একে আজাদ, রাজবাড়ী : রাজবাড়ীতে বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাট চাষের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে, বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ার ফলে পাটের আবাদ থেকে শুরু করে পচানো পর্যন্ত সেচের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে পাটের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বাজারে লাভজনক দাম না পাওয়ায় কৃষকরা হতাশ।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলার পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে। তবে আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন, কিন্তু উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৫৪৭ মেট্রিক টন।

কৃষকরা জানান, এপ্রিল মাসে পাটের বীজ বপন করার সময় বৃষ্টিপাতের অভাব ছিল। সেচের মাধ্যমে পাটের বীজ বপন করতে হয়, যা তাদের জন্য অতিরিক্ত খরচের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টিপাতের অভাবে পাটের চারা বাঁচিয়ে রাখতে চার থেকে পাঁচটি সেচ দিতে হয়। পাট পরিণত হওয়ার পরও পানির অভাব দেখা দেয়। অনেক কৃষক দূর-দূরান্ত থেকে সেচের মাধ্যমে পানি নিয়ে পাট জাগ দেন। এতে পাটের রং কালো হয়ে যায় এবং বাজারে দাম কমে যায়।

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মুলঘর ইউনিয়নের কৃষক কাশেদ মণ্ডল জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে পাটচাষ করেছিলেন। শ্রমিকের জন্য খরচ হয়েছে ৩৩ হাজার টাকা এবং পরিবহন খরচও বেড়ে গেছে। ফলে বাজারে পাট বিক্রি করে তার খরচও উঠছে না।

তিনি জানান, গত বছর আট বিঘা জমিতে পাটচাষ করে লাভ হয়নি, তাই এবার তিনি পাটচাষ কমিয়ে দিয়েছেন এবং আগামী বছরে আরও কমাবেন।

পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের কৃষক কার্তিক শীল জানান, তিনি ৯ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। প্রত্যেক জমিতে ৪ বার সেচ দিতে হয়েছে। পানির অভাবে পুকুরে সেচ দিয়ে পাট জাগ দিয়েছিলেন। ফলে পাটের রং খারাপ হওয়ার কারণে দাম কম পাচ্ছেন। তিনি আগামী বছর থেকে পাটচাষ বন্ধ করে অন্য ফসল চাষ করার পরিকল্পনা করছেন।

রাজবাড়ী বাজারের পাট ব্যবসায়ী গদাধর রায় জানান, এ বছর প্রতিমণ পাট ২ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ভালো পাট ৩ হাজার টাকা মণ এবং খারাপ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা পাট কিনে রাখছেন এবং মিল খুললে সেখানে পাঠাবেন বলে জানান।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি মাঠে গিয়ে পাটের উৎপাদন পর্যবেক্ষণ করেছেন। খরার কারণে পাটের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়েছে। রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দে পাটের ফলন কম হয়েছে। তবে বালিয়াকান্দি, পাংশা ও কালুখালীতে ভালো ফলন হয়েছে। পাট জাগ দেওয়ার সময় কালো পানির কারণে পাটের রং কালো হয়ে গেছে। ভালো পাট ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এ বছর পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। কারণ কিছু কৃষক আগ্রহ হারিয়েছেন এবং ৩ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের পরিবর্তে আউশ চাষ করেছেন। আগামী বছর পাট চাষে আগ্রহ ফিরিয়ে আনা হবে।

(একে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪)