সরদার শুকুর আহমেদ, বাগেরহাট : দেশের প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা বাগেরহাট জেলা শহরের অধিকাংশ সড়কই খানাখন্দে ভরা। বছরের পর বছর ধরে যান চলাচলের অনুপোযোগি পৌরসভার ৭৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়কের ৭০ ভাগই এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত।

এমন অবস্থায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সাধারন মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা।

বাগেরহাট শহর ১৯৫৮ সালে পৌরসভা হবার পর ১৫ দশমিক ৮৯ বর্গকিলোমিটার আয়োতনের এই পৌরসভাটি ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত হয়।

বাগেরহাট পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৭টি মহল্লায় বর্তমানে বসবাস করেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। জেলা সদর হওয়ায় ৯টি উপজেলায় মানুষকে প্রতিনিয়ত বাগেরহাট শহরে আসতে হয়। এক দশকেরও অধিক সময় ধরে বাগেরহাট পৌরসভার ৭৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই সংস্কার করা হয়নি।

ফলে অধিকাংশ সড়ক জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী ভাঙাচোরা এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সাধারণ মানুষদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে।

বাগেরহাট পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের নূর মসজিদ থেকে এলজিইডি মোড়, রাহাতের মোড় থেকে চানমারী ব্রিজ পর্যন্ত, পুরাতন বাজার থেকে সম্মিলনী স্কুল, নূর মসজিদ থেকে সরকারি মহিলা কলেজ রোড, মুনিগঞ্জ থেকে হাড়িখালী রোড, সরকারী বালিকা বিদ্যালয় রোডসহ প্রধান প্রধান অধিকাংশ সড়ক যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়া বাগেরহাট শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা, খারদ্বার, বাসাবাটী, সাহাপাড়া, দশানী, গোবরদিয়া, সোনাতলা, সরুই এলাকার অভ্যন্তরিন রাস্তাঘাট নাজুক অবস্থায় রয়েছে।

শহরের ইজিবাইক চালক ফরিদ বলেন, এই নূর মসজিদরে মোড় থেকে এলজিইডি মোড় পর্যন্ত আমাদের ইজিবাইক নিয়ে ঢেউ খেতে খেতে যাত্রী বহন করতে হয়। এতে যাত্রীর কষ্ট হয়, আমাদেরও কষ্ট হয়, গাড়ীরও ক্ষতি হয়। গাড়ী চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। শহরের অধিকাংশ সড়ক এখন অটো রিকশা চলাচলের অনুপোযগী হয়ে পড়েছে। আগের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। না পারতে কেউ আর অটোতে উঠতে চায় না। সড়কে বের হলেই ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। অটোরিকশা প্রায়ই নষ্ট হচ্ছে। তার পরেও পেটের টানে বাধ্য হয়ে অটো চালাচ্ছি। আমরা চাই দ্রুত যাতে এই সড়কগুলো মেরারত করা হয়।

মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী সুমন শেখ বলেন, আমি সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা। জরুরী প্রয়োজনে প্রতিদিনই শহরে আশতে হয়। কিন্তু রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে হাটাচলা করতেও কষ্ট হয়।

শিক্ষক আবু সাঈদ শুনু বলেন, বাগেরহাট পৌরসভার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ, বিষয়টি বলারও কেউ নেই, দেখারও কেউ নেই। এমপি শেখ তন্ময় বিষয়টি দেখবেন এই প্রত্যাশায় দিন পার করছি।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের সামনে সেলুন মালিক সুনীল শীল বলেন, কিছুদিন আগেও এই ভাঙ্গা রাস্তায় ভ্যান উল্টে পড়ে গিয়ে এক গর্ভবতী নারী খুন কষ্ট পেয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। এমন দুর্ঘটনা প্রায়ই এই সড়কে ঘটেছে। এছাড়া রাস্তাঘাট খারাপ হওয়ার কারনে আমার সেলুন ও আশপাশের দোকানগুলোতে কাষ্টমার আসতে চায় না। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।

বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর তালুকদার আব্দুল বাকী বলেন, বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পৌরসভার আওতাধীন। কিন্তু দু:খের বিষয় দীর্ঘদিন কোন প্রকার সংস্কার কাজ না করায় টার্মিনালের অভ্যন্তরিন রাস্তাগুলোতে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যে কারনে প্রতিনিয়ত গাড়ীর বিভিন্ন যত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা মালিক সমিতি সমস্যা সমাধানে একাধিকবার ইট, বালি দিয়ে ভাঙ্গা স্থান মেরামত করেছি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আরার ভাঙ্গা অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

দীর্ঘদিন ধরে খারাপ অবস্থায় থাকা সড়ক গুলো নিয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে চান না পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান। তবে দ্রুতই পৌরসভার প্রধান ১১টি সড়কসহ ভাংঙাচুরা সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করা হবে।

(এসএসএ/এএস/জুলাই ১৩, ২০২৪)