স্টাফ রিপোর্টার : সহিংসতা ঠেকাতে র‌্যাব হেলিকপ্টার থেকে কোনো গুলি করেনি বলে জানিয়েছেন র‌্যাব মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, এগুলো প্রপাগান্ডা। হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্যাস শেল ফায়ার করা হয়েছে। কোনো গুলি করা হয়নি।

বুধবার (২৪ জুলাই) কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, গত ১৯ জুলাই থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংসতায় পরিণত হয়। শুরু হয় ধ্বংসযজ্ঞ। এই ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায়। পুলিশ ও তাদের স্থাপনা টার্গেট করা হয়। উত্তরা পূর্ব থানার সামনে র‌্যাবের কনস্টেবল অমিত বড়ুয়াকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়। তিনি এখন সিএমএইচে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। সেখানে আমাদের গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাদে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা আশ্রয় নেন। আমরা তাদের হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করেছি।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের শিমরাইলে হাইওয়ে পুলিশের অফিসে আগুন দেওয়া হয়। আমরা সেখান থেকেও পুলিশ সদস্যদের হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করেছি। দুবৃর্ত্তদের আগুনে দুজন শ্রমিক সেখানে পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে। সেতু ভবনের ৫০টিরও বেশি গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। বিভিন্ন স্থানে দুবৃর্ত্তরা আন্দোলনের নামে রাস্তা বন্ধ করে ছোট বাচ্চাদের সামনে বসিয়ে দিয়েছিল। ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সরকার ও দেশকে অকার্যকর করে দিতে চেয়েছিল। যখন আমরা রাস্তা ব্যবহার করতে পারছিলাম না তখন হেলিকপ্টার ব্যবহার করে কাজ করেছি। আমরা চেষ্টা করেছি যেন মানুষের জীবন বাঁচানো যায় এবং ক্ষতিটা কমানো যায়।

হেলিকপ্টার না থাকলে র‌্যাব কীভাবে অভিযান পরিচালনা করতো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ধরনের হামলা এবারই প্রথমই নয়। এর আগে অনেক সহিংসতা-নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। আমরা সেগুলো হেলিকপ্টার ছাড়াই মোকাবিলা করেছি। ছাত্ররা যখন আন্দোলন করছিল তখন কোনো সহিংসতা ছিল না। ছাত্ররা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। সাধারণ মানুষও আমাদের প্রতিপক্ষ নয়। আমরা তাদেরই প্রতিপক্ষ যারা হামলা করেছে; দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে। সাধারণ মানুষ ও ছাত্ররা আমাদের সঙ্গে রয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর তারা আর কোনো আন্দোলন করেনি। স্বাধীনতাবিরোধীরা সবসময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

প্রথম যেদিন সংঘর্ষ হয়েছিল তারপর থেকে র‌্যাব সতর্ক ছিল কি না, আর সতর্ক থাকলে নিয়ন্ত্রণ করতে এত সময় কেন লেগেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ বলেন, ১৯ জুলাই থেকে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর দ্রুত সিচুয়েশন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমরা জাতিসংঘ মিশনেও দেখেছি এত দ্রুত করা হয় না। সময় নেওয়া হয়।

আন্দোলনে ছাত্রদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে সহিংসতা দ্রুত টার্ন করবে, এই তথ্য কি র‌্যাব আগে থেকে জানতে পারেনি? এক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্স ব্যর্থতা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সেটি বলছি না। কুইকলি টার্ন করেছে। সন্ত্রাসী, জঙ্গি, হামলাকারীরা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সুযোগ পেলেই হামলা, নাশকতা করে। যারা নাশকতার সঙ্গে জড়িত তাদের আমরা ধরবো। বিভিন্ন জায়গায় যারা নাশকতা করেছে তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। আমাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক অনেক শক্তিশালী ও সুবিস্তৃত। প্রত্যেককে শনাক্ত করা হবে। আইনের আওতায় আনা হবে।

আন্দোলনে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এসেছে। দুজন পুলিশ সদস্য স্নাইপার রাইফেলের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কারা স্নাইপার দিয়ে গুলি করলো, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে র‌্যাব ডিজি বলেন, অবশ্যই আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। তবে স্নাইপার ব্যবহার হয়েছে কি না জানি না।

(ওএস/এএস/জুলাই ২৪, ২০২৪)