মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরে দুই শিশুকে হত্যা করে পাশেই বসেছিলেন মা তাহমিনা আক্তার (২৫)। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করেছে। নিহত দুই শিশুর লাশ ময়না তদন্তের জন্য মাদারীপুর মর্গে পাঠিয়েছে।

বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। মা দুই শিশুকে হত্যার ঘটনায় শহরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ঘটনা জানাজানির পর নিহতের বাড়িতে আশে-পাশের লোকজন ভীর করছেন।

পুলিশ, স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় দুই মাস আগে ভাড়া আসেন তারা মিয়া ও নার্গিস বেগমের পরিবার। তাদের সাথে তার মেয়ে তাহমিনা বেগম তার দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। তাহমিনার শশুর বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। তার স্বামী মো. হালিম খান সৌদি আরব থাকেন।

শশুরবাড়ির সাথে ঝগড়া লেগে থাকায় তাহমিনা তার মায়ের সাথেই থাকেন। গত এক বছর ধরে তাহমিনার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

বুধবার বিকেলে ঘরে কেউ না থাকার সুযোগে তাহমিনা তার দুই সন্তান জান্নাত (৩) ও মেহেরাজকে (১) শ্বাসরোধে হত্যা করে। এসময় ঘরের মধ্যে একটি রুমের দরজা আটকে মৃত সন্তানের পাশেই বসে থাকেন মা। তাহমিনা বেগমের মা নার্গিস বেগম ঘরে এসে মেয়ের রুমের দরজা বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু সে দরজা খোলে না। তখন এক প্রতিবেশ ত্রিপল নাইনে সংবাদ জানান। সংবাদ পেয়ে পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে ফেরতে ঢোকেন। এসময় মৃত দুই সন্তানের পাশে মাকে বসে থাকতে দেখেন। পুলিশ মা তাহমিনা বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পুলিশ নিহত দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুরের ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান।

অভিযুক্ত মা তাহমিনার বাবা তারা মিয়া বলেন, আমার মেয়ে অসুস্থ, তার মানসিক সমস্যা আছে। তার চিকিৎসা চলছে। তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিলো। তার শশুরবাড়ির মানুষজন তাকে অত্যাচার করে পাগল বানিয়েছে। তাই আমার মেয়ের মানসিক সমস্যা না থাকলে এই ধরণের ঘটনা সে ঘটাতে পারতো না।

অভিযুক্ত তাহমিনার মা নার্গিস বেগম বলেন, আমি ছাদে কাপড় শুকাতে গিয়েছিলাম। এসে দেখি ও দুই সন্তানসহ তার ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। কিছুতেই দরজা খোলে না। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙ্গে তাহমিনাকে বসে থাকতে দেখেন। এসময় তার দুই সন্তানকে বিছিনায় সুয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে আমরা বুঝতে পারি ওর দুই সন্তান মারা গেছে। ওর মানসিক সমস্যা আছে, তাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত মো.সজিব বলেন, আমার বাড়ি এখানেই। শুনেছি মা তার দুই সন্তানকে মেরে ফেলেছে। তাই দেখেতে এসেছি। মায়ের নাকি মানসিক সমস্যা আছে।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম সালাউদ্দিন বলেন, ত্রিপল নাইনে ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। এসে দেখি ঘরের মধ্যে একটি রুমের দরজা বন্ধ। পরে আমরা দরজা ভেঙ্গে দেখতে পাই, মা তাহমিনা আক্তার খাটের এক পাশে বসে আছেন। আর দুই সন্তান মৃত অবস্থায় বিছানায় পরে আছে। আমরা অভিযুক্ত মাকে আটক করে থানা হেফাজতে এনেছি। দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মারা যাবার কারণ জানা যাবে। তাছাড়া মায়ের মানসিক সমস্যা আছে কিনা, তা তদন্ত করা হবে।

(এএসএ/এএস/জুলাই ১০, ২০২৪)