বিশেষ প্রতিনিধি : রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা অফিসের আয়োজনে শিক্ষা মেলা নামে বরাদ্দ হলেও মেলা না করেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহিন্দ্র কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে। কবে কোথায় শিক্ষা মেলা হয়েছে জানে না শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে বিল উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

জানা গেছে, জেলা পর্যায়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রাথমিক শিক্ষা মেলার বরাদ্দ আসে। মে মাসে মেলা হওয়ার কথা থাকলেও বিষয়টি গোপন রেখে জুন ফাইনালের আগেই টাকা উত্তোলন করে পকেটস্থ করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহিন্দ্র কুমার মন্ডল। গত বছরও নামে মাত্র ২দিনের শিক্ষা মেলা একদিনে পুরস্কার ছাড়াই শেষ করে অর্থ আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এবারও মেলা ছাড়াই বিল উত্তোলন করে অর্থ আত্নসাৎ করার ঘটনায় জেলার শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, জেলা শিক্ষা মেলা এ বছর হয়নি। মে মাসে হওয়ার কথা থাকলেও তো শুনিনি। সম্প্রতি শিক্ষকদের নিয়ে টাউন মক্তব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইনোভিশন মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই মেলায় আলাদা বরাদ্দ থাকলেও টাউন মক্তব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নাস্তার আয়োজন করেন। এতে পুরস্কার হিসেবে বিনামূল্যের শিক্ষক সহায়তা বই উপহার প্রদান করা হয়। এ মেলার পুরো টাকাই তিনি পকেটস্থ করেন। শিক্ষা অফিসকে দুর্ণীতির আখড়া হিসেবে পরিনত করেছেন। সব কাজেই ফুয়েল ছাড়া ফাইল নড়ে না।

নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন শিক্ষক বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসারকে অফিসে পাওয়া যায় না। তিনি সরকারী গাড়ী নিয়েই বাসায় যান। বুধবার গেলে আসেন রবিবার দুপুরে। এভাবেই অফিস করেন। প্রয়োজন হলে সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসাররা সহযোগিতা করেন। আর শিক্ষা মেলা গতবছর একদিন হলেও কোন পুরস্কার দেয়নি। এবছর কোন শিক্ষা মেলার নাম শুনিনি।

উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা বলেন, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। তবে শিক্ষা মেলা হয়েছে কিনা জানা নেই। উপজেলা পর্যায়ে শুধু মেলা হয়েছে।

সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জামাল উদ্দিন খান ও একেএম তৈফিকুর রহমানের নিকট শিক্ষা মেলা সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, এটা স্যারের ব্যাপার। তার কাছ থেকেই জানেন। আমরা এ বিষয়ে কিছু জানি না।

আজ বুধবার সকালে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কর্মরতদের কাছে জানতে চাইলে বলেন, জেলা শিক্ষা অফিসার ঢাকা থেকে আসছেন, সরকারী গাড়ীটি ফরিদপুরে আনতে গেছে। তবে শিক্ষা মেলা হয়েছে কিনা বিষয়টি সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জামাল উদ্দিন খান ও একেএম তৈফিকুর রহমান, অফিস সহকারী কেউ কিছু জানেন না বা বলতে পারেন না বলে প্রকাশ করেন।

বিকেল সাড়ে ৪টায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, জেলা শিক্ষা অফিসার অহিন্দ্র কুমার মন্ডল কয়েকজন শিক্ষক ও সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করছেন। শিক্ষা মেলার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, কত টাকা বরাদ্দ, মেলা হয়েছে কিনা বলতে পারবো না। আমি নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তবে টাকা উত্তোলন কিভাবে করলেন জানতে চাইলে বলেন, এটা অফিসের ব্যাপার, ফাইল দেখে বলতে হবে। ফাইল দেখে বলার অনুরোধ করলে বলেন, অনেক সময়ের ব্যাপার। এটা আপনার দরকার নেই। তবে সরকারী গাড়ী ব্যবহার করে বাড়ীতে যাওয়া ও ফুয়েল ছাড়া ফাইল নড়ে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রাজবাড়ী জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বলেন, বেশ কিছু বরাদ্দের টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলেন।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে দেখবো।

(একে/এসপি/জুলাই ১০, ২০২৪)