তুষার বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় পরাজিত প্রার্থীর এক সমর্থক গুলিতে নিহতের ঘটনায় বিজয়ী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূঁইয়া লুটুলের সমর্থক ও ওই  মামলার ১৭ আসামীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার জেলা ও দায়রা জজ (সেশন-১) আদালতের বিচারক মাকসুদুর রহমান এ আদেশ দেন।
জানা যায়, নিহত ওই ব্যক্তির নাম ওসিকুর ভূঁইয়া (২৭)। তিনি উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় চা-বিক্রেতা ছিলেন। সদ্যসমাপ্ত সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বি এম লিয়াকত আলীর সমর্থক ছিলেন তিনি। হামলাকারীরা বিজয়ী প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার সমর্থক ছিলেন।

১৪ মে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া বাজারে গোলাগুলি হলে ওসিকুর নিহত হন। ১৭ মে রাতে নিহত ওসিকুর ভূঁইয়ার বোন পারুল বেগম বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত ২২ জন আসামি জেলহাজতে রয়েছেন। ওই মামলার সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, মামলার পর বিজয়ী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূঁইয়া সমর্থক ওই মামলার ১৭ আসামি উচ্চ আদালত থেকে তিন সপ্তাহের জামিন নিয়েছিলেন। আজ বুধবার ছিল জামিনের শেষ দিন। তারা আজ নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করে তাঁকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী এম জুলকদর রহমান বলেন ওসিকুর ভূঁইয়া হত্যা মামলায় আজ ১৭ জন আসমি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত তাদের জামিনের আবেদন না মঞ্জুর করে জেলা হাজতে পাঠানোর নির্দেশন দেন।

এ মামলার প্রধান আসমি সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান ভূঁইয়া জামিন চাইলে বিচারক তাকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

এলাকার লোকজন বলেন, সদর উপজেলা নির্বাচনে আটজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁদের মধ্যে দুজন প্রার্থী ছিলেন উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের। ওই দুই প্রার্থীর মধ্যে কামরুজ্জামান ভূঁইয়া ১ হাজার ৪৯০ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গ্রামের বি এম লিয়াকত আলী। সহিংসতার সূত্রপাত মূলত সেখান থেকেই। গ্রামে লিয়াকত আলীর পক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করেন ছবেদ আলী ভূঁইয়া। আর অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেন কামরুজ্জামান ভূঁইয়া ও কালু ভূঁইয়া। কালু ভূঁইয়া কামরুজ্জামানের ছোট ভাইয়ের শ্বশুর (তালুই)। ওসিকুর লিয়াকত আলীর সমর্থক ছিলেন। আর হামলাকারীরা বিজয়ী প্রার্থী কামরুজ্জামান ভূঁইয়ার সমর্থক ছিলেন।

ওসিকুর রহমান নিহত হওয়ার পর তাঁর লাশ নিয়ে ১৫ মে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় মানুষেরা। ১৬ মে বিক্ষোভকারীরা পুনরায় ঢাকা-খুলনা মহসড়কের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। ১৯ মে বিক্ষোভকারিরা গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে। এ ছাড়া মানববন্ধন ও বিক্ষোভও করা হয় একাধিকবার।

(টিবি/এসপি/জুলাই ০৩, ২০২৪)