গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এসএম জিলানীর গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগের হামলায় ১ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন। এ সময়  কমপক্ষে ১০ টি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা ঘোনাপাড়া মোড়ে এ হামলা- ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম শওকত আলী দিদার (৪০)। তিনি আম্পার পেশায় নিয়োজিত বলে তার কাছ থেকে উদ্ধারকৃত একটি ভিজিটিং কার্ড থেকে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।

নিহত শওকত আলী দিদার স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান।
আহত জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না, রাজু বিশ্বাস, মাহাবুব খান মুরাদ, লিন্টু মন্সী, গোপালগঞ্জের সালমান সিকদার, সুজন সিকদার, সবুজ সিকদার, ঢাকার মতিঝিল এলাকার নাসির আহমেদ মোল্লা, বাদশা মোল্লা, নিশান, হাসান, মাতুয়াইলে আলাউদ্দিনসহ ১৬ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ও ৩ জনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানাগেছে।

আহতরা সবাই বিএনপি ও সেচ্ছাসেবক দলের ঢাকা ও গোপালগঞ্জ নেতা-কর্মী। আহত রোমান মোল্লা ঘোনাপাড়া বাজারের কাচামাল ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগের সমর্থক।
এছাড়া গোপালগঞ্জের সময় টিভির ক্যামেরা পার্সন এইচ, এম মানিক মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে বেধরক মারপিট করে।

এদের মধ্যে গুরুতর আহতবস্থায় এসএম জিলানী ও তার স্ত্রী রওশন আরা রত্না এবং ঢাকার সেচ্ছাসেবক দলের নেতা বাদশার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের কতব্যরত চিকিৎসক।

গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান বলেন, শুক্রবার বিকেলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বেদগ্রাম মোড় অনুষ্ঠিত বিএনপির একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভা শেষে এসএম জিলানীর গাড়ি বহর নিয়ে গ্রামেরবাড়ি টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্য রওনা হন। তাদের গাড়ি বহর সদর উপজেলা ঘোনাপাড়া পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২শ থেকে ৩শ নেতা কর্মী মাইকিং করে দেশি অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সড়কে ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। গাড়ি ভাংচুর করে এবং নেতা কর্মীদের উপর অর্তকিত হামলা চালায়। এতে শওকত আলী দিদার নিহত ও বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ৩০ জন নেতা কর্মী আহত হন।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিকদার শহিদুল ইসলাম লেলিন বলেন, আমরা বেদগ্রামের মোড়ে শান্তিপূর্ণ পথসভা শেষ করে সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর বাবা মায়ের কবর জিয়াতের উদ্দেশ্য টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলাম। ঘোনাপাড়া মোড়ে পৌঁছালে গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিন মোল্লা, গোবরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি জিকরুল ফরিক, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আলিমুজ্জামান ও হাসান মোল্লার নেতৃত্ব গাড়ি বহরে হামলা করা হয়।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ফারুক আহমেদ বলেন, আজ বিকেল সাড়ে ৫ টায় আহত হয়ে কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও তার স্ত্রী রওশন আরা রত্না সহ ১৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদের অধিকাংশের মাথাসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে দেশীয় অস্ত্রের কোপ রয়েছে। তাদের সাবইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক। ৭২ ঘন্টা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত শংকামুক্ত বলা যাবেনা। এদের মধ্যে ৩ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত ঘোনাপাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা আলীমুজ্জামান বলেন, এসএম জিলানীর গাড়ি বহর ঘোনপাড়া অতিক্রম করার সময় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত ব্যানার ছিড়ে পদ দলিত করা হচ্ছিল । এ বিষয়টি জানিয়ে মাইকিং করা হলে স্থানীয়রা সংগঠিত হয়ে এটি প্রতিরোধ করে। তখন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, বিএনপির নেতা কর্মীরা গাড়ি বহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিল। কেন এ ঘটনা ঘটেছে তা এখনো জানাযায়নি। তবে কেউ কেউ বলছে সেখানে ব্যানার টানাটানি নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঘোনাপাড়ার অদূরে দোলা পাম্পের বিপরিত পাশ থেকে শওকত আলী দিদার নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মরদেহের সুরাতহাল করা হচ্ছে। এরপর পোস্টমর্টেম করার জন্য মরদেহটি গোপালগঞ্জ আড়াই শ’বেড জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে। আমাদের জানামতে ১৩ জন আহত হয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

(এমএস/এএস/সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৪)