শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ২২ জন আহত হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও এখনো চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ৫ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে এসব সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। দু'পক্ষের স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানে উত্তপ্ত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখ সড়ক।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বললেও মহাসড়কে অনড় অবস্থানে থাকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে বিকাল পৌনে ৫টায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। ফলে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান আন্দোলনকারীরা। এর আধঘণ্টা পর আন্দোলনকারীরা সংগঠিত হয়ে লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়।

এ সময় আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। আন্দোলনকারীদের পাল্টা আক্রমণে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসের ভেতর যেতে বাধ্য হয়। এসময় দু'পক্ষের ইটপাটকেল ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মুখ সড়ক।

প্রত্যক্ষদর্শী দোকানদার মোখলেসুর জানান,, কোটা সংস্কারের দাবিতে তারা শান্তিপূর্ণভাবেই সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছিল।কিন্তু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে তাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

এ ব্যাপারে হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন আকাশের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোম রিসিভ করেননি।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ জানান, 'কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। পাশাপাশি ছাত্রলীগও তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। হাবিপ্রবির প্রক্টরিয়াল বডি শুরু থেকেই চেষ্টা করেছে- যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে প্রক্টরিয়াল বডি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তারা চেষ্টা করেন এবং দু'পক্ষকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসের সামনে ৫ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো পুলিশ সদস্য আহত হননি বলে তিনি দাবী করেছেন।
রাত ৮ টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়কের যান চলাচল।

এর আগে দুপুরে দিনাজপুর সরকারি কলেজের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দু'টি বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসনসহ অন্তত ১২ জন আহত হন।

(এসএএস/এএস/জুলাই ১৭, ২০২৪)