রিয়াজুল করিম, রাজবাড়ী : বিদেশে পাঠানোর কথা বলে একাধিক লোকের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীদের নামেই  ডজন খানেক মিথ্যা মামলা করায়- মনিরুজ্জামান ওরফে হুমায়ন কবির রুবেল নামের এক প্রতারকের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় গণ-পিটিশন দিয়েছেন ভুক্তভোগীরাসহ বাণীবহ গ্রামের শতাধিক স্থানীয় বাসিন্দা।

শুধু তাই নয়, প্রতারক রুবেল বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থেকে বাণীবহ ইউনিয়নে আইন শৃঙ্খলার অবনতি করেছে মর্মে রাজবাড়ী পুলিশ সুপারের নিকট প্রত্যায়ন প্রদান ও ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করেছেন বানীবহ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যন মোছাঃ শেফালী আক্তার।

গণ-পিটিশনে উল্লেখ; নিবেদন এই যে, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী রাজবাড়ী জেলাধীন সদর উপজেলার বানীবহ ইউনিয়নের বানীবহ গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা বিলকিছ বেগম, স্বামী- আমজাদ হোসেন। মোঃ মনিরুজ্জামান রুবেল, পিতা- মোঃ বায়েজ উদ্দিন, সাং- রুপনগর (টিনসেড), রোড নং- ১৫, থানা- মিরপুর, জেলাঃ ঢাকা। বর্তমানে
কথিত ঠিকানা- সাং- বানীবহ, ডাকঘরঃ বানীবহ, রাজবাড়ী সদর, রাজবাড়ী।

সে একজন চিহ্নিত প্রতারক বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে বিভিন্ন দেশে চাকুরী দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা সাধারণ মানুষের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে কোন কোন মামলা সে পুলিশের নিকট আটক হয়েছে কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকরে তার জামিন হয়ে যাচ্ছে। জামিন হয়ে সে বারংবার একই কাজ করে চলছে। সে আমার এলাকার ১। আমজাদ হোসেন, ২। আবুল হোসেন, ৩। রঘুনাথ বিশ্বাস, ৪: শাখাওয়াত খান, ৫। মোঃ আলী হোসেন এদের নিকট থেকে আমেরিকায় পাঠানোর কথা বলে নগদ ৮,০০,০০০/- (আট লক্ষ) টাকা গ্রহন করেছে। টাকা নেওয়ার পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সে আমেরিকায় পাঠাতে পারে নাই। যার কারনে আমরা তার নিকট টাকা ফেরত চাইলে সে উত্তেজিত হয়ে আমাদেরকে উল্টা-পাল্টা কথা বলে।

এক পর্যায়ে মোঃ আলী হোসেন তার বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলায় সে পুলিশের নিকট আটক হওয়ার পর বিজ্ঞআদালতের মাধ্যমে তার জামিন হয়। জামিন হয়ে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে আমজাদ হোসেন, বিলকিছ বেগম, আবুল হোসেন, মাজেদা খাতুন, আলী হোসেন খান, শামীম মিয়া, আলিফ হোসেন শাওন এদের বিরুদ্ধে মোট ০৯ (নয়) টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। আমাদের টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করে চলেছে। উক্ত ব্যক্তির জন্য অত্র বার্নীবহ এলাকার শান্তি বিঘ্ন হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, উক্ত লোকের বিরুদ্ধে বানীবহ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়। উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউপি চেয়ারম্যান নোটিশের মাধ্যমে তাকে বানীবহ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু সে হাজির হয় নাই। বর্তমানে উক্ত লোকের ভয়ে এলাকার সাধারন মানুষ অশান্তিতে আছে। অতএব, প্রার্থনা উক্ত পিটিশানটি আমলে নিয়ে জরুরী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করিতে জনাবের মর্জি হয়।

গণস্বাক্ষরের প্রেক্ষিতে ওই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে এ বিষয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান মোছাঃ শেফালী আক্তার। ৪ জুন বানীবহ ইউনিয়ন পরিষদের লিখিত প্যাডে ওই প্রত্যায়ন পত্রে উল্লেখ করা হয় মোঃ মনিরুজ্জামান রুবেল এন আই ডি নং- ১৯৮৬২৬৬৯৬৪০৬০০০৪১২, পিতা মোঃ বায়েজ উদ্দিন মাতা-রোকেয়া , সে বর্তমানে বানীবহ ইউনিয়নের ঠিকানা ব্যাবহার করে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে লিপ্ত আছে। আমি তাকে ব্যাক্তিগতভাবে চিনিওনা জানিওনা । আমার জানামতে উপরোক্ত ব্যাক্তি'র বানিবহে কোন স্থায়ী ঠিকানা নাই। সে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে লিপ্ত হয়ে অত্র ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলার অবনতি করছে। '

থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই প্রতারকের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর রাজবাড়ী সদর থানায় পেনাল কোড ৪০৬/৪২০/৫০৬ ধারায় একটি প্রতারনা মামলা হয়। রাজবাড়ী সদর থানার মামলা নং- ৩১ ।

অভিযোগ দায়ের করেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার বানীবহ ইউনিয়নের মহিষবাথান এলাকার মৃত আবুল হোসেন খানের ছেলে মোঃ আলী হোসেন খান। পরে বানীবহের বার্থা এলাকার পাতাতু বোন মর্জিনার বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করেন রাজবাড়ী সদর থানার এস.আই আবুল হোসেন। সেই মামলায় জামিনে বের হয়ে স্থানীয় আমজাদ ও বিলকিস নামে দু'জনের বিরুদ্ধে একে একে ০৯টি মামলা দিয়েছে সেই মনিরুজ্জামান রুবেল।

এ বিষয়ে, বানীবহ ইউপি চেয়ারম্যান মোছাঃ শেফালী আক্তার বলেন, বানীবহ ইউনিয়নের মৃত মজিদ শেখের মেয়ে মোছাঃ রেখাকে বিয়ে করে মনিরুজ্জামান রুবেল। এরপর আত্নীয় স্বজন অ্যামেরিকায় থাকেন এমন কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মোঃ মনিরুজ্জামান রুবেল নামের এই লোকটি। কাউকে তো বিদেশে পাঠায়-ই নাই, আবার টাকা ফেরত চাওয়ায় উল্টো ভুক্তভোগীদের নামে একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে এই প্রতারক। তিনি আরও বলেন, সে আমার এলাকার ভাবমূর্তী ক্ষুণ্ণ করছে বিধায় আমি পুলিশ সুপারের কাছে প্রত্যায়ন দিয়েছি। আমার ইউনিয়নের বাসিন্দাদের ভালো রাখা, নিরাপদ রাখা আমার দায়ীত্ব। আমি চাই এ প্রতারকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার হোক।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, এই মনিরুজ্জামান রুবেল যে এন.আই.ডি কার্ড ব্যাবহার করছে তাহা ভুয়া। সাংবাদিকরা নাকি সেটা প্রমাণ পেয়েছে, তার নাকি কোন সঠিক ঠিকানা পাইনি। এদিকে আবার জানতে পারলাম আমেরিকা পাঠানোর কথা বলে নিয়েছে ১৩ লক্ষ টাকার একটা প্রতারণা মামলায় ০১/০৭/২০২৪ তারিখে রাজবাড়ী ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয় প্রতারক রুবেল। প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত ভূয়া জাতীয় পরিচয় পত্র, জন্ম সনদ, টিন সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বিভিন্ন ভূয়া ডকুমেন্ট সহ তাকে আটক করে।

আটকের পর পুলিশের কাছে তার নাম জানায় খাঁন হুমায়ুন কবির, পিতা- মৃত শামসুল হক খাঁন ও মাতা-মৃত রানু বেগম। জেলা- নড়াইল, উপজেলা- নড়াগাতি, ইউনিয়ন- জয়নগর, গ্রাম- ঘড়িভাঙ্গা। সঠিক ঠিকানা কোনটি জানিনা। এমন ঠিকানা বিহীন লোক কারো ভাড়াটিয়া হয়ে হত্যাকান্ড সহ যে কোন ধরনের অঘটন ঘটিয়ে চলে যেতে পারে বলে আমি মনে করি। এমন রোহিঙ্গা প্রকৃতির লোকজন যেন আমার ইউনিয়নে কোন অপকর্ম চালাতে না পারে সে জন্য পুলিশ সুপারের কাছে গিয়ে প্রত্যায়ন পত্রটি দিয়েছি। পুলিশ সুপার আমার বিষয়টি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন এবং দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।'

এ বিষয়ে, রাজবাড়ী ডিবিসূত্রে জানা যায়; তাহার জাতীয় পরিচয় পত্র এবং জন্ম সনদে জন্ম তারিখ আলাদা আলাদা। ধৃত আসামী খাঁন হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে যশোর জেলার কোতয়ালী থানার এফআইআর নং-৮০, তারিখ-২১ জানুয়ারি, ২০১২।

ধারা-১৪৩/৪৪৭/৩৮৫/ ৩৮৬/৫০৬ পেনাল কোড-১৮৬০; মামলা সংক্রান্তে তথ্য পাওয়া যায়। ছাড়াও, প্রতারক হুমায়ুন কবির রুবেল মিথ্যা নাম ঠিকানা দিয়ে আদালতে একাধিক ভুক্তভোগীদের নামে এগার (১১)টি মামলা করেছে।

(আরকে/এএস/জুলাই ০৯, ২০২৪)