মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারে সদ্য যোগদান করা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপটে জেলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির উপর  হামলাকারীদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, হামলাকারীরা কেউ রেহাই পাবেনা। পুলিশ সুপার ৫ আগস্ট পরবর্তী জেলা জুড়ে মামলা প্রসঙ্গে বলেন, ৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে পুরো জেলায় মোট ১৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ১২ জনকে গ্রেফতার হয়েছে।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভা কক্ষে নবাগত পুলিশ সুপারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান, জেলা পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

পুলিশ সুপার বলেন, ৫ আগস্ট বাংলাদেশের অনেক জায়গায় পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। একারণে কমবেশি আতঙ্কে পুলিশ। সেই আতঙ্ক থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সাংবাদিকদের প্রচারণা। তাহলেই ফিরে পাবে পুলিশ তাঁর মনোবল। তাহলেই আগের মতোই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে আগের মতো বলতে পুলিশ হবে এখন জনবান্ধন হবে, চাঁদাবাজ হবেনা, দখলদার হবেনা আমি আশ্বস্ত করছি আপনাদের (সাংবাদিকদের)।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহসিন এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদর্শন কুমার রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরোয়ার আলম। সাংবাদিকদের মধ্যে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আহবায়ক, বকসি ইকবাল আহমদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এনটিভির স্টাফ করেসপন্ডেন্ট এসএম উমেদ আলী সহ অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।

মতবিনিময় সভায় ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোনেন বলেন, হাতেগোনা কিছু ছাত্রই কিন্তু আন্দোলন করেছে বিষয়টা এমন না। এই প্রেক্ষাপটটা অনেক পুরনো। মানুষের ক্ষোভ, বৈষম্য, এর রেষই কিন্তু ৫ আগস্ট। অর্থাৎ ছাত্রদের ভাষায় আমাদের বলতে হয় ২৪ শে জুলাই। মানুষের ভিতর কিন্তু একটা পাথর চাপা দিয়ে আছে। কেউ কথা বলতে পারতনা, কেউ কাজ করতে পারতনা, কেউ লিখতে পারতনা। সাংবাদিক কী বলবে সেটাও বলতে পারতনা। কতিপয় সাংবাদিক যাদেরকে মানুষ বিবেক মনে করত, তারা ছাত্রদের হত্যা করার জন্য উৎসাহিত করেছে আমরা সেটাও দেখেছি। আবার এরকম সাংবাদিকও আছেন যারা ছাত্রদের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য তাদের পাশে থেকেছে। এরকম একটা খারাপ এবং ঘোলাটে পরিবেশ থেকে আমরা রেহাই পেয়েছি। এটার একটা স্প্রিট নিয়ে আমরা বৈষম্য দূর করব। বৈষম্যটা কোন জায়গায়? বৈষম্যটা আমাদের যেসমস্ত সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান আছে, এগুলো কিছু ব্যক্তি, গোষ্ঠী, কিছু রাজনৈতিক দলের পকেটে ছিল। তার মধ্যে পুলিশ অন্যতম।

তিনি সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করে বলেন, ৫ আগস্টের আগে ছিল রাতের বাহিনী, দখল ছিল, চাঁদাবাজ ছিল, লুটেরা ছিল। এই ৫ আগস্ট যে স্প্রিট নিয়ে আমাদের কোমলমতি শিশুরা রাস্তায় নেমেছিল, তারা যে আমাদের স্বাধীনভাবে চলার জন্য, মুক্তভাবে কথা বলার যে সুযোগটা তৈরি করে দিয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, তারা জীবনটা বিলিয়ে দিয়েছে, তাদের রক্তের বিনিময়ে আমার কিন্তু এই দখলদারদের এসমাজে কোন ঠাই দেবোনা। পুলিশ এবিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ।

তিনি বলেন, পুলিশ আগে একটা লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করত। বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। এই নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পলিটিক্যাল লেজুড়বৃত্তি থেকে বেড়িয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এবং সেভাবে কমিটমেন্ট নিয়েছে। এসব বাস্তবায়নে জেলা পুলিশের পাশে দাঁড়াতে সাংবাদিকদের সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এসময় পুলিশ সুপার আরও বলেন, আপনারা আগামীতে ঘরে ঘুমাবেন আর পুলিশ রাস্তায় খাকবে এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

এর আগে চলতি মাসের ৭ সেপ্টেম্বর বিদায়ী পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে আনুষ্ঠানিক দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন জেলা পুলিশের নবাগত এই পুলিশ কর্মকর্তা।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪)