ ড্যান্স একাডেমি)’র নাচ হবে শনিবার। ১০জনকে শারদ সন্মান দেয়া হবে, এরা হচ্ছেন: সর্বশ্রী সুশীল সাহা, ডাঃ কালিপ্রদীপ চৌধুরী, ব্রাহ্মণ স্বপন চক্রবর্তী, রথীন্দ্রনাথ রায়, কুমার বিশ্বজিৎ, রতন তালুকদার, ডাঃ দেবাশীষ মির্ধা, প্রবীর রায়, মনোরঞ্জন চক্রবর্তী (মরণোত্তর) এবং শিল্পী তাজুল ইমাম। এই অনুষ্ঠানটি হবে রবিবার। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক এডাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবার সম্ভবনা রয়েছে.বাংলাদেশ, ভারত, নেপালের রাষ্ট্রদূতদের নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও কলকাতা, নেপালের হিন্দুদের মধ্যে এটি ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্যে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।