আহমেদ ইসমাম, ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ের রানীসংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া গ্রামের আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে একাধিক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। 

ভরনিয়া দারুল হাদীস ওয়াদ দাওয়াহ্ আস্-সালাফিয়্যা’ মাদ্রাসাটির নারী শিক্ষার্থীদের বৃহস্পতিবার গভীর রাতে চেতনানাশক ব্যবহার করে দুইজন শিক্ষার্থীকে ধর্যণের চেষ্টা করে। তিনি গত দুই বছর যাবত মহিলা মাদ্রাসাটির সভাপতি ও সাম্প্রতি ভরনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার অনেকেই বাড়ি চলে যায়। বেশির ভাগ সময় এই দিনে চার থেকে পাঁচজন মাদ্রাসায় থাকে। এই সুযোগে প্রায় সময় এই শিক্ষার্থীদের জন্য ফল জুস সহ অন্যান্য খাবার আনতেন। কৌশলে সকল শিক্ষার্থীদের এ সব খাবার খাওয়াতেন। খাবারে চেতনা নাশক থাকায় শিক্ষার্থীরা গভির ঘুমে চলে যেতেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, সে দিন রাতে আমার গলায় ব্যথা থাকায় ঠান্ডা জুস পান করি নাই। আমি স্বাভাবিক ভাবে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গভির রাতে বাথরুমে যাওয়ার জন্য লাইট জ্বালাতেই দেখি আব্দুল করিম বিবস্ত্র অবস্থায় আছে। এর পরে আমাকে বিভিন্ন ভাবে ভয় ভিতি দেখিয়ে এ কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেন।

একটি সুত্র জানিয়েছে, আব্দুল করিমের ভয়ে কোনো শিক্ষার্থী মুখ খুলে নাই। তবে তারা এই মাদ্রাসায় আর পড়বে না বলে জানিয়ে দেয়। কেন পড়বে না এ নিয়ে চাপাচাপি করায় তারা সত্য কথা বলে দেয়। এর পর থেকেই অভিভাবকরা আব্দুল করিমের বিচারের দাবী করে আসছে।

মাদ্রাসাটির পাশেই বসে থাকা এক যুবক বলেন, করিম সবসময় নামাজ পড়তেন। এই মাদ্রসার হুজুরদের সাথে চলাফেরা করতেন। এ অবস্থায় তাকে আমরা ভালো মানুষ হিসেবেই জানতাম।

মাদ্রাসাটির এক শিক্ষার্থীর বাবা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৬ মাস আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য তাদের সাথে একজন মহিলা ঘুমাতেন। কিন্তু সভাপতি কৌশলে সেই মহিলাকে সরিয়ে দিয়েছেন। এই সুযোগে এ সব কাজ করেছেন।

এলাকার সচেতন মহল বলছে, এমন একটি খারাপ মানুষ কিভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়েছে। ভরনিয়া দাখিল মাদ্রাসা সুপার রাজিবুল হোক জানিয়েছেন, অত্র প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক মহল তাকে সভাপতি বানিয়েছে। এখানে আমার কোনো হাত নেই।

ধর্মগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানিয়েছেন, এখন বোঝা যাচ্ছে এই কাজ সে আগেও বেশ কয়েকবার করেছে। এই ঘটনায় তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওয়াতায় নিয়ে আসা উচিত।

আব্দুল করিমের বাসায় গেলে তার মা বলেন, সে কোথায় আছে আমি বলতে পারব না। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে একাধিক সুত্র বলছে, আব্দুল করিম বর্তমানে রংপুর শহরে আছে অবস্থান করছে। সে সুযোগ বুঝে ভারতে পালানোর চেষ্টা করছে। সেখানে তার নিকট স্বজনরা বসবাস করে আসছেন।

রানীসংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়ন্ত কুমার সাহা বলেন, এ ঘটনায় এক ভুক্তভোগীর মা মামলা করেছেন। আমরা আব্দুল করিম ধরার জন্য অভিযান চালাচ্ছি।

(এআই/এসপি/জুলাই ১১, ২০২৪)