রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে শরিফুল ইসলাম কালু নামে এক ব্যক্তিকে  শনিবার রাত ১১টায় শ্যামনগরের সোড়া গ্রামের শ্বশুর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দুইদিন পর দেবহাটার মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষের বাড়ির ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মঙ্গলবার মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক নুরুজ্জামান ছিদ্দিক তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানালে আমলী আদালত-১ এর বিচারক মহিতুল ইসলাম তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শরিফুল ইসলাম (৪২) দেবহাটা উপজেলার চালতেতলা গ্রামের আইয়ুব আলীর ছেলে।

শ্যামনগর উপজেলার সোড়া গ্রামের তাসলিমা খাতুন জানান, গত ২৮ জুন শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে দেবহাটা থানার উপপরিদর্শক গিয়াসউদ্দিনের নেতৃতে পুলিশ তার স্বামী শরিফুলকে ধরতে দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের চালতেতলার বাড়িতে অভিযান চালায়। সেখানে না পেয়ে শনিবার রাত ১১টার দিকে একটি সাদা মাইক্রেবাসে করে সাদা পোশাকে থাকা ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারি ১০/১২ জন তার বাপের বাড়ি শ্যামনগরের ভেটখালি এলাকার সোড়া গ্রামে আসে। মাইক্রোবাসটি তারানীপুর পাঞ্জাগানার পাশে রেখে আসে তারা। বাপের বাড়িতে এসে শরিফুলকে ধরে ফেলে হাতে হ্যান্ডকাপ লাগায়। গামছা দিয়ে পিঠ মোড়া করে দুই হাত বেধে ফেলা হয়। তাকে ব্যপক মারপিট করা হয়। বাধা দেওয়া বাবা আকবর আলীকে মারপিট করা হয়। তাকেও গালিগালাজ করা হয়।

একপর্যায়ে চোখমুখে কালো কাপড় বেঁধে তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। জানতে চাইলে তারা নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ বলে পরিচয় দেয়।

শরিফুলকে সোনাদানা ও অস্ত্র উদ্ধারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে কয়েকজন তাকে জানান। সাদা পোশাকধারি কয়েকজনের কাছে পিস্তল ও হ্যান্ডকাপ ছিল। ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়, সদর থানা, শ্যামনগর ও দেবহাটা থানায় গেলে শরিফুলের আটকের বিষয়টি সকলে এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে শরিফুলকে আটক সংক্রান্ত ছবিসহ প্রতিবেদন দৈনিক বাংলা’৭১, ও দৈনিক সাতক্ষীরা এর অনলাইনে সোমবার রাতে প্রকাশ পায়।

শরিফুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী তানজিলা খাতুন জানান, আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে তারা শরিফুলের সন্ধান না পেয়ে শ্যামনগর থানায় গেলে মঙ্গলবার ডায়েরী নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দেন। একপর্যায়ে মঙ্গলবার সকালে এক সাংবাদিকের কাছে খবর পেয়ে তিনি আদালতে চলে আসেন। আদালত থেকে তড়িঘড়ি করে গাড়িতে তুলে বের হওয়ার সময় শরিফুল তাকে জানায় যে, তিনদিন তাকে ডিবি পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছিল। আমার অবস্থা খারাপ। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তোরা আমাকে বাঁচা। পরে তিনি জানতে পারেন যে পুলিশ তড়িঘড়ি করে শরিফুলকে আদালতে এনে আসামীপক্ষের কোন প্রকার আইনজীবী নিয়োগ করার সময় না দিয়েই রিমান্ড শুনানী করার পরপরই তাকে আদালত থেকে দেবহাটা থানায় নিয়ে গেছে। রাতে জিজ্ঞাবাদের নামে শরিফুলকে নির্যাতন করার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন তানজিলা।

এ ব্যাপারে দেবহাটার মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষ জানান, কালুকে শনিবার শ্যামনগর উপজেলার সোড়া গ্রামের শ্বশুর আকবর আলীর বাড়ি থেকে ডিবি পুলিশ আটক করে বলে তিনি একাধিক সূত্র থেকে জেনেছেন। অনলঅইনে দেখেছেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি মঙ্গলবার সকালে জানিয়ে থানায় যেতে বলে। ডাকাত দলের সদস্যরা সকলে মুখোশ পরা অবস্থায় ছিল, তাই তাদের চেনার কোন সূযোগই ছিল না।

দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক সুভাষ ঘোষের বাড়িতে ডাকাতি মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক নুরুজ্জামান ছিদ্দিক সাংবাদিকদের জানান, শনিবার নয়, সোমবার সন্ধ্যায় শরিফুল ইসলাম কালুকে শ্যামনগর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ ঘোষের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় সন্দিগ্ধ আসামী হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জাননো হয়। আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তাৎক্ষণিক তাকে আদালত থেকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

(আরকে/এএস/জুলাই ০২, ২০২৪)