আবু মকসুদ


মহোদয়,

অনেকেই আপনাকে চিঠি লিখছেন, তাই ভাবলাম আমিও লিখি। যদিও জানি এই চিঠি আপনার কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম, তবে একজন প্রধান উপদেষ্টাকে (ভাগ্যগুণে সেই উপদেষ্টা যদি বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী হয়ে থাকেন) চিঠি লেখার সুযোগও কম নয়। এই অর্জন আজ রাতে গ্রামীণ পান করেই উদযাপন করব।

আপনি সদ্য বাংলাদেশের প্রধান "দেবদূত" হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। দেবদূত নির্বাচনের মানদণ্ড কী, তা আমার জানা নেই। ছাত্ররা যেহেতু ঈশ্বরত্ব নিয়েছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে, ইতিহাসে দেখেছি, আমাদের দেশে স্বঘোষিত ঈশ্বরের শেষ পরিণতি খুবই করুণ হয়েছে। আপনার নিয়োগকর্তাদের ক্ষেত্রেও এমন পরিণতি ঘটবে না, এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না—না আপনি, না আমরা। আশা করব আপনার নিয়োগকর্তা ঈশ্বরদের হঠাৎ করে পালাতে হবে না, আপনাকেও বোরখা পরিধান করে কানাইঘাটের কোন কলাপাতায় শুয়ে থাকতে হবে না।

আপনার নিয়োগে "নোবেল" একটি বিশাল ফ্যাক্টর ছিল বলে মনে করি। এছাড়াও, হিলারি আপনাকে সম্মান করে। হিলারির স্বামী বিল ক্লিনটন মনিকা লিউনিস্কির সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন, আপনাকে নিয়ে এমন গুজব অবশ্য শোনা যায়নি। ফলে, কেউ আপনার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না। বিলের অবৈধ সম্পর্ক ফাঁস হওয়ার পরও তার জনপ্রিয়তা বেড়ে গিয়েছিল, যা দেখিয়ে দেয় ক্ষমতার লোভ কতটা তীব্র হতে পারে। হিলারি শেষ পর্যন্ত ফার্স্ট লেডি থাকতে চেয়েছিলেন এবং ক্ষমতার লোভেই সবকিছু মেনে নিয়েছিলেন; স্বামীর অনৈতিক কার্যকলাপের পরেও স্বামীর শয্যায় যেতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। নৈতিকতার ধার ধারেনি, তার চোখে শুধুমাত্র ক্ষমতার লালসা ছিল।

আপনি হিলারির ঘনিষ্ঠ বন্ধু; আমরা লক্ষ্য করেছি, আপনার ক্ষমতার প্রতি আকর্ষণ কম নয়। আপনি গ্রামীণ ব্যাংকের আজীবন সর্বেসর্বা থাকতে চেয়েছিলেন। যখন আওয়ামী লীগ সরকার আপনাকে এই আজীবনত্ব থেকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল, তখন আপনি তাদের বিরোধিতা শুরু করেছিলেন। গ্রামীণ চেক পড়ে হয়তো চেহারায় কিছুটা শান্ত ভাব আনা যায়, কিন্তু এতে আপনার ক্ষমতার লোভ চাপা পড়ে না। অবশ্যই হিলারির নৈতিকতা দিয়ে আপনাকে বিবেচনা করছি না; ক্ষমতা ছোঁয়াচে কিন্তু অনিরাময় ব্যাধি, যেকোনো সময় যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। শেখ হাসিনা এই রোগেই পটল তুলেছেন।

আপনার গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব গদগদ। মাইক্রোক্রেডিটের সাফল্য আজও গৌরবের বিষয়। কিন্তু আমরা জেনেছি, মাইক্রোক্রেডিটের পুরো কৃতিত্ব আপনার একার নয়—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুদ্রঋণ গবেষণা দলের একজন ছিলেন আপনি। কিন্তু সেই দলের অন্যান্য সদস্যদের অবদান আপনি অস্বীকার করেছেন। এটি আপনাকে একজন স্বার্থপর এবং লোভী ব্যক্তির রূপে তুলে ধরে। আরও বলতে চাই, সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতারা ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন। ক্ষুদ্র ঋণের কারণে দরিদ্র মানুষের ওপর অযৌক্তিক সুদের বোঝা চাপানোর অভিযোগও আপনার ওপর রয়েছে। আপনি যদি নিজেকে নিষ্পাপ দাবি করেন, তাহলে এ ধরনের অযৌক্তিক সুদের কারণে মানুষ কেন আত্মহত্যা করেছে, সেই প্রশ্নের উত্তর কী? আপনি কি কখনও আত্মহত্যাকারী পরিবারের সামনে গিয়েছেন, তাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন বা ক্ষমা চেয়েছেন? নিজেকে যদি মানবিক দাবি করেন, তাহলে এই মানবিকতাটুকু দেখাতে হতো, কি বলেন?

আপনার ব্যক্তিগত ইমেজ বিদেশে অত্যন্ত ভালোভাবে বিক্রি হয়। বিশ্বের তাবৎ প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট আপনাকে সম্মান করে। অভিযোগ আছে, হিলারি বা বিল ক্লিনটনের সুপারিশে আপনি নোবেল পেয়েছেন। যদিও আমরা এই অভিযোগ আমলে নিচ্ছি না, তবুও প্রশ্ন উঠতেই পারে—আপনি একজন ক্ষুদ্র ঋণ উদ্যোক্তা হিসেবে অর্থনীতিতে কাজ করেছেন, তবে কেন আপনাকে শান্তিতে পুরস্কার দেওয়া হলো? অর্থনীতিতে কেন স্বীকৃতি মেলেনি?

বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে আপনি জড়িত। কিন্তু আমরা জানি, এই সংগঠনগুলো তৃতীয় বিশ্বকে তাদের খেলার মাঠ মনে করে। এসব সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে আপনি বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবেন কি? অতীতে কখনো কি কোনো সংগঠনের নীতি বা কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে পদত্যাগ করেছেন? আমার জানা নেই। যদি এমন কিছু থাকে, তাহলে জানতে চাই।

নেতা হতে হলে দেশের মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থাকা জরুরি। আপনি কি দাবি করতে পারবেন যে দেশের মানুষ আপনাকে সত্যিই চেনে? তথাকথিত সুশীল সমাজ বাদ দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ কতটা? বন্যায় কখনো কি হাঁটু পানিতে নেমেছেন? মঙ্গা, খরা, মহামারীতে কখনও কি কোনো গরিবের কুঠিরে গিয়ে তাদের সাহায্য করেছেন? একটি দেশের নেতা হিসেবে এই অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। দারিদ্র্য বিমোচনের পরিকল্পনা হোটেলে বসে করা যায়, কিন্তু তাতে দারিদ্র্যের পাতে ভাত যায় না। আপনি কি স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবসে কখনও শহীদদের স্মরণে একটি মলিন ফুলও রেখেছেন?

ছাত্ররা আপনাকে নিয়োগ দিয়েছে বলে আপনি তাদের প্রতি গদগদ। কিন্তু আপনার পক্ষে কখনো নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়, এটা আপনি ভালো করেই জানেন। নোবেল পাওয়ার পরে রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু জনগণ আপনাকে পাত্তা দেয়নি। শেখ হাসিনা যদি শেষ মুহূর্তে মূর্খতা না করতেন, আপনার দিকে কেউ ফিরেও তাকাত না। আজও যদি আপনি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকেন, আপনার নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ভুলে যাবেন না, দেশের প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। জনতার সমর্থন ছাড়া নিরপেক্ষ নেতা হওয়া সম্ভব নয়।

আমি বুঝতে পারছি, ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে ফেলেছি। শিব কিন্তু তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করেননি, কারণ তিনি জানতেন, স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ায় কখনোই জয়ী হওয়া সম্ভব নয়—তাকে আরেকবার বিয়ে করেও এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল! সংসারের ঝগড়ায় যেমন পরস্পরের স্নেহমিশ্রিত রাগ থাকে, তেমনি সুশীল সমাজের মানুষরা ঝগড়া করলে দরজা-জানালা বন্ধ করে, যেন ঝগড়ার আওয়াজ বাইরে না পৌঁছায়। কারণ, তারা জানে, তাদের সেই ঝগড়ার মাঝে রাগের চেয়ে বেশি থাকে মান-সম্মান রক্ষার প্রচেষ্টা। সাধারণ মানুষ ঘরের বাইরে চেঁচামেচি করে ঝগড়া করে, তাতে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না, বরং একটা শুদ্ধি হয়; আর সুশীল সমাজের ঝগড়া সব কিছু নীরব করে ফেলে, কিন্তু ভেতরে জমে থাকে বিস্ফোরণের উপকরণ। আমার প্রশ্ন আপনাদের সাংসারিক ঝগড়া নিয়ে নয়; মূল প্রশ্ন করার আগে ঢোল বাজানো বাঙালির স্বভাব, আমিও এর ব্যতিক্রম নই। এবার আসি মূল কথায়।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি একজন দীর্ঘদিনের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। বর্তমানে দেশের আনাচে-কানাচে শিক্ষকরা যেভাবে অপমানিত হচ্ছেন, তা নিয়ে আপনার কি কোনো ভাবনা আছে? আপনাকে সমর্থন করে এমন অনেকেই দেখলাম উল্লাসিত। তাদের মতে, শিক্ষকরা স্খলিত হলে তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়াই সঠিক। আপনারও কি তাই মত? যদি না হয়, তাহলে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আপনার কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি কেন? ধরুন, ক্ষমতার পালাবদলে আপনি পালাতে গিয়ে ধরা পড়লেন এবং ছাত্রলীগের বিপ্লবীরা আপনাকে কান ধরে উঠবস করালো, তখন আপনার অনুভূতি কী হবে?

প্রিয় ডক্টর ইউনুস, আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভদ্রলোক। আপনার জন্য আমাদের শুভকামনা রইল, অনুগ্রহ করে আপনার নিয়োগকর্তা বিপ্লবীদের লাগাম টেনে ধরুন। শিক্ষকরা আমাদের সমাজের মেরুদণ্ড। তাদের অপমান করা বন্ধ করতে হবে। যদি এখনই লাগাম টেনে না ধরেন, ভবিষ্যতে আপনাকেও তারা অপমান করতে পারে। একজন নোবেল বিজয়ীকে এমন পরিস্থিতিতে দেখতে চাই না। আপনি নিশ্চয়ই চান না যে আপনার নিয়োগকর্তারা আপনাকে ঘাড় ধরে যমুনা থেকে বের করে দিক।

আপনি অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছেন, তাই কথাগুলো বলার সাহস পাচ্ছি। পূর্বের সরকারের আমলেও আমি কথা বলতে পেরেছিলাম, যদিও সরকারের বংশবদ কিছু আগাছা নানান কথা বলে শাসাতে চেয়েছিল। তবু তাদের ভয়ে ভীত হইনি। আমি ভীত না হলেও অনেকেই শাস্তির মুখোমুখি হয়েছে, আয়নাঘরের বাসিন্দা হয়েছে। আমি আশা করব, এই লেখার জন্য আপনি আমাকে আয়নাঘরের ভয় দেখাবেন না।

আয়নাঘরের ব্যাপারে জানতে চেয়ে বলি, পত্রপত্রিকায় আয়নাঘর নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমার খায়েশ হলো আয়নাঘরের রহস্য জানার। আপনার কাছে এখন সব ঘরের চাবি আছে। আয়নাঘরের দরজাটা খুলুন। এই সুযোগ শেখ হাসিনাকে পুরোপুরি অপদস্ত করার। আয়নাঘর জনগণের সামনে উন্মুক্ত করলে আপনার রাজনৈতিক ফায়দা হবে। এই ঘর বিক্রি করে আপনি দীর্ঘদিন ক্ষমতার পুঁজি সংগ্রহ করতে পারবেন, যেভাবে হাওয়া ভবন বিক্রি করে শেখ হাসিনা পেরেছিলেন। রহস্যময় আয়নাঘর রহস্য ভেদ করে মানুষের সামনে প্রকাশিত হোক; মিথ্যার অন্ধকার ভেদ করে সত্যের আয়নাঘর উঠে দাঁড়াক। এটাই আমাদের চাওয়া।

২.

রাজাকার শিরোমণি গোলামের পুত্র আপনার কাছে একটি অনুরোধ জানিয়েছে। যেহেতু তিনি আপনার শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই তার এই আবদার রক্ষা করা আপনার দায়িত্ব। এই সুযোগে শ্বশুরবাড়ির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের সেরা সময় এসেছে। রাজাকার পুত্র বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি করেছে—আপনি নিশ্চয়ই তার এই খায়েশ পূরণের বিষয়ে বিবেচনা করবেন। তবে আপনার প্রতি আমার একটি ছোট্ট পরামর্শ আছে: যেহেতু তিনি জাতীয় সংগীত বদলানোর মতো বড় আবদার করেছেন, তাই আপনি শ্বশুরবাড়ির প্রতি আনুগত্যের প্রকৃত প্রমাণ দিতে চাইলে বাংলাদেশের নামও পরিবর্তন করে দিতে পারেন। শুধু তাই নয়, দেশের নতুন নামের সঙ্গে নতুন ‘জাতির পিতা’ও নির্বাচন করা যায়, যেখানে আপনার শ্বশুর গোলাম উপযুক্ত প্রার্থী হতে পারেন।

আপনার স্মরণ থাকা উচিত, শ্বশুরবাড়ির কারণেই আপনি আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছেন। তারা আপনাকে লালন-পালন এবং পুষ্টি দিয়ে এই উচ্চতায় নিয়ে এসেছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের এটাই হয়তো উপযুক্ত সময়। কিন্তু, মনে রাখবেন, গরু মোটাতাজা করার পর খামারি যখন সেটিকে বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে যায়, তখন কসাই তাকে জবাই করে। আপনি যাদের কাছে আজ সমর্থিত হচ্ছেন, একদিন যখন তাদের প্রয়োজন মিটে যাবে, তখন তারাও হয়তো আপনাকে একই পরিণতি দেবেন।

রাজাকারের পুত্ররা একে একে তাদের দাবি সামনে তুলে ধরবে, কারণ তারা জানে, তাদের মামারা ক্ষমতায় রয়েছে। তারা প্রতিটি রাজাকারকে চন্দ্রভ্রমণে পাঠানোর চেষ্টা করবে, সুযোগ পেলে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আপনি কী করবেন? শ্বশুরবাড়ির আবদার মানবেন, না নিজের নামের মর্যাদা রক্ষা করবেন? এখন পর্যন্ত আপনার কাজকর্মে দেশের প্রতি বিশেষ আনুগত্যের প্রমাণ দেখা যায়নি। দেশের কোন দুর্যোগে, বিপর্যয়ে, কখনো আপনার দেখা মেলেনি। বন্যা, মহামারী, খরা, সন্ত্রাসী আক্রমণ, রাস্তায় লাশের পর লাশ পড়লেও, আপনার ব্রাহ্মণ্যবাদী অভিজাত্য আপনাকে শূদ্রদের সারিতে নামতে দেয়নি। আপনি হঠাৎ উড়ে এসে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন, এবং এখন ফেরেশতাদের ভাষায় কথা বলছেন।

গোলামের পুত্র আমাদের জাতীয় সংগীতে আঘাত করতে চায়। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে আমাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়কে কলঙ্কিত করা। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ভেবে যতই আত্মপ্রসাদ লাভ করুন না কেন, ভুলে যাবেন না, দেশের কোনো অর্জনের ওপর সামান্যতম আঘাতও আপনার মসনদকে তাসের ঘরের মতো ভেঙে ফেলতে পারে।

আমরা হাসিনাকে পরিত্যাগ করতে পারি, কারণ তার কর্ম তাকে পালাতে বাধ্য করেছে, কিন্তু তার অবর্তমানে রাজাকারের পুত্রদের আস্ফালন আমরা মেনে নেব না। আপনি কিংবা রাজাকার পুত্ররা যদি মনে করে থাকেন, আমরা এখনো আগের মতো শক্তিশালী নই, তাহলে আপনি ভুল করছেন। আমরা সেই প্রজন্ম, যারা কাদের মোল্লার মতো ঘৃণিত আঙ্গুল থেঁতলে দিতে পেরেছিল। আমরা সেই প্রজন্ম, যারা নিজামী, মুজাহিদ এবং সালাউদ্দিন কাদেরের মতো পাপীদের ঘৃণিত পদচারণা থামাতে সক্ষম হয়েছে।

আপনার শ্বশুরবাড়ির লোকদের সামলানোর দায়িত্ব আপনার। যদি আপনি এই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমরা সামলাতে বাধ্য হবো। হাসিনা নেই বলে আমাদেরকে হালকাভাবে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। যুগে যুগে অসুরদের নাশ করতে দুর্গাদের ধরায় আসতে হয়; প্রচণ্ড প্রতাপী রাজা কংসের সমাপ্তিও কৃষ্ণের হাতে হয়েছিল।

গোলামের পুত্র যতই তার আব্বাকে সামনে আনার চেষ্টা করুক, আমরা তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—বাংলার মাটিতে রাজাকারের কোনো ঠাঁই নেই।

আপনার আজকের সিদ্ধান্ত শুধু বর্তমান নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও দিকনির্দেশনা হবে। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, অন্যায়ের সঙ্গে আপস করলে তার মূল্য চুকাতে হয় চরমভাবে। আপনি যদি শ্বশুরবাড়ির আবদার মেনে নিয়ে জাতির স্বার্থকে বিকিয়ে দেন, তাহলে জাতি আপনাকে ক্ষমা করবে না। মনে রাখবেন, বাংলার জনগণ সংগ্রামী; তারা ন্যায়ের পথে আপস করে না, তাই তাদের ঐতিহ্য এবং আত্মমর্যাদাকে কেউ অপমান করলে, তারা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আজ আপনি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেন, তাহলে ইতিহাসে আপনার নাম কলঙ্কিত হবে, এবং বাংলার মাটিতে আপনার জন্যও কোনো ঠাঁই থাকবে না। শ্বশুরের বুদ্ধিমান দামান্দ হিসেবে, আশা করি, আপনি এই বিষয়গুলো গভীরভাবে বিবেচনা করবেন।

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ছোটকাগজ ‘শব্দপাঠ’ সম্পাদক।