বিশেষ প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর কালুখালীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাড়ীতে ঢুকে মঙ্গল চন্দ্র  (৬৫) নামে এক ব্যক্তির দুই পা ও একটি হাত ভেঙ্গে হত্যার ঘটনায় পুলিশ শাওন (২৬) কে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃত শাওন কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের বিকয়া চারাখালী গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে। নিহত মঙ্গল চন্দ্র কালুখালী উপজেলার লাড়িবাড়ী গ্রামের যতীন্দ্রনাথ বিশ্বাসের  ছেলে। 

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে কালুখালী উপজেলার লাড়িবাড়ী গ্রামের বাড়ীতে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

জানাগেছে, মঙ্গল চন্দ্র কৃষি কাজ করতেন। পাশর্^বর্তী গফুর, রফিক, আলম, আলী সহ তাদের লোকজন ইতিপূর্বে তারা তাকে মারধর করায় থানায় মামলা হয়। ওই মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত পৌনে ২টার দিকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ তাদের নেতৃত্বে ১৫-১৬জন বাড়ীতে ঢুকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ডাকাডাকি করতে থাকেন। পরে মঙ্গল মন্ডল উঠলে তাকে পিটিয়ে দু’টি পা ও একটি হাত ভেঙ্গে দেয়।

বাড়ীর অন্যান্য লোকজন তাকে বাঁচাতে গেলে তাদেরকেও মারধর করে। পরে ঘরে থাকা গরু ব্যবসার ২ লক্ষ ৯৩ হাজার নগদ টাকা, একটি স্বর্ণের চেইন, এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল ও ৩টি মোবাইল ফোন লুটপাট করে নিয়ে যায়। চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে তারা বীরদর্পে চলে যায়। এ ঘটনায় তার ছোট ছেলে কুমারেশ মন্ডল বাদী হয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী দুপুরে কালুখালী থানায় মামলা দায়ের করেন। তাকে মারাত্বক আহত অবস্থায় উদ্ধার করে রাজবাড়ী হাসপাতালে আনলে তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩ মার্চ তার মৃত্যু হয়।

মঙ্গল চন্দ্র হত্যার ঘটনায় বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যেকর তথ্য। কালুখালী উপজেলার সাওরাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ শহিদুল ইসলাম আলী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১১জন মিলে হত্যা করেছে। রাজবাড়ীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোঃ ইকবাল হোসেনের নিকট ১৬৪ ধারায় এ চাঞ্চল্যেকর জবানবন্দি দিয়েছেন মঙ্গল চন্দ্র হত্যা মামলার এজহার নামীয় ৩ নং আসামী রফিক মন্ডল। সে কালুখালী উপজেলার লাড়িবাড়ী গ্রামের মৃত কিন্দার মন্ডলের ছেলে।

গত ১৪ মার্চ স্বীকারোক্তিতে রফিক মন্ডল বলেন, তিনি খেঁজুর গাছ কাটেন। শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যানের লোক। গত ২০ বছর ধরে বিপুল ও মঙ্গলের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান সহ গফুর, মুকিম, আকিদুল, আলী বিরোধ মেটানোর জন্য বহু চেষ্ঠা করেছেন। প্রতিবার চেয়ারম্যানের ডাকের তোয়াক্কা করতো না মঙ্গল মন্ডল। এ জন্য ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান তাদের ১১ জনকে বলে যে, মঙ্গলকে শায়েস্তা করতে হবে।

আবারো তিনি বলেন, তিনি ভারতে যাওয়ার পর ১১ জন মিলে মঙ্গল চন্দ্রকে মেরে হাত, পা ভেঙ্গে দিবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিক, বিপুল, গফুর, মুকিম, আকিদুল, মোঃ আলী, শাওন, মিলন, উজ্জল, সোহেল ও অজ্ঞাত ১জন মিলে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী রাত দেড় টার দিকে মঙ্গল চন্দ্র মন্ডলের বাসায় যান। এসময় শাওনের হাতে পিস্তল ছিলো, রফিকের হাতে চিকুন রড, মিলনের হাতে চাইনিজ কুড়াল, বিপুলের হাতে হকিস্টিক, অন্য সবার হাতে লাঠিসোটা ছিল। শাওন, মিলন ও বিপুল বেশী মারে। অন্য সবাই এলোপাতারি ভাবে মারে। মঙ্গলের ২ পায়ের হাড় ভেঙ্গে যায়, কিন্তু ঘটনাস্থলে মারা যায়নি। পরে শুনেছি মঙ্গল মারা গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী সাওরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন শহিদুল ইসলাম আলী ও তার সহযোগিরা বলে শুনেছি। আসামী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শহিদুল ইসলাম আলী চেয়ারম্যান তার নিজস্ব বাহিনী দিয়ে তার কথা না শুনলে নির্যাতন করে আসছেন। এ নিয়ে ইতিপূর্বে মামলার শিকার হন। সাধারণ মানুষ এ থেকে মুক্তি চান।

কালুখালী থানার এসআই সুবোধ কুমার বলেন, মঙ্গল হত্যা মামলার আসামী শাওনকে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় কালুখালী উপজেলার বিকয়া চারাখালী গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রাজবাড়ী আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

(একে/এএস/জুলাই ১৬, ২০২৪)