রবিউল ইসলাম, গাইবান্ধা : উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বৃষ্টিতে গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানির প্রবল স্রোতে রাতে গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটাউপজেলার অন্তত ৩০০টি বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারণে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরে সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলা ২৯টি ইউনিয়নের ৬৭৭২৯ পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার পাট, বাদাম ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ফসল।

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনার চর বেষ্টিত ১৬৫টি চরের মানুষের বন্যায় বাড়িঘর ডোবার কারণে বন্যার্ত মানুষগুলো গরু, ছাগল, ভেড়া, হাস-মুরগি কোন রকমে উঁচু বালির ঢিবিতে বসবাস করছে। সেখানে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট।

নিরাপত্তা না থাকায় নৌকা অভাবে তারা গবাদি পশু গুলো উঁচু আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারছে না। চোর-ডাকাতের ভয়ে তারা গবাদি পশুর সাথে গাদাগাদি করে বসবাস করছে।

বন্যার কারণে ৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৪টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শহীদুল ইসলাম প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শনিবার বিকেল ৪ টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জেলার ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়াও ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার‌ ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল মিয়া ভোরের আকাশকে জানান, জেলা প্রশাসন কর্তৃক ৩০৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ১৬৫ মেট্রিক টন জি আর চাল, ১০ লক্ষ টাকা জি আর ক্যাশ ৪টি উপজেলায় উপবরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২৬৫ মেট্রিক টন জি আর চাল মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পীড বোট প্রস্তুত রয়েছে। জেলা এবং উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৮১টি।

এদিকে পানিবন্দী পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন এনজিও। ৪ উপজেলার ২০ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন ডাব্লিউ এফপি। বিভিন্ন এনজিও মশারি, জুতা, সাবান, তেল, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বালতিসহ বিভিন্ন উপকরন বিতরণ করেন।

(আরআই/এসপি/জুলাই ০৬, ২০২৪)