তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন। এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে প্যাড ছাপিয়ে প্রেসক্রিপশন করেন। তাতে অ-নিবন্ধিত ওষুধ লিখতেন। চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করছিলেন। এমন অভিযোগ রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড় ইউনিয়নের জলিরপাড় বাজারের "প্রত্যাশা ফার্মেসীর" মালিক প্রসূণ বালার বিরুদ্ধে। তিনি গত ১৫ জুন ভাটরা গ্রামের সুকন্ঠ মন্ডল কোমড় ব্যাথা নিয়ে তার কাছে আসেন। তিনি তাকে একটি প্রেসক্রিপসন করে ফার্মেসী থেকে ৯ ধরণের ওষুধ দেন। সেখানে আথ্রাইটিস ও ক্যান্সার চিকিৎসরা ওষুধ মিথোটেক্স ১০ লেখা হয়। রোগীকে এ ওষুধ দেওয়ার আগে বিভিন্ন ধরণের প্রিপিয়ারেশন প্রয়োজন হয়। এ ওষুধ সাধারণত সপ্তাহে একটি খেতে বলা হয়। কিন্তু সুকন্ঠ মন্ডলকে প্রতিদিন ২টি করে মিথোটেক্স খেতে দেওয়া হয়। ওই ওষুধ খেয়ে ৩দিন পর সুকন্ঠ মন্ডলের শরীর ও মুখে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। সংকটজনক অবস্থায় তাকে ১৯ জুন প্রথম ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ২৫ জুন তাকে ঢাকা বার্ডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন।

এ ঘটনায় সুকন্ঠ মন্ডলের মেয়ে চৈতালী সরকার গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জনের কাছে গত ২৭ জুন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

চৈতালী সরকার বলেন,বার্ডেমের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন মিথোটেক্স ট্যাবলেট খেয়ে বাবার ২টি কিডনী নষ্ট হয়ে গেছে। হার্ট ও পরিপাকতন্ত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রসূণ বালার ভুল চিকিৎসায় আমার বাবা এ পরিনতি বরণ করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।

অভিযুক্ত প্রসূণ বালা বলেন, এ ওষুধ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা লেখেন। আমার লেখার এখতিয়ার নেই। তারপও লিখেছি রোগীকে সুস্থ করার জন্য। রোগীকে বলেছি, কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে ফোন দিতে। কিন্তু সে ফোন দেয়নি। ফোন দিলে এ ওষুধ বন্ধ করে দিতাম। তা হলে এ ঘটনা ঘটত না।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় আমরা একটি তদন্ত টিম গঠন করেছি। এছাড়া বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) "প্রত্যাশা ফার্মেসীতে" ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়েছে। ফার্মেসীর মালিক প্রসুন বালাকে ৩ মাসের কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ফার্মেসীটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। প্রসূণের ভুল চিকিৎসায় সুকন্ঠ মন্ডল মৃত্যুর সাথে লড়ছেন বলেও তিনি জানান।

মুকসুদপুর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রায়হান ইসলাম শোভন বলেন, জলিরপাড় বাজারের প্রত্যাশা ফার্মেসীতে বিপুল পরিমাণ অ-নিবন্ধিত ওষুধ ও মেয়াদোত্তীর্ন ওষুধ পাওয়া যায়। ফার্মেসির মালিক প্রসুন বালা এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে প্রেসক্রিপশন প্যাড ছাপিয়ে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে রোগী চিকিৎসা করে আসছিলেন। চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হয়ে আসছিল। এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে তাকে ৩ মাসের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ফার্মেসীটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

(টিবি/এসপি/জুলাই ১২, ২০২৪)