সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : বাগেরহাটে গত তিনদিনের অবিরাম ভারী বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৭টি উপজেলার ৭ হাজারর অধিক মাছের ঘের। এবারের বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে গলদা চিংড়ি উৎপাদন এলাকা জেলার ফকিরহাট, চিতলমারী, মোল্লাহাট ও বাগদা চিংড়ি উৎপাদন এলাকা মোংলা, রামপাল, বাগেরগাট সদর ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার চাষীরা। এতে করে প্রাথমিক হিসেবে রফতানী পন্য গলদা-বাগদা চিংড়িসহ চাষীদের শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য বিভাগের হিসেবে বাগেরহাট জেলায় ৬৮ হাজার ১৬৫ একর জমিতে ৭৬ হাজার ৭৩০টি মাছের খামার রয়েছে। এরমধ্যে গত তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে প্রাথমিক হিসেবে ৭ হাজারর অধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে।

মোল্লাহাট উপজেলার কাহালপুর গ্রামের গলদা চিংড়ি চাষী নাসির মিয়া জানান, আমার ৫০ বিঘার দুটি ঘেরসহ আশপাশের সব গলদা চিংড়ি ঘের অবিরাম ভারী বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে নদী খারের সাথে একাকার হয়ে যায়। ঘেরের পাড়ের উপর হাটু পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নেট, কচুরিপানা ও ঘাষ দিয়ে মাছ ভেসে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টাও বিফলে গছে। এভাবে এলাকার মানুষের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে।

চিতলমারী উপজেলা সদরের চিংড়ি চাষী মুমিনুল হক টুলু জানান, এলাকার মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস্য গলদা চিংড়ি ও ঘেরের পাড়ে সবজি চাষ। ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করি আমরা। তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে ঘেরগুলো ডুবে চিংড়ি মাছ বের হয়ে যাবার কারনে আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। পানি টানার সাথে সাথে ঘেরের পাড়ের সবজি গাছও মরে যাবে। এই অবস্থায় সরকারের কাছে ক্ষতিগ্রস্থ চিংড়ি চাষীদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান তিনি।

মোংলা উপজেলার খলিলুর রহমান নামের আরেক বাগদা চিংড়ি চাষী জানান, আগামী কয়েক দিন পরেই শুরু হবে বাগদা ও গলদা চিংড়ি আহরণ মৌসুম। এই অবস্থায় বৃষ্টির পানিতে ঘের ডুবে একাকার হয়ে গেছে। হঠাৎ দূর্যোগ আমাদের চিংড়ি চাষীদের পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমার ৪টি চিংড়ি ঘেরের প্রায় কোটি টাকার মাছ বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে।

বাগেরহাটের মাছের ঘের ভেসে যাওয়ার ক্ষয়ক্ষ্তির এতথ্য নিশ্চিত করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে এখন প্রতিবছরই বন্যা ও অতি বৃষ্টির পানিতে বাগেরহাটে চিংড়িসহ ঘেরের মাছ ভেসে যাচ্ছে। আবার শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে মাছ মারা যাচ্ছে। এই ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে বাঁচতে খামারীদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে ঘেরের গভীরতা ও ঘেরের পাড়ের উচ্চতা বৃদ্ধির। খামারীরা প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে এর কোন বিকল্প নেই।

(এস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪)