সোহেল সাশ্রু, কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তিনদিনের তদন্ত শেষ করেছে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে জেলা সিভিল সার্জনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. ফারজানা খান।

এ বিষয়ে ডা. ফারজানা খান বলেন, প্রাথমিকভাবে তদন্তে কিছু অনিয়ম ও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ১ সেপ্টেম্বর রোববার মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টার নামে একটি বে-সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক বিহীন আয়া দিয়ে নবজাতক খালাস করায় ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য বিভাগ ৩ সদস্য কমিটি গঠন করে। যার আজ ৭ সেপ্টেম্বর শনিবার তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর জেলা সিভিল সার্জন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

উল্লেখ্য, ১ সেপ্টেম্বর রোববার দিবাগত রাতে পৌর শহরের কমলপুর এলাকা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক মাইক্রোস্ট্যান্ড সংলগ্ন মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে প্রসূতি সুর্বণা বেগমকে কেবিনে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এইড নার্স সুফিয়া বেগমকে দিয়ে অতিরিক্ত মেডিসিন প্রয়োগের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে গর্ভবতী মায়ের পেটেই নবজাতকের মৃত্যু হয়। সুবর্ণা বেগম নরসিংদীর নারায়ণপুর গ্রামের ইয়ামিন মিয়ার স্ত্রী। পরে খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র, পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ হাসপাতাল পরিদর্শন করে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পায়। পরে জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটিকে ৩ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে নবজাতকের মা সুবর্ণা বেগম জানান, গত রোববার তার প্রসব বেদনা দেখা দিলে দুপুরে তাকে মেডিল্যাব জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াবেটিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে কোন প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে অপারেশন থিয়েটারে না নিয়ে কেবিনে রেখে এইড নার্স সুফিয়া নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করে। নরমাল ডেলিভারি করাতে গিয়ে একাধিক ইনজেকশন দিয়ে ভুল চিকিৎসায় তার নবজাতক সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তিনি তার বিচার দাবী করেন।

এ বিষয়ে নবজাতকের বাবা ইয়ামিন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ভুল চিকিৎসা করে আমার নবজাতককে মেরে ফেলার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন আমাকে দ্রুত চলে যেতে হুমকি-ধামকি প্রদান করে। এতে আমি আতঙ্কিত হয়ে আমার আত্মীয়-স্বজনকে জানালে তারা হাসপাতালে ছুটে আসে। এর কিছুক্ষণ পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা হাসপাতালে এসে হাসপাতালের স্বত্ত্বাধিকারী ডা. কেএনএম জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে হাসপাতালের স্বত্ত্বাধিকারী ডা. কেএনএম জাহাঙ্গীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একজন এইড নার্স ডেলিভারি করার চেষ্টা করেছে। আমি তখন অপারেশন থিয়েটারে ছিলাম। তবে এইড নার্স দিয়ে ডেলিভারি করানো কি সঠিক হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোন সদোত্তর দেননি।

(এসএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২৪)