রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : চিংড়ি ঘের নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া গ্রামে কৃষকলীগ নেতা আবুল কাশেমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ছয় আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে প্রত্যেককে পাঁচদিন করে রিমান্ড আবেদন জানানো হয়েছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক সরল বিশ্বাস বৃহস্পতিবার এ আবেদন জানান।

রিমান্ড আবেদন জাানানো আসামিরা হলেন, শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের খোলপেটুয়া গ্রামের আফছার হাজীর ছেলে এজাহারভুক্ত প্রধান আসামী আবু মুসা গাজী, মুসা গাজীর দুই ভাই সন্দিগ্ধ আসামী জামালউদ্দিন হাজী ও আব্দুস সালাম গাজী, একই গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে সন্ধিগ্ধ আসামী ইমান আলী গাজী ও জয়নাল গাজী এবং মোজাম গাজীর ছেলে সন্ধিগ্ধ আসামী নজরুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সাতক্ষীরা বিচারিক আদালত চত্বরে আবুল কাশেম হত্যা মামলার সন্ধিগ্ধ আসামী আব্দুস সালাম গাজী সাংবাদিকদের জানান, আবুল কাশেম কাগুচী ও তার পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে পূর্ব থেকে বিরোধ থাকায় কাশেম খুন হওয়ার ঘটনায় প্রতিপক্ষ হিসেবে তাদেরকে আসামী করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় ৫ জুলাই শুক্রবার সকাল থেকে তারা এলাকার বাহিরে চলে যান। একপর্যায়ে মুসা গাজীসহ ছয় জন ৬ জুলাই থেকে চাচাত ভাই গাবুরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান গাজীর জামাতা নড়াইল জেলার তুলারামপুর গ্রামের এরশাদুল্লাহ এর বাড়িতে আত্মগোপন করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে রাতে তারা পার্শ্ববর্তী বাগানে থাকতেন। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটার দিকে শ্যামনগর থানার পুলিশ তাদেরকে এরশাদুল্লাহর বাড়ির পাশের বাগান থেকে গ্রেপ্তার করে বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে পাঠান।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক সরল বিশ্বাস জানান, তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে বুধবার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামী মুসা গাজী ও সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় নড়াইল জেলার তুলারামপুর গ্রামে থেকে। বৃহস্পতিবার তাদের প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঁচদিন করে রিমা- আবেদন জানানো হয়। কিন্তু জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. নওশের আলীর মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে ফুল ডেথ রেফারেন্স থাকায় রিমা- আবেদন নিয়ে শুনানী করা যায়নি। তবে আগামি রবিবার এ শুনানী হতে পারে। তবে অপর আসামীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে চিরুনাী তল্লাশী চলছে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করলেও তুলারামপুরের কার বাড়ি থেকে ও সঠিক কোন সময় মুসাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তা তিনি মামলার তদন্তের স্বার্থে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তবে নিহত আবুল কাশেম এর ভাই মোসলেম কাগুচী জানান, আবুল কাশেম হত্যা মামলার প্রধান আসামী আবু মুসাসহ তার সহযোগীরা ২০১৫ সালের ১০ জুলাই ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ খানের চাচাত ভাই শফিকুল হত্যা মামলার(জিআর-৩১১/১৫ শ্যাম) আসামী। ২০১৫ সালের ৪ অক্টোবর গেরে ঢুকে মাছ চুরি ও ঘেরের কর্মচারিদের মারপিটের ঘটনায় ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহ খান বাদি হয়ে মুসা গাজিসহ ২৪ জনের নামে ৭ অক্টোবর থানায় মামলা (৮ নং) করেন। এ ছাড়া আবুল কাশেম তাদের ভগ্নিপতি আব্দুস সালাম মোড়লকে নিয়ে ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর বিকেলে গাবুরা গাইন বাড়ি থেকে চৌদ্দ রশি যাওয়ার পথে ফাঁকা রাস্তায় মুসা গাজীসহ তার সহযোগীদের সশস্ত্র হামলায় জখম আবুল কাশেম। এ ঘটনায় আবুল কাশেম কাগুচী বাদি হয়ে পরদিন থানায় মামলা করেন।

পরবর্তী বছরে রাতে বাড়িতে হামলা করায় মুসা গাজীসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে জাভেদ কাগুচি বাদি হয়ে থানায় মামলা করেন। ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল ঘেরে ঢুকে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও ঘেরের কর্মচারিদের মারপিটের অভিযোগে খোলপেটুয়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে আব্দুল মান্নান খাঁ বাদি হয়ে শ্যামনগর থানায় লোকমান গাজীসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ওই বছরের পহেলা মে শ্যামনগর থানায় ২ নং মামলা করেন। ঘের জবরদখলের চেষ্টার ঘটনায় বর্তমান ই্উপি সদস্য হাবিবুল্লাহ খাঁ বাদি হয়ে ২০১৫ সালের ১৭ জুলাই লোকমান, মুসাসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পিটিশন ৫৭৯/১৫ নং মামলা করেন। ২০১৭ সালের ১৮ জুন রাতে বাড়িতে ঢুকে আবুল কাশেমকে বেঁধে রেখে মারপিট ও ২ লাখ টাকা চাঁদাদাবির অভিযোগে ২১ জুন মুসা গাজীসহ ২১ জনের নামে পরাদিন থানায় ৪০ নং মামলা করেন আবুল কাশেম কাগুচী। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি বিকেলে বাড়ির সামনে জীবননাশের হুমকির ঘটনায় আবুল কাশেম গাজী পরদিন আলম গাজীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় পরদিন ১০৫৬ নং সাধারণ ডায়েরী করেন।

২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় খোলপেটুয়া বেড়িবাঁধের উপর হুমকির ঘটনায় পরদিন মুসা গাজীসহ চারজনের বিরুদ্ধে ১১৪২ নং সাধারণ ডায়েরী করেন আবুল কাশেম কাগুচি।২০২১ সালের ৮ নভেম্বর বিকেলে চৌদ্দরশি চার রাস্তার মোড়ে চারদিনের মধ্যে দেখা না করলে নিজের লোকজন দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকির ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা জিএম শফিউল আযম লেনিনের বিুরদ্ধে পরদিন থানায় ৪৫২ নং সাধারণ ডায়েরী করেন আবুল কাশেম। এ ছাড়াও মুসা গাজী, লোকমান গাজী, সেকেন্দার গাজীসহ আবুল কাশেম হত্যা মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৮টি মামলা রয়েছে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, খোলপেটুয়া গ্রামের চিংড়ি ঘেরের ২৫ বিঘা জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ৪ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে চিংড়ি ঘেরের ডিঙি নৌকায় স্ত্রী ফিরোজাকে বেঁধে রেখে গাবুরা ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম কাগুচীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন বাদি হয়ে আবু মুসা গাজী, লোকমান গাজী, আব্দুর রহিম, শুকুর আলী সরদার, মিজান গাজী, সালাহউদ্দিন গাজী, সেকেন্দার গাজী ও আবু শ্যামা গাজীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৮ জনের বিরুদ্ধে ৫ জুলাই শ্যামনগর থানায় হত্যা মামলা(৫নং) দায়ের করেন।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১২, ২০২৪)