রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইনিয়নের তুজুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ মৌলুদা খাতুন ও তুজুলপুর জিসি মাধমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম এর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ জানানো হয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে স্থানীয় ডিউক ও আলমগীর মোল্লাসহ কয়েকজনের স্বাক্ষরিত অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ৩২ শতক জমির উপর নির্মিত হয়েছে তুজুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে রয়েছে তুজুলপুর-আখড়াখোলা সড়ক। ৫ মাস আগে জমি পরিমাপ করে রাস্তার পূর্ব পাশে ফটক নির্মাণ ও চারিধারে প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। মাপ জরিপকালে বিদ্যালয়ের পিছনে বসবাসকারি একজন জমিদাতার চলাচলের সুবিধার্থে আপোষমতে উত্তর দিকের জমি ছেড়ে দক্ষিণ দিকের জমি নিয়ে প্রাচীর সোজা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

এছাড়া কয়েকটি বড় ফলন্ত নারিকেল ও মেহগণি গাছ বাঁচিয়ে রাখতে প্রধান ফটক ও প্রাচীর নির্মাণের জন্য মেইন রোড সংলগ্ন দুই হাত জায়গা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। এ সবের কোন কথা রাখেননি প্রধান শিক্ষক। এ ছাড়া উত্তর পাশের প্রাচীর দিতে প্রয়োজন না হলেও আলমগীর মোল্লাকে একটি বড় কাঁঠাল গাছ কাটতে বাধ্য করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোক হওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনের কথাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিজের স্থানীয়দের মতামতকে মূল্যায়ন না করে ইচ্ছামত কাজ করে গেছেন। এমনকি অকশান না হওয়া মেইন রোডের পাশের ছয়টি নারিকেল গাছ ও একটি মেহগনি গাছ কেটে মাটিতে ফেলে রাখা হয়েছে কয়েক মাস যাবৎ। যা খুবশীঘ্রই উঁই লেগে নষ্ট হয়ে যাবে।

এ ব্যাপারে তুজুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ মৌলুদা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের জমির মাপ, গাছ বাঁচাতে জমি ছেড়ে না দেওয়া সবকিছু সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এক্তিয়ার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ি তিন হাজার ৩৩৮ টাকা ছয়টি নারিকেল গাছ ও একটি মেহগনি গাছের সর্বনিম্ন দর ধার্য করা হয়। কেউ ওই দামে কিনতে রাজী না হওয়ায় তা কেটে বিদ্যালয়ের মাঠে ফেলে রাখা হয়েছে। ৩২ শতক জমি যেভাবে সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) অফিসের সার্ভেয়র মেপে গেছেন সে অনুযায়ি প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারও সমন্বয় করা হয়। যদিও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ওই কমিটি বাতিল করা হয়েছে।

এদিকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট দায়ের করা আনিসুর রহমান ও শাহাজান কবীরের অভিযোগ থেকে জানা গেছে, এ বিদ্যালয়টি ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। ২০১০ সালে যোগদানকারি প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম সাবেক ম্যাপ অনুযায়ি উত্তর -দক্ষিণে লম্বা(প্রথম ফটক-৪০ ফুট ও পিছনের ফটক-৩৩ ফুট ) জনসাধারনের চলাচলের পূর্ব -পশ্চিমের ৩০ ফুট চওড়া জায়গা দখল করে তুজুলপুর জিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুটি ফটকটি নির্মাণ করেছেন। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলাকালিন সময়ে ফটক খোলা থাকলে জনসাধারণে ওই রাস্তা ব্যবহার করতে পারে। অন্য সময় জানসাধারণকে ঘুরে অন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। ফলে তাদের দুর্ভোগ বাড়ে। বিষয়টি গ্রামবাসির পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বলেও কোন লাভ হয়নি। এ ছাড়া চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সহকারি প্রধান শিক্ষকসহ চারটি পদে বিশেষ সুবিধার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২২ জুন ল্যাব অপারেটরসহ দুইজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ফলে যোগ্যতা থাকার পরও বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে দূরবর্তী লোকজনদের নিলেও প্রধান শিক্ষক স্থানীয়দের নেননি। এক্ষেত্রেও তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনের প্রভাব খাটিয়েছেন।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম বলেন, প্রাচীরের ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির তৎকালিন সভাপতি ও নিয়োগের ব্যাপারে পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া একটি পদে আবেদন করেও তুজুলপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার কেউ না আসায় ওই পদে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে সদ্য বাতিল হওয়া তুজুলপুর জিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি কলেজ শিক্ষক সেলিম রেজা তরুন বলেন, তার সময়কালে বিদ্যালয়ে কোন অনিয়ম হয়নি।

(আরকে/এএস/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪)