রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : ফরিদপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন টিটোনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে বিদ্যালয়টির বর্তমান ও সাবেক ছাত্রীরা বেশকিছু ডকুমেন্টস সহ একটি অভিযোগপত্র দেয় দৈনিক বাংলা ৭১ কে। কি ছিলো যেই অভিযোগপত্রে? দৈনিক বাংলা ৭১ এর পাঠকদের জন্য চিঠির অংশবিশেষ হুবহু তুলে ধরা হলো-

বিষয়: মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন- প্রধান শিক্ষক আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ফরিদপুর সদর, ফরিদপুর এর যৌন নিপীড়ন ও দুর্নীতির প্রসঙ্গে।

আমরা দশম (ক) শাখা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ফরিদপুর সদর, ফরিদপুর। শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের যৌন নিপীড়নে অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। তিনি ২০১০ সালে বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে এস.এস.সি পরীক্ষার্থীদের সাথে প্রতি বছর এই ঘৃণ্য কাজ করে থাকে। তার সাম্প্রতিক দশম (খ) শাখার এক মেয়ের সাথে ম্যাসেন্জারে চ্যাটিং- এ আমরা জানতে পারলাম। তিনি অনেক মেয়ের সাথে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। বিষয়গুলো নিয়ে প্রাপ্তন কিছু শিক্ষক সহ অনেকের সাথে কথা বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। মেয়েদের টেস্ট পরিক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখিয়ে তিনি এই রকম যৌন লিপ্ততা চরিতার্থতা করেন। আমরা এটাও জেনেছি যে যেসব মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলেন তাদের টেস্ট পরিক্ষায় প্রশ্ন প্রদান করে থাকে। তার ম্যাসেন্জারের যে কথা ও ছবি প্রদান করা হয়েছে সেগুলো দেখলে কোনো সুস্থ মানুষের মাথা ঠিক থাকবে না। একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে কিভাবে এসব ভাষা ও ছবি আদান-প্রদান করতে পারেন।আমরা বলতে চাই বর্তমানে শ্রেনিকক্ষে সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে এবং চলতি বছরের ১১ মে থেকে ১৫ মে পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সহ তার ক্লাসের অন্যান্য সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুসন্ধান করলে অনেক কিছু আন্দাজ করা যাবে। তিনি ক্লাস চলা কালীন মেয়েদের শরীরে স্পর্শ করেন। এই বিষয়ে শ্রেণি শিক্ষকদের জানালে তারা কোনো পদক্ষেপ নেন নি।এইতো গেলো নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা। আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি তার টাকা আত্মসাৎ এর ঘটনা। ২০২১ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি মেয়ের কাছ থেকে ১৫০ টাকা নিয়েও সেই অনুষ্ঠান উদযাপন করেননি এমনকি টাকা ফেরত তো দূরের থাক টাকা ফেরত ছাত্রীদের বিভিন্ন হুমকি দিয়েছেন। পানির মেশিনের জন্য শিক্ষার্থীদের থেকে ২০১৭ সালে ১০০ টাকা করে নিয়েছেন। আবার কিছু দিন আগে থেকে ৫০ টাকা করে নিয়েছেন একই কারণে। স্কুল ফান্ডে টাকা থাকার পরও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাহানায় টাকা উঠিয়েছেন। যেমন :গাছগাছালি কেনা, মিলাদ মাহফিল ইত্যাদি।

আমরা জানতে পেরেছি গত দুই বছরের একটি অডিট রিপোর্ট থেকে প্রায় কোটি টাকার অনিয়ম ধরা পড়েছে। সাম্প্রতিক সহ শিক্ষক ও ল্যাব এ্যাসিস্টেন্ট নিয়োগেও সে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত যত নিয়োগ হয়েছে সেখানে থেকে ২৫/৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ে ইচ্ছা মতো তার আত্নীয় স্বজনদের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করিয়েছেন।যার কোনো কমিটির অনুমোদন নেই। উল্লেখ্য যে অধিকাংশ খণ্ডকালীন শিক্ষকদেরই শিক্ষক হবার কোনো যোগ্যতা নেই।

আমরা এই অত্যাচার ও নারীখোর, লুচ্চা প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চাই। শিক্ষাঙ্গনে এইরকম লুচ্চারা থাকলে বিদ্যালয়ের পবিত্রতা নষ্ট হবে এবং অন্যরাও এই রকম কাজে লিপ্ত হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে। ভুক্তভোগী সবাই কিন্তু বলতে সাহস পায় না। যদি বলতো তাহলে এতোদিন উনি চাকরি করতে পারতো না।''

তথ্য অনুসন্ধানে নামলে সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন ছাত্রীর পাঠানো স্কিন শর্ট ও কথোপকথন ভয়েস ইত্যাদি ডকুমেন্টস আসে দৈনিক বাংলা ৭১ এর কাছে। তখন দৈনিক বাংলা ৭১ এর সম্পাদক ও দেশবরেন্দ্র সাংবাদিক প্রবীর সিকদার সর্ব প্রথম ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করা জয়নূল আবেদীন টিটোন এর মুখোশ খুলে দেন। দীর্ঘ ১৪ বছর ফরিদপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক (জয়নূল আবেদীন টিটোন) তার ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করে আসছেন। কিন্তু তার বিপক্ষে কেউ কোন কথা বলেনি। সাংবাদিক প্রবীর শিকদার প্রথম ব্যাপারটি আমলে নিয়ে দীর্ঘ এক মাস তদন্ত করান তাঁর সহকর্মীদের দিয়ে। তারপর তিনি এক এক করে ফেসবুক স্টাটাসের মাধ্যমে জয়নুল আবেদীন টিটোনের কুকীর্তি ফাঁস করতে থাকেন। তিনি নাম উল্লেখ না করে স্টাটাস দিলেও স্থানীয় জনগণের বুঝতে বাকী থাকে না কার কথা বলা হচ্ছে।

এরপর গত বৃহস্পতিবার মেয়েদের অভিযোগের পর একটি জাতীয় সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। তার আগে ছাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার ও ফরিদপুরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম অভিযোগটির তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর রবিবার (১৪ জুলাই) দীর্ঘ ১৪ বছর ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করা শিক্ষক জয়নূল আবেদীন টিটোন'কে গ্রেফতার করলো প্রশাসন।

দীর্ঘ ১৪ বছর কেনো নিরব ছিলো ফরিদপুরবাসী, কেনো সহ্য করেছেন ওই শিক্ষককে! কেনো একজন সাবেক শিক্ষক হয়েও সেই সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হলো যে, জয়নূল আবেদীন টিটোন আপনি শিক্ষকতার আড়ালে যা করছেন তা ক্ষমার অযোগ্য, আপনি শিক্ষকদের মানসম্মান মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছেন, আপনাকে এই পেশা মানায় না, আপনার শাস্তি হওয়া উচিত!

(আরআর/এসপি/জুলাই ১৫, ২০২৪)