গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা-খুলনা  সড়ক  অবরোধ করেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীরা। এসময় মহাসড়কের দুই পাশে যানবাহন আটকা পড়ে।

রবিবার (৭ জুলাই) বিকেল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৭ টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পাথালিয়া অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে তাঁরা। এর আগে তাঁরা ক্যাম্পাসে মিছিল করে। এতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
বেলা সাড়ে ৪ টার দিকে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিপু'স ক্যান্টিনের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে থামে। পরে তারা ঢাকা- খুলনা মহাসড়কে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে।

আন্দোলনকারীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই' 'কোটা বৈষম্য নিপাত যাক মেধাবীরা মুক্তি পাক', ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
এসময় গোপালগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয় ও পুলিশ দিয়ে আন্দোলন থামানে যাবেনা বলে স্লোগান দেয়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা সেখানে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আন্দোলনকারীরা সড়ক ছেড়ে দেয়। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারি এ্যানিমেল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থী মো.আলাউল হক বলেন, আমাদের এক দফা এক দাবি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কোটা বৈষম্য থাকবেনা। সাংবাদিক আনিসুল হক তার ফেসবুক একটি স্ট্যাটাস দিয়েছে 'বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সম্মান জানানোর জন্যই কোটা তুলে নিন ' আমরা স্যারের ওই লেখার সাথে সম্মতি রেখে বলছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সম্মান জানানোর জন্যই কোটা তুলে নিন তানাহলে সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সভাপতি, বিএমবি ( বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মনিকুলার বায়োলজি) বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত আহমেদ বলেন, আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাজপথে নেমেছি। কোটা বৈষম্য আন্দোলন ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি আাদয় না হবে।

২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, ১০ শতাংশ নারী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ আর প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। পরে সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে) কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তবে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে গত ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। এরপর থেকে চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে মাঠে নামেন।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে আন্দোলনকারীরা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি আরও কিছু দাবি জানাচ্ছেন।

(এমএস/এএস/জুলাই ০৮, ২০২৪)