স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস সংকটের কারণে দেশের স্পিনিং এবং টেক্সটাইল মিলগুলোতে সুতা উৎপাদন ব্যাপক হারে ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় পোশাক প্রস্তুতকারীরা চাহিদা মেটাতে বিকল্প উৎসের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এর ফলে সুতা আমদানি বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

বস্ত্র খাতে গ্যাস সরবরাহ সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান ডলার সংকট সত্ত্বেও আমদানি বাড়াতে বাধ্য হয়েছে স্থানীয় টেক্সটাইল মিল ও পোশাক উৎপাদনকারীরা। সরকারি প্রণোদনায় সাম্প্রতিক কাটছাঁট এ আমদানিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিদেশি সুতার ওপর এ নির্ভরতা তৈরি পোশাক খাতের মূল্য সংযোজনে ক্ষতি করতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মেয়াদে পোশাক শিল্প ২.৬৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সুতা আমদানি করেছে, যার পরিমাণ তার আগের ২০২২–২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২.৩৪ বিলিয়ন ডলার।

সাধারণত, গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল মিলগুলো সম্পূর্ণ সক্ষমতায় চালানোর জন্য প্রায় ৮–১০ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কোয়ার ইঞ্চ) গ্যাসের চাপ প্রয়োজন। তবে কারখানাগুলোতে দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ ১–২ পিএসআই-এ নেমে আসে। এটি উৎপাদনকে তীব্রভাবে ব্যাহত করছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।

গ্যাসের স্বল্প চাপের কারণে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কারখানা উপায়ন্তর না দেখে কেবল ৪০ শতাংশ সক্ষমতায় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন শিল্প মালিকেরা।

গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত আউটপেস স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন অনেকটা কমেছে। সংকট তীব্র হওয়ায় উৎপাদন এখন আমাদের মোট সক্ষমতার ৪০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।

তিনি বলেন, আমাদের অর্ডার আছে। কিন্তু আমরা সরবরাহের সময়সীমা পূরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। যদি কারখানাগুলো সময়মতো সুতা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে গার্মেন্টস মালিকেরা সুতা আমদানি করতে বাধ্য হতে পারেন।

‘উৎপাদন কমে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে, এতে করে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা সময়মতো পরিশোধ করা চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে বলে উল্লেখ করেন এ উদ্যোক্তা।

স্পিনিং এবং টেক্সটাইল মিলগুলোর এসব চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরাও। তারা বলছেন, গ্যাস এবং বিদ্যুত সরবরাহে বিঘ্নতা পোশাক কারখানাগুলোতেও উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কোরবানির ঈদের আগে নারায়ণগঞ্জ এলাকায় গ্যাসের চাপ শূন্যের কোঠায় থাকলেও এখন তা কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩–৪ পিএসআই-এ। তারপরও এ চাপ সবগুলো মেশিন পরিচালনার জন্য অপর্যাপ্ত। এতে তাদের লিড টাইমেও চাপ পড়ছে। ফলে বেশিরভাগ ডাইং কারখানা ৫০ শতাংশ সক্ষমতায় কাজ করছে।

গ্যাসের এমন সংকট বহাল থাকলে পুরোনো দামে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায় বিটিএমএ। এ নিয়ে গত মাসে বিটিএমএ পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারকে একটি চিঠি পাঠায়। এতে বলা হয়, গ্যাস সংকট কারখানার উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করেছে এবং সংস্থাটির কিছু মিলের সরবরাহ লাইনের চাপ শূন্যের কাছাকাছি নেমে গেছে। এর ফলে কারখানার যন্ত্রপাতির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে ও কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বেড়ে সাড়ে ৩১ টাকা করা হয়েছে। এ মূল্যবৃদ্ধি এবং নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের সরকারি আশ্বাস সত্ত্বেও প্রত্যাশিত গ্যাস সরবরাহ কখনই বাস্তবায়িত হয়নি।

বিটিএমএ চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত টেক্সটাইল শিল্পে গ্যাসের আগের দামে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানায়।

(ওএস/এসপি/জুলাই ০৬, ২০২৪)