সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার পর এখন মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্য পুরোদমে শুরু হয়েছে। আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইফ লাইন দেশের এই আর্ন্তজাতিক সমুদ্র বন্দরটি স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে।

শনিবার মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও জেটিতে থাকা ১০টি বিদেশী জাহাজে পন্য বোঝাই ও খালাসের কাজ চলেছে। একটি কার্গো জাহাজ বন্দর থেকে ছেড়ে গেছে। রবিবারের মধ্যে আমদানী পন্য নিয়ে আরো দুটি কার্গো জাহাজ মোংলা বন্দরে আসার কথা রয়েছে। কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় সড়ক যোগাযোগ, ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধে শুল্কায়ন না হওয়া আটকা পড়াসহ এখন স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করায় আমদানী ও রপ্তানীকারকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। নতুন করে শুরু হয়েছে আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্যে মোংলা বন্দরে মহাকর্মযজ্ঞ। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ বিভাগ এ তথ্যে নিশ্চিত করেছে।

মোংলা বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি লিয়াকত হোসেন লিটন জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় মোংলা কাস্টমসে চার দিন ‘বিল অব এন্ট্রি’ করা যায়নি। এতে মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। খালাসকৃত আমদানী করা পণ্যের শুল্কায়ন না হওয়া ডেলিভারি নেয়াও বন্ধ হয়ে যায়। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় মোংলা বন্দরে মহাকর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ, ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধে শুল্কায়ন না হওয়া আটকা পড়াসহ এখন স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ আমদানীকারকরা পন্য খালাস করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন বেহিক্যাল ইমপোটার্স অ্যান্ড ডিলার এ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি মো. হাবিবুল্লা ডন জানান, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিদিন মোংলা ও চট্রগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানী করা গাড়ি খালাস করতে ১২০ থেকে ১৫০টি রেজিস্ট্রন হয়। দেশের চলমান পরিস্থিতি গত চারদিন এই দুই বন্দর থেকে একটি গাড়িও খালাস করতে না পারায় চরম আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বারভিটা সদস্যদের। স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করায় বন্দর দিয়ে এখন গাড়ি খালাস করতে রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে।

মোংলা কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষের কমিশনার কে,এম মাহাবুবুর রহমান জানান, স্বাভাবিক পরিস্থিতে মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক তাদের প্রতি মাসে রাজস্ব আয় হয় ৩০০ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হয় ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা। তবে চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে গত রবিরার থেকে মোংলা কাস্টমস হাউজ প্রায় ৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ব্যাংক ও ইন্টারনেট সেবা চালু হওয়ায় মোংলা কাস্টমস হাউসে এখন পুরোদমে কাজ চলছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্ব ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত¡বাবধানে মোংলা বন্দরের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এ বন্দর দিয়ে ৮৪৬ টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমন করে। রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানী হয় ১৫,৩৪০ ইউনিট। এ সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিংও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল সূচক পজিটিভ ধারায় থাকার ফলে বন্দরে নিট মুনাফা ২৮দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বন্দর দিয়ে বিশ্বের ৩৮টি দেশে পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে। চলমান পরিস্থিতিতে মোংলা বন্দরকে ঘিরে নাশকতা এড়াতে নৌবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরে অবস্থান করা দেশি-বিদেশি জাহাজের কার্যক্রম।

(এসএসএ/এএস/জুলাই ২৭, ২০২৪)