স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, যশোর : যশোর জেলা শহর ও উপজেলা বাজারের ফুটপাত দিয়ে পথচলা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শহরের অধিকাংশ হোটেল-রেস্টুরেন্ট গুলো ফুটপাত দখল করে গ্যাস সিলিন্ডার রাখছে। আর সেই গ্যাস সিলিন্ডারের খুব কাছেই উত্তপ্ত গ্যাসের চুলায় চলছে রান্নার কাজ। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে পথচারিদের স্বাভাবিক চলাফেরা। এমন কি চুলার সেফটিভাম দুর্বল থাকলে বা লিকেজ হলে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ঘটে যেতে পারে প্রাণঘাতীর মতো ঘটনা। গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণে গ্যাস লিক হয়। আর তা থেকে ঘটে বিস্ফোরণের মত ঘটনা। এ ছাড়া নিরাপদ দূরত্বে চুলা না রাখায় অতিরিক্ত তাপে সিলিন্ডার গরম হয়েও বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকে।

সরেজমিন যশোর শহর ও কেশবপুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে থাকা অধিকাংশ হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ফুটপাতে সিলিন্ডর রাখছে। আর সিলিন্ডারের একদম পাশেই পেতে রাখা গ্যাসের চুলায় রান্নার কাজ করছেন বাবুর্চিরা। এ সব চুলা ও গ্যাস সিলিন্ডারের পাশ দিয়ে চলাচল করছেন অসংখ্য পথচারী। এছাড়া এসব হোটেলের অধিকাংশটিতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ফায়ার ইস্টিংগুইসার নেই। হাতে গোনা দুই একটিতে থাকলেও মেয়াদ হারিয়েছে অনেক আগেই। এমনকি এসব হোটেলে আগুন নেভানোর নুন্যতম ব্যবস্থা হিসেবে বালতি ভর্তি পানি ও বালির বন্দোবস্তও নেই। অথচ দুর্ঘটনা এড়াতে এসব প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক বলছেন যশোর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স।

যশোর শহরের রেলগেট মুজিব সড়কে দেখা গেছে, গোলপাতা নামে একটি হোটেলের গ্যাসের সিলিন্ডারটি ফুটপাতের অর্ধেক জুড়ে রাখা। আর সিলিভারের একদম পাশেই পেতে রাখা গ্যাসের চুলায় একজন পরোটা ভাঙ্গছেন। শহরের ব্যস্ততম এলাকা সিভিল কোর্ট মোড়ে প্রচুর সংখ্যক মানুষের আনাগোনা চলে প্রতিদিন। এখানকার হোটেল গুলোর সব কয়েটির দৃশ্যও গোলপাতা হোটেলের মতোই।

এদিকে, দড়াটানা ব্রিজের দুই পাশের প্রচুর সংখ্যক হোটেল রেস্টুরেন্টের দৃশ্য ওঠিক একই রকম। এখানকার সামাদ, রাজধানী, ভৈরব, বটতলা, খাওয়া দাওয়া, নিউ ভৈরবসহ আরো বিভিন্ন নামের হোটেল গুলোতে একই দৃশ্য চোখে পড়ে। এসব হোটেলের কোনো টিতে অগ্নিনির্বাপনের কোন সু-বাবস্থা নেই। এমনকি হাসপাতাল মোড়ে নিচ তলায় হোটেল এবং উপরের তলায় ক্লিনিক থাকার মতও চিত্র দেখা গেছে। এদিকে, নেতাজীসুভাস চন্দ্র বসু (গাড়িখানা রোড) সড়কে স্টার হোটেল, মিস্ত্রিখানা রোডে পাঁচ ফোঁড়নসহ অন্যান্য হোটেলের দৃশ্যও আলাদা নয়। স্টার হোটেলের গ্যাস সিলিন্ডারের পাশে মোটর সাইকেলের পাকিং করা হয়েছে। সেখানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটলে মোটর সাইকেলসহ বড় ধরণের হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া কেশবপুর বাজারের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ত্রিমোহিনীর মোড়েও একাধিক ছোট বড় খাবারের হোটেলে এমন ফুটপাত দখল করে গ্যাসের সিলিন্ডার রাখার চিত্র দেখা গেছে।

আরিফ বিল্লা নামে একজন পথচারী জানান, প্রতিদিন কাজের সুবাধে যশোর শহরে চলতে হয়। ফুটপাত দখল করে গ্যাসের সিলিন্ডার রাখাতে অনেক সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। যে কোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই সব সিলিন্ডার নিরাপদ দূরত্বে রাখা দরকার।

ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিফিল ডিফেন্স যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, গ্যাসের সিলিন্ডার একটা শেষ হলে খালি সিলিন্ডার সরিয়ে রেখে গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার ব্যবহার করা নিয়ম। কিন্তু শহরের দোকানগুলো একসাথে অনেকগুলো সিলিন্ডার রাখে। গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার সব সময় নিরাপদ দূরত্বে ও ঠান্ডা জায়গায় রাখার নিয়ম। এ বছর যশোরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মত কোনো ঘটনা এখনও ঘটেনি। আমরা সপ্তাহের প্রতি শনিবার এই সব বিষয় নিয়ে সর্ব সাধারণকে সচেতন করার জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সব প্রতিষ্টানে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখার জোর তাগিদ দিচ্ছি। তাছাড়া ফুটপাত দখল করে রাখা গ্যাসের সিলিন্ডার অপসারণের কাজ পৌরসভার।

এ বিষয়ে যশোর পৌরসভায় সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল হোসেন জানান, যশোর পৌরসভা থেকে নির্দেশ দেওয়া আছে ফুটপাত দখল করে গ্যাসের সিলিন্ডার কেন, কোনো কিছইু রাখা যাবে না। তারপরও যারা দখল করে রাখে আমরা অভিযান পরিচালনার সময় তা অপসারণ করি।

(এসএমএ/এএস/জুলাই ২৫, ২০২৪)