রিয়াজুল রিয়াজ, ফরিদপুর : যৌতুকের দাবিতে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্রী তানজিলা আক্তার তহেরাকে (২১) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী জিসান আহমেদের (২২) বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) সকালে জিসান আহমেদকে আটক করেছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানা পুলিশ। এ ঘটনায় তানজিলার বাবা সাবেক সেনা কর্মকর্তা তোবারেজ মোল্লা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তাহেরার বাবার অভিযোগপত্র ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার রাত ১০টার দিকে জিসান শহরতলীর গঙ্গাবর্দী এলাকার মারকাজ মসজিদের পাশের ভাড়া বাড়িতে তানজিলাকে পিটিয়ে আহত করে আত্মহত্যার চেষ্টা দেখিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক লিটন গাঙ্গুলি তানজিলার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। ভর্তির পর মেডিক্যাল সার্জারি ওয়ার্ডের ৫ তলার শয্যায় নেওয়ার সময় তাহেরার মৃত্যু হয়।

নিহত তানজিলা আক্তার তাহেরা ফরিদপুর সদরের ডোমরাকান্দি উত্তর পাড়া গ্রামের তোবারেজ মোল্লার মেয়ে। প্রায় ৫ মাস আগে প্রেমের সর্ম্পক করে সদরের পূর্ব গঙ্গাবর্দী এলাকার জাহিদ ফকিরের ছেলে জিসান আহমেদের ছেলের সাথে বিয়ে হয়।

তোবারেজ মোল্লা বলেন, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য আমার মেয়ের উপর জিসান ও তার মা জবেদা বেগম নির্যাতন করে আসছিলো। জিসানকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো। আবার জিসানকে বিদেশে পাঠাবে বলে টাকা চেয়ে মেয়েকে পাঠাতো। আমার মেয়েও এ বিষয়টাতে সায় দিতো না বলে গত দুই মাস আগেও তাকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করেছিলো। তার সকল ডকুমেন্ট আমি থানায় জমা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বুধবার রাত ৮টার দিকে আমার মেয়ের সাথে কথা হয় আমার। রাত ১২টার দিকে আমার মেয়ের নম্বর দিয়ে জিসানের এক বন্ধু ফোন করে জানায়, আপনার মেয়ে তানজিলা আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো, আমরা তাকে মেডিকেলে ভর্তি করেছি। আমি রাতে হাসপাতালে গিয়ে আমার মেয়েকে জীবিত পাইনি, মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেছি।

তানজিলার বাবা আরও বলেন, আমার মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জিসান নেশাগ্রস্ত ছিলো। যৌতুক না পেয়ে আমার মেয়েকে পিটিয়ে হত্যা করেছে সে। ভাড়া বাড়িতে থাকার আগে যখন শ্বশুর বাড়ি ছিলো তখন বাড়ির লোকজনও তাকে পিটিয়ে আহত করেছে।

জিসানের মা জবেদা বেগম বলেন, জিসান ও তানজিলা দু’জন ভালবেসে বিয়ে করেছিলো। তাকে কেন নির্যাতন করতে যাবে। আর আমিও কখনও যৌতুকের জন্য তানজিলাকে নির্যাতন করিনি। জিসান আমাকে গতকালের ঘটনা যা বলেছে তা হলো, জিসান বাড়ির বাইরে একজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার জন্য রাত অবদি অপেক্ষা করছিলো। রাত ১০টার পরে তানজিলার বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয় টাকা না নিয়েই। বাড়িতে গিয়ে সে দরজা বন্ধ দেখতে পায়। পরে দরজা ভেঙে জিসান দেখতে পায় তানজিলা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। তারপর স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন বলেন, জিসান ও তানজিলার মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিলো। যৌতুকের জন্য তানজিলার উপর নির্যাতন করা হতো। জিসানের পরিবারের পক্ষ থেকে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও তানজিলার শরীরে অস্বাভাবিক কিছু জখমের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনায় মেয়ের বাবা একটি অভিযোগ প্রদান করেছে। আমরা জিসানকে আটক করেছি। অনেকগুলো দিক বিবেচনা করেই আমরা এগুচ্ছি। তবে এখনই এটিকে হত্যা বলতে পারছি না। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা, এই বিষয়টি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে জানা যাবে'।

এছাড়া, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত কলেজছাত্রী তানজিলা আক্তার তহেরার লাশ তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন।

(আরআর/এএস/জুলাই ১৩, ২০২৪)