স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : বিজ্ঞানের ভাষায় নিউক্লিয়াসকে কোষের হাওয়ার হাউস তথা শক্তিঘর বলা হয়। তেমনি যশোরে আওয়ামী রাজনীতির ভাষার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির পাওয়ার হাউস বলা হত। সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের দুটি ছাত্রাবাস শহীদ আসাদ হল ও পুরাতন হল তথা শেখ কামাল হল ছিলো সদ্য ক্ষমতাচ্যূত আ'লীগ রাজনীতির শক্তিশালী পাওয়ার হাউজ। শুধু আসাদ হল কিংবা পুরাতন হল নয় অত্র কলেজের দুটি মহিলা হল শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাস ও হামিদা বেগম ছাত্রী নিবাসও এই শক্তি ঘরের মধ্য অন্যতম। এছাড়া শহরের সিটি কলেজের ছাত্রাবাসও এক সময় যশোরে আ'লীগ ঘরোনার রাজনীতিতে দাপট দেখিয়ে। তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে ছিলো যশোর মহিলা কলেজের ছাত্রী নিবাস। বিগত দিনে এই কলেজে ছাত্র রাজনীতি ততটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। মূল শহর থেকে কয়েক মাইল দূরে হওয়ায় যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাস শহরের রাজনীতিতে দৃশ্যমান প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও লেজুর বৃত্তি ছাত্র রাজনীতির বহুল চর্চা ছিলো ওই ক্যাম্পাসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই হল গুলো থেকে দলীয় ও নেতার ব্যক্তিগত প্রোগ্রামে ম্যান পাওয়ার সাপ্লাই দেয়া হত। বিনিময়ে দায়িত্বরত ছাত্রনেতারা পেত দলের সিনিয়র নেতার বাহবা, অর্থ, ক্যাম্পাসে টেন্ডারবাজির সাইসেন্স, জেলা ও ক্যাম্পাস ছাত্র রাজনীতিতে পদ পদমী।

দীর্ঘ বছর আ'লীগের একক শাসন আমলে যশোরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে শহরের গ্রুপিং রাজনীতির প্রভাবে দেখা গেছে দখল পাল্টা দখল। মূলত যশোর শহরের আ'লীগের রাজনীতিতে শক্তিশালী দুটি মেরু কাজ করত। একদিকে ছিলেন স্থানীয় সাংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ গং অন্যদিকে দলের প্রভাবশালী সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার গং। এই দুটি মেরুর আবার বেশ কয়েকটি করে উপ গ্রুপ ছিলো। যে সব উপ গ্রুপের নেতৃত্বে ছিলো জেলা, সদর উপজেলা আ'লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সাবেক বর্তমান নেতা ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি। ফলে ক্যাম্পাস গুলোতে লেজুর বৃত্তি ছাত্র রাজনীতির চর্চা হয়েছে বহুলাংশে। একদিকে গ্রুপবাজি অন্য দিকে দখল পাল্টা দখলের খপ্পরে পড়ে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়েছে হলগুলোতে থাকা আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

শহরের প্রত্যন্ত অঞ্চল কিংবা অন্য জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের দিন ও রাতের অধিকাংশ সময় কেটেছে আ'লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের মিছিল মিটিং করে। হলের দায়িত্বে থাকত প্রতিষ্ঠানের অনিয়মিত, নিয়মিত শিক্ষার্থীরা। তাদের উপরে ছায়া হয়ে থাকত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্থানীয় আ'লীগের প্রভাবশালী ও বিতর্কীত জনপ্রতিনিধিরা। এটি একটি শক্তিশালী সক্রিয় চক্র হিসাবে সু পরিচিত ছিলো। যারা হলের সিট নিয়ন্ত্রণ, ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ফাইলবাজিসহ কলেজের আশে পাশের মেসগুলোর উপর প্রতিনিয়ত কর্তৃত্ব ফলাতো। এই সঙ্গ বদ্ধ চক্রের অত্যাচারে সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ মেস মালিকরা ছিলো অতিষ্ঠ।

জেলার প্রভাব শালী নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকা এই সব ছাত্র ও যুব নেতাদের অধিকাংশ ছিলো মাদকাসক্ত ও বিভিন্ন মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি। কলেজ প্রশাসনকে জিম্মি করে বা চাপ প্রয়োগ করে স্থানীয় গ্রুপিং রাজনীতির সমীকরণে দখল হত কলেজ ক্যাম্পাস ও হলগুলো। নেতাদের আঙ্গা পালনের জন্য একাধিক মামলার আসামিরা হলগুলোর ভিআইপি কক্ষে দিনের পর দিন অবস্থান করত। সিনিয়র নেতাদের পাওয়ার পলিটিস্ক উপভোগ করাতে হলগুলোতে মজুত রাখা হত অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, হাত বোমাসহ দেশীয় অস্ত্র, জি আই পাইব, লাঠিশোটা ও হেলমেড। শহরের গ্রুপিং রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের হেড ও তার কমান মানতে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত দলীয় প্রোগ্রাম, রাজনৈতিক দিবস পালন ও উদযাপনের তথ্য ও ছবি শেয়ার দিতে চাপ প্রয়োগ করা হত সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলগুলোতে কলেজ প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারত না পুলিশ প্রশাসন। কলেজ প্রশাসনের কর্তা প্রভাবশালী নেতার ডিও লেটারে নিয়োগপ্রাপ্ত হত। তাই বাধ্য হয়ে নেতাদের সাঙ্গ পাঙ্গদের দেখভাল ও বিশেষ ব্যবস্থায় হলগুলোতে নিরাপত্তা দিয়ে রাখা হত। পুলিশ প্রশাসন সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে হলগুলোতে তল্লাশির অনুমতি চাইলে আগে ভাগে ছাত্রনেতাদের সতর্ক করত কলেজ প্রশাসন। ফলে হলে লুকিয়ে থাকা অপরাধী চক্র বরাবরই ধরা ছোয়ার বাইরে থাকত।

দূর দূরস্ত থেকে শহরে পড়াশুনা করতে আসা মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারে ছেলেরা কম খরচে থাকা ও খাওয়ার জন্য আগ্রহ সহকারে হলগুলোতে উঠত। হলে উঠার ক্ষেত্রে আবার তাদের যাচাই-বাছাই বা বিশেষ সুপারিশ প্রাপ্ত হতে হত। অনেক শিক্ষার্থী তাদের পারিবারিক রাজনৈতিক মতাদর্শ লুকিয়ে হলে ছিট নিত। মনে না চাইলেও বাধ্য হয়ে টোকাই শ্রেনির নেতার পিছনে ধরতে হত পাল্টা স্লোগান। নিয়মিত বড় ভাইদের সাথে ক্যাম্পাসে মারামারি করাসহ বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে মাঝে মধ্য মাদক সেবনকরা সহ প্রিয়তমাকে দিতে হত ক্যাম্পাস বাড়তি নিরাপত্তা ও বিশেষ সুবিধা।
কথিত আছে শহরের মাইকেল মধুসূদন কলেজের হাবলা চত্বরে বসে গাঁজা সেবন করেনি এমন কোনো বর্ডার ছিলো না আসাদ হলে। আবার ফিন্যাস ও মার্কেটিং বিভাগের ওয়াশরুমের কোণে প্রিয়তমাকে আলিঙ্গন করেনি এমন কোনো ছাত্রনেতা ছিলো না ক্যাম্পাসে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হল গুলোর নামে নানা সময় নানা রকম অভিযোগ ছিলো। যশোর বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ুর রহমান হল বরাবরই সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশিদের আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা, মুক্তিপণ দাবি করাসহ গাঁজার চারার জন্য আলোচনায় ছিলো। সেখানকার সাবেক ছাত্রলীগের নেতারা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী রিয়াদ হত্যাসহ হল ডাকাতির ঘটনায় সারাদেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচিত সমালোচিত ছিলো। ভিসির সাথে দহরম মহরম সম্পর্কের কারণে বারবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসে শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাস নামে একটি হল রয়েছে। যে হলের নেতৃত্বে ছিলো আ'লীগের দুই গ্রুপের প্রভাবশালী দুই নেত্রী। নানা বিতর্কীত কর্মকা-ের জন্য ক্যাম্পাসের শেখ হাসিনা ছাত্রী নিবাস ছিলো মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। পরবর্তীতে এই ক্যাম্পাসে আরও দুটি নতুন ছাত্রাবাস নির্মাণ করা হয়েছে। মোট ১২শ আবাসিক শিক্ষার্থী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে ক্যাম্পাসটিতে।

এদিকে শহরের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে অবস্থিত ৭২ ছিট বিশিষ্ঠ তিন তলা শহীদ আসাদ হলটি বরাবরই দখল পাল্টা দখলের মধ্যে আলোচনায় ছিলো। মূলত এই হলটির দায়িত্বে থাকা ছাত্রনেতাদের ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখার গুরু দায়িত্ব পড়ে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবিরের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই হলটি দখলে নেন বর্তমান জেলা আ'লীগের প্রভাবশালী নেতা শাহীন চাকলাদারের অনুসারীরা। আসাদ হলসহ পুরাতন হল একক নিয়ন্ত্রণে নেয় চাকলাদার অনুসারীরা। তখন জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ছিলো আরিফুর হোসেন রিয়াদ ও বিপুল হোসেন রিয়াদ। সে বছর কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসে রওশন ইকবল শাহী ও তৌহিদুর রহমান। সাবেক ছাত্রনেতারা বলেন এই দুই ইউনিটের তৎকালিন কমিটিই যশোরে ছাত্রলীগের ইতিহাসে সেরা ও শক্তিশালী ইউনিট।

ক্যাম্পাস দখলের পর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে শাহীন চাকলাদার অনুসারি রওশন ইকবল শাহী ও জিসান আহমেদ জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসে। কলেজে কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে নূর ইসলাম। তখন থেকেই আসাদ হল সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের ভিতরে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ক্যাম্পাস এলাকায় প্রতিনিয়ত মারামারি, কলেজ প্রশাসনকে জিস্মি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর, মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া, মেয়েদের সাথে অশোভন আচারণ , ক্যাম্পাসে, হলের রুমে ও ডাইনিং এর ছাদে ওপেন মাদক সেবন করা ছিলো নিত্য দিনকার ঘটনা। হলের ছেলেদের ভয়ে আসাদ গেট দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী চলাচল করতে সাহত পেত না। ক্যাম্পাসের নেতৃত্বে থাকা ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে কলেজের হিরক জয়ন্তী পালনের জন্য উঠানো টাকা আত্মসাৎ এর খবরও শোনা যায়। সর্বশেষ শাহীন চাকলাদারের অনুসারিদের হটিয়ে ক্যাম্পাস ও হল দখল করে স্থানীয় সাবেক সংসদ কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারীরা। ক্যাম্পাস দেখভালের দায়িত্ব পড়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ও যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের এক অংশের উপর।

এসময় দুটি হলই তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। হলে বর্ডার কম থাকলেও স্থানীয় টোকাইদের যাতয়াত ছিলো নিয়মিত। এই সময় জেলার সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার কেশবপুর আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কারণে শহরে ছাত্র রাজনীতিতে তার প্রভাব কমতে থাকে। এর মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শাহীন চাকলাদার পরাজয় বরণ করে পুনরায় শহরের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়। এসবের মধ্যে জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে রদবদল ঘটে গেছে। যশোরের সন্তান লেখক ভট্টাচার্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় তার অনুসারি সালাউদ্দীন কবির পিয়াস ও পল্লব জামান জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসে। কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বহাল থাকে। সর্বশেষ আসাদ হল থেকে গভীর রাতে মহিলা হলের ছাত্রীদের নাম ধরে ডাকাডাকি করার কারণে আলোচনায় আসে। এই ঘটনার পর পুনরায় জেলা আ'লীগের অনুসারিরা ক্যাম্পাস ও আসাদ হল দখল করে নেয়।

সর্বশেষ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে হল ভাংচুর ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার মিথ্যা গুজবে আলোচনা সমালোচনায় ক্যাম্পাসটি। অন্যদিকে ছাত্রী নিবাসে থাকা এক আলোচিত ছাত্রলীগ নেত্রীর জেলার রাজনীতিতে অদৃশ্য প্রভাব বিস্তার করাকে কেন্দ্র করে সমালোচনায় থাকে... সিট বিশিষ্ট ছাত্রী হল দুটি। কথিত আছে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর হট কানেশন ছিলো কেন্দ্রীয় আ'লীগ, জেলা আ'লীগ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ প্রশাসনের একাধিক উচ্চ পদস্থ ব্যক্তির সাথে। যার প্রভাবে সে শহর জুড়ে ছাত্রলীগ নেত্রী পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াতো এবং হলে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর খবরদারি করত। এই সময় ওই ছাত্রলীগ নেত্রী ও মহিলা হলদুটি চাকলাদার অনুসারিদের দখলে ছিলো। ফলে ছাত্রলীগের গ্রুপিং রাজনীতির কারণে প্রায় নানান গুঞ্জন শোনা যেন ছাত্রলীগ নেত্রী গং এর বিরুদ্ধে।

এদিকে যশোর সিটি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ্য প্রভাব ছিলো জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকা রিয়াদ- বিপুল কমিটির সময়। ওই প্রতিষ্ঠানে একটি মাত্র ছাত্রাবাস ছিলো। যা নিয়ন্ত্রণ করত কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা। গভীর রাতে মণিহার এলাকায় ছিনতাই, হলে মান্ষুদের জিম্মি করে অর্থ আদায়, সিট বাণিজ্য, কলেজের উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডারবাজিকরা সহ নারী কেলেঙ্কারির ঘটনার জন্য আলোচিত সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ। নানা অভিযোগ ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে ক্রান্তিকাল পার করতে থাকা ছাত্রাবাসটি করোনাকালিন সময়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তখন কলেজ ক্যাম্পাস ও হল জেলা আ'লীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারিদের দখলে ছিলো। করোনার পর ওই হল শ্রেণি কক্ষ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে কলেজ প্রশাসন। তবে ক্যাম্পাসে লেজুরবৃত্তি ছাত্র রাজনীতির কালচার ধরে রেখেছে নবীণ প্রবীণ ছাত্রলীগ নেতারা।

কলেজের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি মহিলা কলেজ, আব্দুর রাজ্জাক মিনিপ্রিন্সিপল কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, আল হেরা ডিগ্রী কলেজ, যশোর কলেজের কতিপয় শিক্ষার্থীরা জেলা আ'লীগের রাজনীতির লেজ আকড়ে ধরে চললেও ক্যাম্পাসে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। মহিলা কলেজে ছাত্রী নিবাস থাকলেও ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির সক্রীয় ইউনিট না থাকার কারণে বিগত দিনে লেজুরবৃত্তি ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। এই কলেজের হলে কলেজ প্রসাশনের আদেশে সিট বরাদ্ধ নেওয়া হত এবং শহরের রাজনীতিতে ম্যান পাওয়ার হিসাবে ব্যবহার হওয়ার জন্য বাধ্য করা হত না।

তবে, শহরে অবস্থিত শিক্ষা কার্যক্রম সংশিষ্ট অন্য অন্য প্রতিষ্ঠান যেমন মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, কোচিং সেন্টার, শিল্প সংস্কৃতি সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীরা সক্রীয় ছাত্র রাজনীতি থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশে পাশের মেসগুলো থাকলে তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেতে বাধ্য করা হত। বিগত সরকারের শাসন আমলে দলীয় প্রোগ্রামে না গেলে মারপিট, লুটপাট ও মেস মালিককে হয়রাণির মত ঘটনাও অহরহ ঘটেছে।

চলতি বছরের জুলাই-আগষ্ট মাসে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার একদফা দাবির মুখে একটানা ১৬ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা আ'লীগ সরকারের পতনের পর যশোরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকাংশে আন্দোলনে একাগ্রতা ঘোষণা করা ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে একটানা এক মাস রাজপথ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকা ছাত্রদের দখলে। কলেজ প্রশাসন হলগুলোর পুরাতন বর্ডারের তালিকা বিলুপ্ত করে নতুন করে বর্ডার ভর্তির কার্যক্রম চলমান রেখেছে। এর মধ্যে দীর্ঘ বছর ভার্সিটি ও কলেজ ক্যাম্পাসে গা ঢাকা দিয়ে থাকা জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে। কলেজ প্রশাসনের সাথে সক্ষতা গড়ে তুলতে দলের সিনিয়র নেতা কর্মীদের সুপারিশ কাজে লাগাচ্ছে। ভার্সিটি ও কলেজ ইউনিট শক্তিশালী করতে কর্মী সংগ্রহ, ক্যাম্পাস ও হল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ক্যাম্পাসে লেজুরবৃত্তি ছাত্র রাজনীতি ও সরকারি দলের রিজার্ভ পাওয়ার হাউজ তথা ম্যান পাওয়ার হিসেবে থাকতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধ্য করার এই কালচার সম্পর্কে শহীদ আসাদ হলের সাবেক এক আবাসিক শিক্ষার্থী নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, কলেজের হলে থাকতে হলে আগে ছাত্রলীগের বড় ভাইদের সাথে রাজনীতি করে বেড়াতে হত। যারা হলের নেতৃত্ব দিত তারা ঠিকমত খাবারের টাকাও দিত না। হলে পড়াশুনা করার মত পরিবেশ ছিলো না।

জুলাই ছাত্র জনতার বিপ্লবে বিজয়ের পর নতুন করে শহীদ আসাদ হলে হলে সিট পাওয়া শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগে হলে সিট পেতে হলে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে হত। প্রতিনিয়ত মিছিল মিটিং করতে যেতে হত। এখন আর পড়ার টেবিল ছেড়ে নেতার পিছনে পিছনে ঘুরতে হচ্ছে না। হলে সিট পেতে বড় ভাইদের বিশেষ সুপারিশ লাগছে না।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খন্দকার রুবাইয়াত বলেন, ক্যাম্পাসের পরিবেশ সব মিলিয়ে আগের চেয়ে অনেক ভালো। ক্যাম্পাসে লেজুরবৃত্তি ছাত্র রাজনীতি নেই। হলগুলো মেধাবী শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা করার জন্য উপযোগী হয়েছে।

সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রভাষক ও হোস্টেল সুপার(সংযুক্ত ছাত্রাবাস) মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, নতুন ভাবে দুটি হোস্টেলে ছাত্র ভর্তির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এবার যাচাই বাছাই করেই সিট দেওয়া হবে। কোনো রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরাই সিট পাচ্ছে। কলেজ প্রশাসন নিজেই হোস্টেলগুলো নিয়ন্ত্রণ করবে।

(এসএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪)