স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আগে নিয়োগ দেওয়া সাতজন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে দুজন দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাদের জায়গায় অন্য দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এ দুই স্বতন্ত্র পরিচালকও দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। ফলে তাদের জায়গায় ডিএসইতে আবার নতুন দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে বিএসইসি।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি কমিশন সভায় এ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের অনুমোদন হয়েছে। ডিএসইতে নতুন নিয়োগ পাওয়া দুই স্বতন্ত্র পরিচালক হলেন- আইপিডিসি ফিন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমিনুল ইসলাম এবং ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকের সাবেক কান্ট্রি ম্যানেজার শাহনাজ সুলতানা।

আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ডিএসইর সব স্বতন্ত্র পরিচালক পদত্যাগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জরুরি কমিশন সভায় ডিএসইর সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

এ সাত স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে ছিলেন- মালদ্বীপ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে এ এম মাজেদুর রহমান, আর্মি ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডাইরেক্টর জেনারেল- প্রফেসর মেজর জেনারেল (অব.) ড. মো. কামরুজ্জামান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ আর্মির ৪৬ ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মফিজুল ইসলাম রাশেদ, সেন্টার অন ইনটিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (সিরডাপ) রিসার্চ ডাইরেক্টর ড. মো. হেলালউদ্দিন, মেটলাইফ বাংলাদেশের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ হাম্মাদুল করীম এবং বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারী সাইট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, চিফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসার (সিআইএসও) বাংলাদেশ ব্যাংক (লিয়েন) মো. ইসহাক মিয়া।

বিএসইসি থেকে এই সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়ার পর মালদ্বীপ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান কে এ এম মাজেদুর রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নাহিদ হোসেন এবং সেন্টার অন ইনটিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিকের (সিরডাপ) রিসার্চ ডাইরেক্টর ড. মো. হেলালউদ্দিনের নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এ তিনজনকে আইন লঙ্ঘন করে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে।

ডিএসই রেগুলেশন, ২০১৩ এর ৫ ধারার ‘এফ’ উপধারায় বলা আছে, স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো ট্রেকহোল্ডার বা শেয়ারহোল্ডারের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বা ছিল, এমন কেউ ডিএসইর স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না।

এছাড়া ‘জি’ উপধারায় বলা হয়েছে, শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারী কোনো প্রতিষ্ঠানে (মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিসহ) সর্বশেষ তিন বছরের মধ্যে কর্মী বা পরিচালক হিসেবে জড়িত থাকা কেউ স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। আর (জে) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কর্মী ডিএসইর স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না।

ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের ৪.২ এর (ই) এর ৬-এ বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো ট্রেকহোল্ডার বা শেয়ারহোল্ডারের সঙ্গে সর্ম্পৃক্ত আছে বা ছিল, এমন কেউ ডিএসইর স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না। ৭-এ বলা হয়েছে, শেয়ারবাজার মধ্যস্থতাকারী কোনো প্রতিষ্ঠানে (মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিসহ) সর্বশেষ তিন বছরের মধ্যে কর্মী বা পরিচালক হিসেবে জড়িত থাকা কেউ স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন। এছাড়া ১০-এ বলা হয়েছে, কোনো নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী ডিএসইর স্বাধীন পরিচালক হতে পারবেন না।

এমন বিধান থাকার পরেও কে এ এম মাজেদুর রহমান, ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাহিদ হোসেনকে স্বাধীন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। যেখানে মাজেদুর রহমান ও ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন সর্বশেষ তিন বছরের মধ্যে শেয়ারবাজারের মধ্যস্থতাকারী ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার প্রতিষ্ঠানে জড়িত ছিল।

এরমধ্যে মাজেদুর রহমান এ কে খান সিকিউরিটিজে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালক পদে ছিলেন। ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ২০১৩ সালের মে মাস থেকে ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানিতে পরিচালক পদে ছিলেন। আর বিএসইসি যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে, সেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে কর্মরত রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব নাহিদ হোসেন।

ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে কেএএম মাজেদুর রহমান এবং ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাহিদ হোসেন এখন ডিএসইর পর্ষদে রয়েছেন।

দুই স্বতন্ত্র পরিচালক দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ১৮ সেপ্টেম্বর তাদের স্থানে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসী চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার এ এফ নেসারউদ্দিন এবং জেড এন কনসালট্যান্ট’র চিফ কনসালট্যান্ট সৈয়দ জাকেরিন বখত নাসিরকে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। কিন্তু এ দুজনও ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে একদিনের মাথায় জরুরি কমিশন সভা করে তাদের জায়গায় আবার নতুন দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিলো বিএসইসি। এ বিষয়ে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র ফারহানা ফারুকীর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১ সেপ্টেম্বর কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিএসইর সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে দুজন পরবর্তীতে দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পরবর্তীকালে ১৮ সেপ্টেম্বর কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের স্থলে নতুন দুজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ পান। কিন্তু এ দুজনও দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। এজন্য তাদের স্থলে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নতুন দুজন নিয়োগ দেওয়া হলো- জানানো হয় বিএসইসির বিজ্ঞপ্তিতে।

(ওএস/এএস/সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪)