রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় সন্ধিগ্ধ আসামী শরিফুল ইসলাম কালুকে দুই দিনের রিমাণ্ড শেষে সাতক্ষীরা আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টোর দিকে তাকে দেবহাটা থানা থেকে আদালতে আনা হয়। রিমাণ্ড ফেরৎ শরিফুল ইসলাম (৪২) দেবহাটা উপজেলার চালতেতলা গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে। তাকে তিন রাত গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে রেখে স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

আসামী শরিফুল ইসলামকে গত ২ জুলাই আদালতে পাঠানো প্রতিবেদন, ৪ জুলাই রিমাণ্ড প্রতিবেদন ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত সোয়া ৯টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি এলাকা থেকে পুলিশ শরিফুলকে গ্রেপ্তার করে। তাকে রিমাণ্ড চাওয়া হবে মর্মে উল্লেখ করে পরদিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে আনা হয়। এরপরপরই তাকে আমলী প্রথম আদালতে তুলে সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানানো হয়। বিচারক মহিতুল ইসলাম শুনানী শেষে তার দুই দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আসামীপক্ষ থেকে কোন প্রকার আইনজীবী নিয়োগের সূযোগ পাওয়া যায়নি।রিমাণ্ড মঞ্জুর হওয়ার পরপরই তাকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা নুরুস সালাম ছিদ্দিক দেবহাটা থানায় নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে বৃহষ্পতিবার দুপুর দুটোর দিকে আদালতে আনা হয়।

আদালত চত্বরে শরিফুল ইসলাম কালু সাংবাদিকদের জানান, গত ২৮ জুন শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে দেবহাটা থানার উপপরিদর্শক গিয়াসউদ্দিনের নেতৃতে পুলিশ তাকে ধরতে পারুলিয়া ইউনিয়নের চালতেতলার বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে না পেয়ে ২৯ জুন শনিবার রাত ১১টার দিকে একটি সাদা মাইক্রেবাসে করে সাদা পোশাকে থাকা ১০/১২ জন ডিবি পুলিশ তার শ্বশুর বাড়ি শ্যামনগরের ভেটখালি এলাকার সোরা গ্রামে আসে। মাইক্রোবাসটি তারানীপুর পাঞ্জাগানার পাশে রেখে আসে তারা। শ্বশুর বাড়িতে এসে তাকে ধরে ফেলে হাতে হ্যাণ্ডকাপ লাগায়। গামছা দিয়ে পিঠ মোড়া করে দুই হাত বেঁধে ফেলা হয়। তাকে ব্যপক মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে চোখমুখে কালো কাপড় বেঁধে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে শনি, রবি ও সোমবার রাতে সুভাষ ঘোষের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা স্বীকার করতে ও কয়েকজন ডাকাতের নাম বলতে হাতে হ্যাণ্ডকাপ পরিয়ে নির্যাতন করা হয়। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। আসামীকে আদালতে পাঠানোর প্রতিবেদনে তাকে রিমাণ্ড চাওয়া হবে বলে উল্লেখ করলেও তাকে আইনজীবী নিয়োগের সূযোগ না দিয়ে তড়িঘড়ি করে রিমাণ্ড শুনানী করে মঙ্গলবার বিকেলে থানায় আনা হয়। বৃহষ্পতিবার দুপুর দুটোর দিকে তাকে আদালতে আনা হয়। তাকে গায়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন করা হলেও প্রতিবেদনে সে আটকের সময় দৌড়ে পড়ে যেয়ে আহত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক নুরুস সালাম ছিদ্দিক গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে শরিফুলকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রিমাণ্ডে জিজ্ঞাবাদকালে শরিফুলের কাছ থেকে যে সামান্য তথ্য পাওয়া গেছে তা যাঁচাই- বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তবে সুভাষ ঘোষের বাড়িতে ডাকাতি হওয়া একটি মটর সাইকেল (সাতক্ষীরা-হ-১৩-৫৬৬১) বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা ইউনিয়নের যোগরাজপুর গ্রামের নূর ইসলামের পাটখেত থেকে জনতা দেখতে পেয়ে সদর থানায় খবর দিলে তা উদ্ধার করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন দিবিাগত রাত দুটোর দিকে দেবহাটার জগন্নাথপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষের বাড়ির প্রধান ফটক ও কোলাবসিগ্যল ফটকের তালা কেটে ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পরিবারের সদস্যদের হাত, চোখ ও মুখ বেঁধে ২৭ ভরি সোনার গহনা, সোয়া ৫ লাখ টাকা, একটি হাত ঘড়ি, দুটি মোবাইল ফোন, একটি ডাবল ব্যারেলের বন্ধুক ও একটি মটর সাইকেলসহ প্রায় ৩৬ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে বাড়ির প্রাচীরের মধ্যে ধানের গোলার পাশ থেকে বন্দুকটি উদ্ধার হয়। খলিষাখালি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ভূমিহীনদের অভিযোগ, খলিষাখালি জবরদখলকারি ওইসব ভূমিদস্যুদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা সুভাষ ঘোষের বাড়িতে ডাকাতি করেছে।

খলিষাখালির লাওয়ারিশ সম্পত্তি জবরদখলে রাখতে নলতার চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আরিজুল ইসলাম, মাছ আনারুল, নওয়াপাড়ার সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল ইসলাম ও ভূমিহীন নেতা আনারুল ইসলাম ও তার বাবা এছাক আলীর মাধ্যমে খলিষাখালির ২০০ বিঘা জমি সরকারি জমিতে মাছ চাষকারি পারুলিয়া চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাবুসহ একটি চক্র পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভূমিহীনদের নতুন করে মাথা চাড়া না দিতে শরিফুল ইসলাম কালুকে পরিকল্পনামাফিক সুভাষ ঘোষের বাড়িতে ডাকাতি মামলায় গেপ্তার করিয়ে তড়িঘড়ি করে রিমাণ্ডের আবেদনের ব্যবস্থা করিয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ০৪, ২০২৪)