স্টাফ রিপোর্টার : টানা বর্ষণে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় একদিনে দুই শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও তিনজন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাতে শহরের সৈকত পাড়ায় পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে এক শিশু মারা যাওয়ার পাশাপাশি তিনজন আহত হয়েছেন।

এর আগে পাহাড় ধসে বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিকদার বাজার এলাকায় ১ শিশু ও এবিসি ঘোনা এলাকায় এক নারী এবং বিকেলে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরীপাড়া পাতাবুনিয়া এলাকায় আরেক নারী নিহতের ঘটনা ঘটে।

নিহতদের মধ্যে রয়েছে- শহরের এবিসি ঘোনা এলাকার মোহাম্মদ করিমের স্ত্রী জমিলা আক্তার (৩০), সিকদার বাজার এলাকার সাইফুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হাসান (৫), সৈকত পাড়ার মো. সেলিমের স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মীম (১৩) ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরী পাড়া পাতাবুনিয়া এলাকার বজল আহমদের স্ত্রী লায়লা বেগম (৩৫)।

কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. রকিবুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্টরাসহ স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে ভারী বর্ষণের সময় কক্সবাজার শহরের সৈকতপাড়ায় পাহাড় ধসে স্থানীয় বাসিন্দা সেলিমের ঘরের উপর মাটি চাপা পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আশেপাশের তিনজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে পুরো মাটি সরিয়ে মীম নামের এক শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন তারা।

ওসি রকিবুজ্জামান আরও বলেন, বুধবার মধ্যরাত থেকে কক্সবাজার শহরে টানা মাঝারি ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে সিকদার বাজার এলাকায় বসবাসকারী সাইফুল ইসলামের বাড়ির উপর আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়ে। এতে মাটির দেওয়াল ভেঙে সাইফুলের ঘুমন্ত শিশু চাপা পড়ে। পরে স্থানীয়রা খবর পেয়ে মাটি সরিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এছাড়াও ভোরে শহরের এবিসি ঘোনা এলাকায় পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় জমিলা আক্তার নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান ওসি।

জমিলার পরিবারের বরাতে ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, ভোরে জমিলা আক্তার নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। তার স্বামী আরেক কক্ষে ঘুমচ্ছিলেন। আকস্মিক পাহাড় ধসে পড়লে জমিলা মাটি চাপা পড়ে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্য চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ মুহুরী পাড়া পাতাবুনিয়া এলাকায় পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় লায়লা বেগম নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান রকিবুজ্জামান।

নিহত লায়লা বেগমের স্বজনদের বরাতে তিনি বলেন, দুপু্রে খাবার খাওয়ার সময় লায়লা বেগম ছেলে জোনায়েদকে কোলে নিয়ে পাহাড়ের মাটি ভাঙছে কিনা দেখতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলেন। এ সময় আকস্মিক পাহাড় ধসে বসতবাড়ির উপর মাটি চাপা পড়ে। এতে তার স্বামী ও অপর ২ মেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে পারলেও লায়লা বেগম ও এক শিশু সন্তান মাটির নিচে চাপা পড়ে। পরে খবর পেয়ে স্থানীয়রা শিশুটিকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে পারলেও তার মা ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

এছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে সকাল থেকে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। কক্সবাজার শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে আসতে প্রচারণা চালাচ্ছে।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

এর আগে গত ৩ জুলাই উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের দুইটি ক্যাম্পে পাহাড় ধসে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯ জুন উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির ও আশপাশের কয়েকটি জায়গায় পাহাড় ধসে ৮ জন রোহিঙ্গা ও দুই বাংলাদেশি নিহত হন। ওই ঘটনার দুইদিন পর ২১ জুন ভোরে কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে ঘুমন্ত স্বামী-স্ত্রী নিহত হন।

(ওএস/এএস/জুলাই ১২, ২০২৪)